Ajker Patrika

সৈয়দপুর খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধ

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪২
সৈয়দপুর খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করায় এবং গোড়ার মাটি কেটে নেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এই বাঁধের অর্ধশতাধিক স্থানে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধের কোথাও ভাঙন দেখা দিলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সৈয়দ মো. আমিনুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আগেই খড়খড়িয়া নদীর পানি বাঁধ উপচে শহরে ঢোকে। সে সময় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে পানি আটকে সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রক্ষা করা হয়। উজানের পাহাড়ি ঢলের ফলে প্রতিবছর চার-পাঁচবার বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যার পানি। তাঁর মতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নার্থে পাকা ব্লক দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হলে অন্তত ১০০ বছরে বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না।

জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চান্দিয়ার সেতু থেকে শুরু করে পৌর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া হয়ে পার্বতীপুরের বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের কারণে শহরের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু বাঁধ ভেঙে গেলে ওইসব স্থাপনা পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর, সেনানিবাস, রেলওয়ে কারখানা, ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাংলাদেশ আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, বিসিক শিল্পনগরী, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাসপাতালসহ ছোট-মাঝারি শিল্প-কারখানা হুমকির মুখে।

সূত্রমতে, বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকলে ওই স্থাপনাগুলো কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নদীর স্তর থেকে সৈয়দপুর শহরের ওই স্থাপনাগুলো স্থানভেদে তিন থেকে ছয় ফুট নিচে অবস্থান। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খড়খড়িয়া নদী আগের মতো আর ধারণ করতে পারে না। ফলে সহসাই বাঁধ উপচে বন্যার পানি শহরমুখে ধাবিত হয়। এ ছাড়া নদীতে রয়েছে অনেক বাঁক, প্রস্থ কম। কিন্তু বর্ষাকালে থাকে তীব্র স্রোত। আর বাঁক থাকার কারণে তীব্র বেগে পানির স্রোত সরাসরি আঘাত হানে শহর রক্ষা বাঁধে। এতে করে বাঁধের জীবনীশক্তি কমে গেছে। এ জন্য নদীটি সোজাকরণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শহরের কুন্দল এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা ফিরোজ জানান, খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধটি টেকসই করতে হলে নদী সোজাকরণ যুগের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও নদী সোজা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তাঁদের মতে নদীটি সোজা করে শহর রক্ষা বাঁধটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করা হলে এ জনপদের মানুষ বর্ষাকালে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই বাঁধটি টেকসই করার জন্য আমরা ডিপিপির প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন হবে।

তিনি আরও জানান, বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে বর্ষার আগেই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত