Ajker Patrika

ফের দায়িত্বে বিতর্কিত ঠিকাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ফের দায়িত্বে বিতর্কিত ঠিকাদার

চট্টগ্রামের বিতর্কিত বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারদের (ডিআরটিসি) দশমবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়েছে খাদ্য বিভাগ। প্রতি দুই বছর পর দরপত্র আহ্বান করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ঠিকাদারগুলোকে বারবার সময় বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তাঁদের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে ৪৬৯টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে। এসব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পরিবহন না করে সরকারি চাল বাইরে বিক্রির সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই নিয়োগের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঠিকাদার তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

অভিযোগ আছে, বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজটিও নিয়ন্ত্রণ করছেন মূলত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। অপর দিকে নতুন কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লাইসেন্স ইস্যুর উদ্যোগ নিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। 
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা মহাপরিচালকের নির্দেশে করা হয়েছে।’ অনিবার্য কারণবশত এটা করা হয়েছে বলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত একটি আদেশে ২৩ জুনের ইস্যু করা স্মারকে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ মেয়াদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া ডিআরটিসি ঠিকাদারদের মেয়াদ ২০২০ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। এর পর থেকে ৩ মাস পর পর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় দশমবারের মতো জারিকৃত আদেশে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ‘অনিবার্য কারণে’ এই মেয়াদ বাড়ানো হয় বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, ২৮ জুন চট্টগ্রাম ডিআরটিসির নিবন্ধিত খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হারুন এন্টারপ্রাইজকে ১৫ টন (৩০৩ বস্তা) চাল রাঙামাটির সদর গুদামের জন্য পাঠানো হলে, তা চাক্তাই আড়তে বিক্রির সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। একইভাবে, গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোয়াখালীর চরবাটা গুদামে পাঠানো চাল-সংশ্লিষ্ট পরিবহন ঠিকাদার পাহাড়তলি বাজারে পাচারের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ৪৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার একই ঠিকানায়। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ৫২ জন নারীর নাম পাওয়া গেছে, যারা খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার স্ত্রী, কন্যা, শাশুড়ি ও স্বজন।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে দেশে আমদানি করা খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ ছাড়া হালিশহরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম ও পতেঙ্গার সাইলোতেও মজুত থাকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য। সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল, গম ও সরকারি খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের সহায়তা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এ জন্য দূরত্ব আর যোগাযোগব্যবস্থা বিবেচনা করে ঠিকাদারদের মাইলপ্রতি পরিবহন ভাড়া দেয় খাদ্য বিভাগ। এ কাজে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেপুটি নিয়ন্ত্রক (চলাচল ও সংরক্ষণ) সুনীল দত্ত বলেন, ‘ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে আদেশ এখনো পাইনি, আজ (শনিবার) হয়তো পাব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত