সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
দেশজুড়ে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেগুলোর প্রয়োজন আছে। পদ্মা সেতু তো আমাদের জন্য খুব বড় অহংকারের বস্তু। কিন্তু ছোট ছোট সাঁকোও তো দরকার। সাঁকো তৈরি না করলে এবং তৈরি সাঁকোর রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ঘটলে তো সাধারণ মানুষের দুর্দশা ঘুচবে না। এমন খবর তো আমাদের হরহামেশাই দৈনিক পত্রিকায় পড়তে হয় যে গ্রামাঞ্চলে ‘২০ হাজার মানুষের নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকোই ভরসা।’ আর একই দৈনিকে একই দিনের খবর দেখতে পাই: ১২ ইঞ্চি জমির বিরোধ নিয়ে পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি। আবার বাসস্ট্যান্ডের নামকরণ দিয়ে মাইকে টেঁটাযুদ্ধের ডাক। বড় বড় জিনিসের নিচে চাপা থাকা অবস্থায় মানুষ নিজ নিজ ছোটখাটো সুখ-দুঃখ ও সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত অস্থির হয়ে আছে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, ছোট হয়ে পড়ছে। ছোট ছোট যে খবরের কথা উল্লেখ করলাম, এর আশপাশেই আরও একটি ছোট খবর ঘোরাফেরা করছে দেখলাম। সেটি এ রকমের, বৃদ্ধ বাবাকে তাঁর দুই ছেলে মিলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বৃদ্ধের অপরাধ, ছেলেদের তিনি জমি লিখে দিচ্ছেন না। বৃদ্ধের বয়স ৮০। তিনি এখন কোথায় যাবেন? গেছেন থানায়। নালিশ করবেন বলে। আশা করা হচ্ছে, পুলিশ এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ পিতার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু পুলিশ যে উল্টো পথও ধরে, এমন খবরেরও তো কোনো ঘাটতি নেই। যেমন এ রকম একটা খবর, ‘মা-বাবাকে ঘরছাড়া করতে পুলিশ দিয়ে পেটাল ছেলে।’
মানুষের মধ্যে স্নেহ-মমতার অভাব ঘটেছে, বিবেক-বিবেচনার ভীষণ দুর্দশা—এসব কথা আমরা বলতে পারব, বলা দরকারও। ‘আদর্শলিপি’র নীতিকথাগুলো যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ আবশ্যক বৈকি। কিন্তু আসল ঘটনাটা তো অন্য রকমের। সেটা নৈতিক নয়, বৈষয়িক। নৈতিকতা বিষয়সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণ করে দিচ্ছে না, উল্টোটাই বরং ঘটছে। নৈতিকতা মার খাওয়ার ভয় পেয়েছে, ভয় পেয়ে চলে গেছে বিষয়সম্পত্তির মালিকানার অধীনে। আগে এটা যে সত্য ছিল না, এমন নয়। হ্যাঁ, সত্য আগেও ছিল। রাজা-বাদশারা পর্যন্ত বাবাকে খুন করেছে, সিংহাসনের লোভে। তবে এখন পুঁজিবাদের বিকাশের সর্বোচ্চ যুগে, ব্যাপারটা আগের তুলনায় অধিকতর সর্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাদানটি প্রতিযোগিতার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভাব আগেও ছিল, কিন্তু অভাববোধ এমন তীব্র ছিল না। আর ছিল না এমন নির্মম প্রতিযোগিতা।চট্টগ্রাম থেকে রেলে চেপে কক্সবাজারে যাওয়া যাবে—এমন সুখের খবরে কে না উল্লসিত হয়েছেন। মস্ত বড় পরিকল্পনা, মস্ত বড় অর্জন। কিন্তু পাহাড় থেকে পানির ঢল নেমে যে রেললাইনকে বাঁকা করে দিতে পারে, সেই ছোট্ট বিষয়টিকে তো যথোপযুক্ত ভাবনা দিয়ে বিবেচনায় রাখা হয়নি। যে জন্য রেললাইনে বড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। নাটবল্টুও অনেক সময় খুব বলবান হয়ে ওঠে, যদিও আকৃতিতে তারা খুবই খাটো।
তবে বড়রা আরও বড় হবে এবং ছোট থাকাই যাদের বিধিলিপি, তারা ওই ছোটই রয়ে যাবে—এটাই তো নিয়ম। গাছেরা তাই বেড়ে ওঠে, ঘাসেরা ঘাসই রয়ে যায়। এটা ঘাসদের জন্য মোটেই কোনো সান্ত্বনা নয় যে ঝড় এলে গাছদের ভয় থাকে উপড়ে পড়ে যাওয়ার। কিন্তু ঘাসেরা বেঁচে যায়, ঝড়-বৃষ্টির পরে বরং সতেজভাবে হেসে ওঠে। সান্ত্বনা নয় এই সরল কারণে যে ঘাসকে ছাগলে খায়, মানুষ পায়ে মাড়ায় এবং রোদে তারা শুকিয়ে মরে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যারা বড় জায়গাতে আছে, তারা আরও বড় হয়, যদি না কোনো বিঘ্ন ঘটে। আর জাতীয় দুর্যোগে তো বড়দের ক্ষতি হয় না, লাভই হয়। এমনকি জাতীয় খেলাধুলায়ও। যেমন ধরা যাক জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারটা। নির্বাচন অবশ্য কোনো হালকা জিনিস নয়। এর মধ্য দিয়েই ঠিক হওয়ার কথা আগামী পাঁচ বছর ধরে কারা দেশ শাসন করবেন (একাধিক অর্থে)। অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এটি। তবে বড় দুই দলের নেতারা দেখছি একে একটা খেলাই বলছেন। প্রথমে বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রধান মুখপাত্র, পরে কথাটা লুফে নিয়েছেন বিএনপির প্রধান মুখপাত্রও। খেলাই হোক কি লড়াই—এতে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়ার কর্মী, ছাপাখানার মালিক, মাইকওয়ালা সবারই যে কিছু না কিছু লাভ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারি কর্মচারীরাও বাদ পড়বেন না। তাঁদের ভাতা ও ক্ষমতা দুটিই যে বেড়ে যাবে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই। বড় আমলা যাঁরা, তাঁরা এমনিতেই বড় গাড়ি পেয়ে থাকেন, নির্বাচন আগত-প্রায় হওয়ার দরুন তাঁদের জন্য আরও দামি গাড়ি কেনার বন্দোবস্ত হয়েছে। জানা গেছে, আমলাদের জন্য গাড়ি কেনা বাবদ এবারের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা; গত বছর এই বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনতে পারবেন। গত বছর সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯৪ লাখ। দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় খবরটির অন্তর্বস্তুর আরও একটি দিক উন্মোচিত হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘ভোটের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য কেনা হচ্ছে ২৫১টি গাড়ি এবং নির্বাচন কমিশনের আমলারাও গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন।’ অথচ এ সত্য তো সবারই জানা যে সরকারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ কারণে সরকার ব্যয়সংকোচন নীতি নিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে অন্য সবকিছুর খেলা যেমন-তেমন, টাকার খেলাটা খুবই জমবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নাটবল্টু খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বিশেষভাবে যদি তারা খসে যায়, এমনকি আলগা হয়ে পড়ে। তবে ক্ষুদ্র মশারাও মোটেই কম যায় না। জুতমতো কামড়ে দিতে পারলে মানুষ মরে যায়। পৃথিবীতে মশারা যত মানুষ মেরেছে, অন্য কোনো প্রাণী ততটা পারেনি। বাঘ-ভালুক সবাই হার মেনেছে মশার কাছে।
‘রাতে মশা, দিনে মাছি এ নিয়ে বেঁচে আছি’, এ রকম কথা বাংলার যেকোনো জনপদ সম্পর্কেই একদা সত্য ছিল। বেঁচে আছি না বলে ‘টিকে আছি’ বলাই হতো সংগত। তবে মশা এখন রাতে নয়, দিনেও কামড়ায়। একসময়ে ম্যালেরিয়া ছড়াত, এখন আর তেমনটা শোনা যায় না। তবে মশারা তাজা আছে, অনেক দেশেই হেনস্তা করছে তারা মানুষকে। চিকুনগুনিয়ারও বাহক হয়েছিল মশা। এখন এসেছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুবাহী মশা এখন দিন-রাত মানছে না, যখন-তখন দংশন করছে। ডেঙ্গু আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই লোক মারার রেকর্ড তৈরি করে ফেলেছে এবং সেই রেকর্ড ভাঙছেও।
মশা মারতে কামান দাগতে নেই, এমন কথা প্রবচনে পাই। কামান দেগে লাভ হবে না, মশা তাতে মরবে না। ওপর থেকে ওষুধ ছিটিয়েও খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে কী করতে হবে? তা-ও বলা আছে। মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কে করবে কাজটা? কেন, মানুষ উদয়ান্ত করবে। কিন্তু মানুষের সময় কোথায় এসব সামাজিক কাজ করার? মানুষ তো জীবন-জীবিকা সংগ্রহের কাজে জানপ্রাণ দিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। রীতিমতো দিশেহারা। অনেকের জন্যই একটা কাজের উপার্জনে সংসার কুলায় না; অতিরিক্ত কাজ খুঁজতে হয়। খুঁজলেই যে পাওয়া যাবে, এমন কথা নেই। বহু মানুষ কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। পাচ্ছেন না। যাঁরা পাচ্ছেন না, তাঁরা অনেকেই অধিক ব্যস্ত যাঁরা কাজ পেয়েছেন তাঁদের তুলনায়। ব্যস্ত তাঁরা কাজের খোঁজে। না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। ঝিমাচ্ছেন। মাদকসেবনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ঝিমানোতে সহায়ক হবে ভেবে। মশাদের আস্তানা তাই ভাঙা হচ্ছে না।
তবে কামান দাগাটা কিন্তু ঠিকই চলছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে তারা কামান দাগায় কোনো গাফিলতি করছে না। আমরাও আওয়াজটা পাচ্ছি। কিন্তু ফল পাচ্ছি না। ভালো কথা, ফেসবুকে নাকি বিস্তর হাসিঠাট্টা চলে। তবে খবরের কাগজে যে কার্টুন একসময় থাকত, উন্নতির মহোৎসবের যুগে ও সুযোগে তারা কোথায় পালিয়েছে—কে জানে? অথচ কার্টুনের বিষয়বস্তু এখন তো আগের তুলনায় কম নেই। আসল সত্য এটাই, ব্যঙ্গবিদ্রূপের পরিসরটুকু এখন অন্তর্হিতই বলা চলে। দৌড়টা ফেসবুকের ক্ষেত্রটি পর্যন্তই, তার বাইরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রয়েছে। ওত পেতে থাকে, ‘অপরাধী’ দেখতে পেলেই ভীষণ রকম সক্রিয় হয়ে ওঠে। লাফ দিয়ে ধরতে ছোটে। আইনটির নাকি বদল হয়েছে। তবে সাংবাদিকেরা বলছেন, বদল যেটুকু তা শুধু নামেই, ডিজিটাল সিকিউরিটির জায়গায় সাইবার সিকিউরিটি এসেছে। ভেতরের বস্তু বদলায়নি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেশজুড়ে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেগুলোর প্রয়োজন আছে। পদ্মা সেতু তো আমাদের জন্য খুব বড় অহংকারের বস্তু। কিন্তু ছোট ছোট সাঁকোও তো দরকার। সাঁকো তৈরি না করলে এবং তৈরি সাঁকোর রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ঘটলে তো সাধারণ মানুষের দুর্দশা ঘুচবে না। এমন খবর তো আমাদের হরহামেশাই দৈনিক পত্রিকায় পড়তে হয় যে গ্রামাঞ্চলে ‘২০ হাজার মানুষের নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকোই ভরসা।’ আর একই দৈনিকে একই দিনের খবর দেখতে পাই: ১২ ইঞ্চি জমির বিরোধ নিয়ে পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি। আবার বাসস্ট্যান্ডের নামকরণ দিয়ে মাইকে টেঁটাযুদ্ধের ডাক। বড় বড় জিনিসের নিচে চাপা থাকা অবস্থায় মানুষ নিজ নিজ ছোটখাটো সুখ-দুঃখ ও সমস্যা নিয়ে অত্যন্ত অস্থির হয়ে আছে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, ছোট হয়ে পড়ছে। ছোট ছোট যে খবরের কথা উল্লেখ করলাম, এর আশপাশেই আরও একটি ছোট খবর ঘোরাফেরা করছে দেখলাম। সেটি এ রকমের, বৃদ্ধ বাবাকে তাঁর দুই ছেলে মিলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বৃদ্ধের অপরাধ, ছেলেদের তিনি জমি লিখে দিচ্ছেন না। বৃদ্ধের বয়স ৮০। তিনি এখন কোথায় যাবেন? গেছেন থানায়। নালিশ করবেন বলে। আশা করা হচ্ছে, পুলিশ এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ পিতার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু পুলিশ যে উল্টো পথও ধরে, এমন খবরেরও তো কোনো ঘাটতি নেই। যেমন এ রকম একটা খবর, ‘মা-বাবাকে ঘরছাড়া করতে পুলিশ দিয়ে পেটাল ছেলে।’
মানুষের মধ্যে স্নেহ-মমতার অভাব ঘটেছে, বিবেক-বিবেচনার ভীষণ দুর্দশা—এসব কথা আমরা বলতে পারব, বলা দরকারও। ‘আদর্শলিপি’র নীতিকথাগুলো যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ আবশ্যক বৈকি। কিন্তু আসল ঘটনাটা তো অন্য রকমের। সেটা নৈতিক নয়, বৈষয়িক। নৈতিকতা বিষয়সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণ করে দিচ্ছে না, উল্টোটাই বরং ঘটছে। নৈতিকতা মার খাওয়ার ভয় পেয়েছে, ভয় পেয়ে চলে গেছে বিষয়সম্পত্তির মালিকানার অধীনে। আগে এটা যে সত্য ছিল না, এমন নয়। হ্যাঁ, সত্য আগেও ছিল। রাজা-বাদশারা পর্যন্ত বাবাকে খুন করেছে, সিংহাসনের লোভে। তবে এখন পুঁজিবাদের বিকাশের সর্বোচ্চ যুগে, ব্যাপারটা আগের তুলনায় অধিকতর সর্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাদানটি প্রতিযোগিতার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভাব আগেও ছিল, কিন্তু অভাববোধ এমন তীব্র ছিল না। আর ছিল না এমন নির্মম প্রতিযোগিতা।চট্টগ্রাম থেকে রেলে চেপে কক্সবাজারে যাওয়া যাবে—এমন সুখের খবরে কে না উল্লসিত হয়েছেন। মস্ত বড় পরিকল্পনা, মস্ত বড় অর্জন। কিন্তু পাহাড় থেকে পানির ঢল নেমে যে রেললাইনকে বাঁকা করে দিতে পারে, সেই ছোট্ট বিষয়টিকে তো যথোপযুক্ত ভাবনা দিয়ে বিবেচনায় রাখা হয়নি। যে জন্য রেললাইনে বড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। নাটবল্টুও অনেক সময় খুব বলবান হয়ে ওঠে, যদিও আকৃতিতে তারা খুবই খাটো।
তবে বড়রা আরও বড় হবে এবং ছোট থাকাই যাদের বিধিলিপি, তারা ওই ছোটই রয়ে যাবে—এটাই তো নিয়ম। গাছেরা তাই বেড়ে ওঠে, ঘাসেরা ঘাসই রয়ে যায়। এটা ঘাসদের জন্য মোটেই কোনো সান্ত্বনা নয় যে ঝড় এলে গাছদের ভয় থাকে উপড়ে পড়ে যাওয়ার। কিন্তু ঘাসেরা বেঁচে যায়, ঝড়-বৃষ্টির পরে বরং সতেজভাবে হেসে ওঠে। সান্ত্বনা নয় এই সরল কারণে যে ঘাসকে ছাগলে খায়, মানুষ পায়ে মাড়ায় এবং রোদে তারা শুকিয়ে মরে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যারা বড় জায়গাতে আছে, তারা আরও বড় হয়, যদি না কোনো বিঘ্ন ঘটে। আর জাতীয় দুর্যোগে তো বড়দের ক্ষতি হয় না, লাভই হয়। এমনকি জাতীয় খেলাধুলায়ও। যেমন ধরা যাক জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারটা। নির্বাচন অবশ্য কোনো হালকা জিনিস নয়। এর মধ্য দিয়েই ঠিক হওয়ার কথা আগামী পাঁচ বছর ধরে কারা দেশ শাসন করবেন (একাধিক অর্থে)। অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এটি। তবে বড় দুই দলের নেতারা দেখছি একে একটা খেলাই বলছেন। প্রথমে বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রধান মুখপাত্র, পরে কথাটা লুফে নিয়েছেন বিএনপির প্রধান মুখপাত্রও। খেলাই হোক কি লড়াই—এতে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়ার কর্মী, ছাপাখানার মালিক, মাইকওয়ালা সবারই যে কিছু না কিছু লাভ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারি কর্মচারীরাও বাদ পড়বেন না। তাঁদের ভাতা ও ক্ষমতা দুটিই যে বেড়ে যাবে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই। বড় আমলা যাঁরা, তাঁরা এমনিতেই বড় গাড়ি পেয়ে থাকেন, নির্বাচন আগত-প্রায় হওয়ার দরুন তাঁদের জন্য আরও দামি গাড়ি কেনার বন্দোবস্ত হয়েছে। জানা গেছে, আমলাদের জন্য গাড়ি কেনা বাবদ এবারের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা; গত বছর এই বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনতে পারবেন। গত বছর সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯৪ লাখ। দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় খবরটির অন্তর্বস্তুর আরও একটি দিক উন্মোচিত হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘ভোটের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য কেনা হচ্ছে ২৫১টি গাড়ি এবং নির্বাচন কমিশনের আমলারাও গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন।’ অথচ এ সত্য তো সবারই জানা যে সরকারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ কারণে সরকার ব্যয়সংকোচন নীতি নিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে অন্য সবকিছুর খেলা যেমন-তেমন, টাকার খেলাটা খুবই জমবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নাটবল্টু খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বিশেষভাবে যদি তারা খসে যায়, এমনকি আলগা হয়ে পড়ে। তবে ক্ষুদ্র মশারাও মোটেই কম যায় না। জুতমতো কামড়ে দিতে পারলে মানুষ মরে যায়। পৃথিবীতে মশারা যত মানুষ মেরেছে, অন্য কোনো প্রাণী ততটা পারেনি। বাঘ-ভালুক সবাই হার মেনেছে মশার কাছে।
‘রাতে মশা, দিনে মাছি এ নিয়ে বেঁচে আছি’, এ রকম কথা বাংলার যেকোনো জনপদ সম্পর্কেই একদা সত্য ছিল। বেঁচে আছি না বলে ‘টিকে আছি’ বলাই হতো সংগত। তবে মশা এখন রাতে নয়, দিনেও কামড়ায়। একসময়ে ম্যালেরিয়া ছড়াত, এখন আর তেমনটা শোনা যায় না। তবে মশারা তাজা আছে, অনেক দেশেই হেনস্তা করছে তারা মানুষকে। চিকুনগুনিয়ারও বাহক হয়েছিল মশা। এখন এসেছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুবাহী মশা এখন দিন-রাত মানছে না, যখন-তখন দংশন করছে। ডেঙ্গু আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই লোক মারার রেকর্ড তৈরি করে ফেলেছে এবং সেই রেকর্ড ভাঙছেও।
মশা মারতে কামান দাগতে নেই, এমন কথা প্রবচনে পাই। কামান দেগে লাভ হবে না, মশা তাতে মরবে না। ওপর থেকে ওষুধ ছিটিয়েও খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে কী করতে হবে? তা-ও বলা আছে। মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কে করবে কাজটা? কেন, মানুষ উদয়ান্ত করবে। কিন্তু মানুষের সময় কোথায় এসব সামাজিক কাজ করার? মানুষ তো জীবন-জীবিকা সংগ্রহের কাজে জানপ্রাণ দিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। রীতিমতো দিশেহারা। অনেকের জন্যই একটা কাজের উপার্জনে সংসার কুলায় না; অতিরিক্ত কাজ খুঁজতে হয়। খুঁজলেই যে পাওয়া যাবে, এমন কথা নেই। বহু মানুষ কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। পাচ্ছেন না। যাঁরা পাচ্ছেন না, তাঁরা অনেকেই অধিক ব্যস্ত যাঁরা কাজ পেয়েছেন তাঁদের তুলনায়। ব্যস্ত তাঁরা কাজের খোঁজে। না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। ঝিমাচ্ছেন। মাদকসেবনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ঝিমানোতে সহায়ক হবে ভেবে। মশাদের আস্তানা তাই ভাঙা হচ্ছে না।
তবে কামান দাগাটা কিন্তু ঠিকই চলছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে তারা কামান দাগায় কোনো গাফিলতি করছে না। আমরাও আওয়াজটা পাচ্ছি। কিন্তু ফল পাচ্ছি না। ভালো কথা, ফেসবুকে নাকি বিস্তর হাসিঠাট্টা চলে। তবে খবরের কাগজে যে কার্টুন একসময় থাকত, উন্নতির মহোৎসবের যুগে ও সুযোগে তারা কোথায় পালিয়েছে—কে জানে? অথচ কার্টুনের বিষয়বস্তু এখন তো আগের তুলনায় কম নেই। আসল সত্য এটাই, ব্যঙ্গবিদ্রূপের পরিসরটুকু এখন অন্তর্হিতই বলা চলে। দৌড়টা ফেসবুকের ক্ষেত্রটি পর্যন্তই, তার বাইরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রয়েছে। ওত পেতে থাকে, ‘অপরাধী’ দেখতে পেলেই ভীষণ রকম সক্রিয় হয়ে ওঠে। লাফ দিয়ে ধরতে ছোটে। আইনটির নাকি বদল হয়েছে। তবে সাংবাদিকেরা বলছেন, বদল যেটুকু তা শুধু নামেই, ডিজিটাল সিকিউরিটির জায়গায় সাইবার সিকিউরিটি এসেছে। ভেতরের বস্তু বদলায়নি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৭ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৭ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৭ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫