Ajker Patrika

জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে ভোগান্তি

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর 
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৩: ১৯
Thumbnail image

গাজীপুরে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ও সংশোধন করতে আসা নাগরিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নামমাত্র সরকারি ফি দিয়ে এসব সেবা দেওয়ার বিধান থাকলেও নানা অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। সরকারি নিয়মে, জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে নিবন্ধন করা গেলেও পাঁচ বছর বয়সীদের ২৫ টাকা, তার বেশি বয়স্কদের ৫০ টাকা ফি দিতে হবে। গাজীপুরের পাঁচটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), তিনটি পৌরসভার ২৭টি ওয়ার্ড, একটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভায় মেয়র, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত আছেন। অপরদিকে, ভুল সংশোধনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাধ্যতামূলক এই নাগরিক সেবা পেতে সেবাকেন্দ্রে প্রতিদিন শত শত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, আগের রেজিস্ট্রেশন দেখে, তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই কাজ করায় বেড়েছে ভুলের সংখ্যা। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে কোথাও কোথাও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা হলেও কারও কারও কাছ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

এসএসসি পরীক্ষার সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম হালিমা বেগম। ছেলের অ্যানালগ জন্মনিবন্ধনেও নিজের নাম ঠিক ছিল। কিন্তু ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে মায়ের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে শুধু হালিমা। অ্যানালগ জন্মনিবন্ধনে নাম নাফিস সাদিক। কিন্তু ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনে উল্লেখ করা হয়েছে নাফিজ সাদিক। এমন সব ভুলের ছড়াছড়ি জন্মনিবন্ধন সনদ ও সংশোধন কার্যক্রমে। ছয় মাসর চেষ্টাতেও ভুল সংশোধন করতে পারেননি বলে জানান হালিমা বেগম।

গাজীপুর নগর ভবনে সেবা নিতে এসে লাইনে দাঁড়ানো মার্জিয়া বেগমের সঙ্গে গত মঙ্গলবার কথা হয়। তিনি জানান, গত ছয় মাস ধরে মেয়ে রিদি আক্তারের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের ভুল সংশোধনের জন্য নগর ভবন ও ডিসি অফিসে ঘুরছেন। কিন্তু এখনো করতে পারেননি।

এ বিষয়ে নগর ভবনে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সহকারী রহিমা আক্তার নিশার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁর এখানে দৈনিক প্রায় ৩০০ আবেদন জমা হয়। এগুলোর মধ্যে নিবন্ধনের কাজ দ্রুত করে দেওয়া হয়। সংশোধনের কাজগুলো অনুমোদন হতে সময় বেশি লাগে, তাই অনেক সময় সেবা পেতে দেরি হয়।

গাজীপুর খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক সোহেল আহমেদ জানান, একজনের নাম সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তাঁকে গাজীপুরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কয়েক দিন ঘুরে কাজ না হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগে কর্মরত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কাজটি করে নিয়েছেন।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দুর্বাটি গ্রামের মরিয়ম বেগম (৪৫) বলেন, ‘আমার আগে জন্মনিবন্ধন ছিল। সরকার নতুন নিয়ম করার পর ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। পরে পৌরসভা থেকে জানানো হয় জেলা ডিসি অফিস থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে হবে। আমি চিনি না, বিধায় তাঁরা কাগজ রেখে বলল সময়মতো তাঁরা স্বাক্ষর এনে দেবেন। দুই মাস হলেও নিবন্ধনের কাগজ এখনো হাতে পাইনি।’

তবে, সার্ভারের ধীর গতির কারণে জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনের সেবাগুলো দ্রুত দেওয়া সম্ভব হয় না বলে দাবি করেছেন একাধিক নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা। তবে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে কথা হলে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার এখানে কোনো আবেদন পেন্ডিং থাকে না। জেলার কোথাও জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনের কাজে কোনো অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত