Ajker Patrika

ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও একটি মৃত্যু

সম্পাদকীয়
ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও একটি মৃত্যু

‘টাওয়ারিং ইনফার্নো’ নামে একটি হলিউডি ছবি এসেছিল বাংলাদেশের পর্দায়। একটি বিশাল ভবনে আগুন লাগার পর কীভাবে হতভাগ্য মানুষদের উদ্ধার করা হয়েছিল, তারই দৃশ্যায়ন ছিল সেই ছবিতে। স্টিভ ম্যাকুইন, পল নিউম্যান, উইলিয়াম হোল্ডেনদের মতো নামী অভিনয়শিল্পীদের অনবদ্য অভিনয়ে সে সিনেমাটি মানুষের নজর কেড়েছিল।

এ ধরনের সিনেমা দেখলে ফায়ার সার্ভিস দলের প্রতি শ্রদ্ধা আসে। কিন্তু এ কথাগুলো সব জায়গায় খাটে না। ধরুন, বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় অঙ্কুজানপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে যখন দাউ দাউ আগুনের লেলিহান শিখা, তখন বুদ্ধি করে গ্রামের কেউ একজন তখনই খবর পৌঁছে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের অফিসে।

নিজেরাও চেষ্টা করেছে সালমা গাজীর ঘরে লাগা আগুন নেভানোর। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা ছাড়া সেই আগুন নিভবে না। সবাই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে কখন আসবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি? গাড়ি এল ৫০ মিনিট পর। ততক্ষণে ভস্মীভূত হয়েছে বাড়ি, আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৫ বছর বয়সী এক শিশু।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মাত্র ৪ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ৫০ মিনিট লাগল কেন? এর কোনো সদুত্তর বোধকরি নেই। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বলছে, আরে না! বাড়তি সময় লেগেছে মাত্র ১০ মিনিট!

এরপর যখন ঘটনাটি নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হয়, তখন আরও দুটো বিষয় নজরে পড়ে। একটি হলো, ৪ মিনিটের পথ পাড়ি দেওয়ার সময় পথে একটি নির্বাচনী জনসভার মুখোমুখি হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। আমজনতা তো আরাম করে বক্তৃতা শুনছে। ক্ষমতায় আসার আগে একজন ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনীতিবিদ কত ভালোবেসে বক্তব্য দেন, সেটা যাঁরা সামনাসামনি দেখেননি, তাঁরা বুঝতেও পারবেন না। তখন সম্মিলিত জনসাধারণ তন্ময় হয়ে সে ভাষণ শুনতে থাকেন, শুনতেই থাকেন।

আশপাশ দিয়ে কোনো গাড়ি আসছে কি যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কে আর খেয়াল রাখে? বড় জনসভা, তাই মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায়ও তো ছিল মানুষ। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির করণীয় কী ছিল? তারা তখন সাইরেন বাজিয়ে রাস্তার মানুষদের হটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কই! কোনো সাইরেনের শব্দ তো শুনতে পাওয়া যায়নি!

সাইরেনই যদি না বাজবে, তাহলে এত বড় জনতার দলকে কী করে রাস্তাছাড়া করবে গাড়িটি? ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অথচ কেন তাতে সাইরেন বাজবে না? সে প্রশ্নেরও জবাব মিলেছে পরে। একজন কর্মকর্তা অকপটে স্বীকার করেছেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটির সাইরেন ছিল অকেজো!

ব্যস! আর কী জানতে চাওয়ার থাকতে পারে? জনসভার একজন মানুষও বুঝলেন না, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পথ ছেড়ে দিতে হয়! ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাঁদের গাড়ির সাইরেনটিকেও সদা প্রস্তুত রাখলেন না! ফলাফল: ভস্মীভূত বাড়ি এবং আগুনে নিহত ৫ বছর বয়সী শিশু!

এ ধরনের ঘটনাকে আর কত দিন নিজেদের ‘ললাটলিখন’ বলে চালানো হবে? এর সুরাহা করা কি খুব কঠিন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত