Ajker Patrika

বিদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজখবর

মো. আশিকুর রহমান
বিদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজখবর

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বর্তমানে তরুণদের জন্য খুব রোমাঞ্চকর একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে এখন বেশি পরিমাণে শিক্ষার্থী যাচ্ছে বাইরের দেশগুলোতে পড়তে। পড়াশোনার সময় ও ডিগ্রি-পরবর্তী নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কারণে এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

দেশে ব্যাচেলর সম্পন্ন করে আপনি মূলত চারটি ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

  • মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ
  • মাস্টার্স অব আর্টস বা এমএ
  • মাস্টার্স অব সায়েন্স বা এমএস
  • ডক্টরেট ডিগ্রি বা পিএইচডি

উল্লেখ্য, আপনি ব্যাচেলরে যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, যথাযথভাবে যুক্তি খণ্ডন সাপেক্ষে আপনি পছন্দের বিষয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ধরুন আপনি মার্কেটিংয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু আপনার কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি খুব আগ্রহ এবং আপনি কাজও পারেন বেশ ভালো। সে ক্ষেত্রে আপনি কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সের জন্য অনায়াসে আবেদন করতে পারেন। এ ধরনের দুই একটা কোর্স বা সার্টিফিকেশন করা থাকলে এতে আপনি আরও ভালোভাবে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারবেন। সুতরাং আপনি মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থী হয়ে যে ডেটা সায়েন্সে আবেদন করা যাবে না, এটা কখনো ভাববেন না। উচ্চশিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার বিষয়ে অন্যান্য দেশে সেন্ট্রালি স্কলারশিপ থাকলেও নর্থ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা করে স্কলারশিপ থাকে এবং এই স্কলারশিপের পরিমাণ কয়েক শ মিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে। এখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে এবং মোটামুটি ব্যাচেলর শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। দেখা যায় যে ক্লাসগুলো ঠিকঠাক পরিচালনার জন্য অনেক শিক্ষকেরই সহকারী প্রয়োজন হয় এবং যাঁরা মাস্টার্স ও পিএইচডি লেভেলে পড়াশোনা করছেন, তাঁদের অনেকে এ ক্ষেত্রে শিক্ষক সহকারী (টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে কাজ করে থাকেন। টিচিং এসিস্ট্যান্টের কাজ মূলত গ্রেডিং, হলে গার্ড দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ই-মেইলের রিপ্লে দেওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাচেলরে ক্লাস নেওয়া। টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট একধরনের গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ। এ ছাড়া আরও দুই ধরনের অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ রয়েছে। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টরা সাধারণ কোনো প্রফেসরের গবেষণার কাজে সহযোগিতা করেন। অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিপার্টমেন্টের অফিশিয়াল কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেলে অন্য কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেলে সাধারণত সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা সময় দেওয়া লাগে। অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে করে আপনার বিশাল পরিমাণ টিউশন ফি মওকুফ হয়ে যায় এবং মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টাইপেন্ড পাওয়া যায়। এই স্টাইপেন্ডে আপনার চলার খরচ বহন করা যায়। এ জন্য ইদানীং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে শিক্ষার্থীরা প্রচুর পরিমাণে আবেদন করছে। অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের জন্য সরকার বা কারও কাছে ধরনা দেওয়া লাগে না। এটা বিভাগের একান্ত বিষয়। আপনি বিভাগের যিনি হেড (গ্র্যাজুয়েট সমন্বয়ক বলা হয়ে থাকে) তাঁকে ই-মেইল করে যোগাযোগ করলে দেখা যায় অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাওয়া যায়।

অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দুইভাবে ম্যানেজ করা যায়।

  • প্রফেসর ই-মেইল করে
  • সেন্ট্রালি ই-মেইল করে

সেন্ট্রালি ফান্ডিংয়ে প্রফেসরকে আলাদাভাবে ই-মেইলের কোনো প্রয়োজন হয় না। সাধারণত বিভাগের যিনি প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বা গ্র্যাজুয়েট সমন্বয়ক, তাঁকে ই-মেইল করে যোগাযোগ করলে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ মেলে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ই-মেইলে আপনার পরিচয়, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং সেই সঙ্গে সিভি যোগ করে দিলে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। অন্যদিকে অনেক প্রফেসরের ল্যাবে গবেষণা সহকারী প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে প্রফেসরকে ই-মেইল করেও ফান্ড ম্যানেজ করা যায়।

মেহেদী হাসানবিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা
কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করব তা ভাবা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০-এর মতো। দেখা যায় যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে বাকিগুলো একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে, কে কার থেকে কত ভালো করতে পারে। বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো থেকে যারা পড়তে আসে, তাদের বেশির ভাগেরই বড় একটা সময় যায় কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে তা নিয়ে। সে ক্ষেত্রে আমার ছোটখাটো সাজেশন হলো:

  • আপনার আশপাশের কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে থাকেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করুন তিনি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। তাঁর লিস্টগুলো আপনি টুকে নিন। এভাবে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে, আপনার হাতে ১৫-২০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চলে এসেছে। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে নিন। এভাবে করলে আপনার সময় অনেক বেঁচে যাবে।
  • USnews এবং Times higher education-এর র‍্যাঙ্কিং ফলো করতে পারেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এ ছাড়া গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে নরমালি সার্চ দিলেই সব তথ্য চলে আসে। যেমন ধরনে আপনি লিখলেন ‘University of Miami Business School Graduate Admission Requirements’ এতে দেখবেন আপনার তথ্য পেয়ে গেছেন। 

আবেদন প্রক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক বাছাইয়ের পর আপনার কাজ হবে গ্র্যাজুয়েট কো-অর্ডিনেটরকে ই-মেইল করা। এরপর তার ফিডব্যাকের ওপর ভিত্তি করে আপনি তার কাছে ফান্ডিং ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। পজিটিভ ফিডব্যাক পেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে যা যা লাগে।

  • সিভি
  • টেস্ট স্কোর: জিম্যাট/জিআরই (কোভিডের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে না। তবে জিআরই/জিম্যাট থাকলে ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • অন্যদিকে বিজনেস স্কুলগুলো সাধারণত জিআরই/জিম্যাট বাধ্যতামূলক করে রাখে)।
  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট (কেন আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবজেক্টে পড়তে চান তা লেখা লাগে)।
  • সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশিট।
  • ল্যাঙ্গুয়েজ স্কোর: আইইএলটিএস বা টোফেল বা অন্যান্য (বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকে)।
  • রিকমেন্ডেশন লেটার (২-৩টা)।
  • ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের জন্য আলাদা আবেদন করা লাগে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে না। এটা ওয়েবসাইটে লেখা থাকে।
  • একটা কথা উল্লেখ্য, শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে GRE/GMAT লাগে। ইউরোপ বা এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে তা লাগে না। 

প্রস্তুতি শুরু
দেশের বাইরে পড়তে আসার ইচ্ছা থাকলে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে নিজেকে গবেষণার দিকে মনোনিবেশ করা। গবেষণা মানে যে শুধু ল্যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকে অ্যাপ্রোন পরে গবেষণা করতে হয় তা কিন্তু নয়। গবেষণার বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। তার মধ্যে ল্যাব একটি। তবে বিজনেস বা সোশ্যাল সায়েন্সের ব্যাকগ্রাউন্ডের গবেষণার ধরন ততটা ল্যাবকেন্দ্রিক নয়। হিউম্যান সাইকোলজি খুব বড় একটা পার্ট বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের গবেষণার জন্য। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটার হার কেমন, এটাও গবেষণার ভালো একটা টপিক। নিজেকে প্রথম থেকেই গবেষণামনা করলে পরে এর সুফল পাওয়া যায়। এর মানে যে কাঁড়ি কাঁড়ি গবেষণা পেপার বের করতে হবে তা নয়। মানে নিজেকে আগ্রহী করে তোলা। এর বাইরে তৃতীয় বর্ষ থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে প্রস্তুত করা যেতে পারে। প্রথম প্রস্তুতি হিসেবে পাসপোর্ট করা, নিয়মিত বিভিন্ন কনফারেন্স বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া, IELTS, GRE/GMAT-এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা, ইউনিভার্সিটি লিস্টিং করা ইত্যাদি। একটা এক্সেল শিটে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের শেষ তারিখ কবে, তা-ও লিপিবদ্ধ করে রাখলে প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলে সুবিধা। 

মেহেদী হাসান, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তামিম কি তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হবেন

‘আমি আধুনিক পুলিশ, সাংবাদিকদের ভয় করে চলি না’

লন্ডনের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা, ফ্লাইট বাতিলে ভোগান্তিতে হাজারো যাত্রী

নারীর ‘বগলের গন্ধ’ পুরুষের মানসিক চাপ কমায়, তবে কি মানুষেরও আছে ফেরোমোন!

বাংলাদেশি পণ্যে ভারতের চেয়ে কম শুল্কের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত