মামুনুর রশীদ

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট। রাষ্ট্রের সীমিত সুযোগ, নাগরিকদের বঞ্চনার একটি শব্দই বারবার আমরা শুনতে পাই তা হলো—সিন্ডিকেট।
বাসভাড়া বাড়ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না, স্কুল-কলেজে শিশুরা ভর্তি হতে পারে না। ঠিকাদারি ব্যবসায়, প্রচারমাধ্যমে, গ্রামপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের মধ্যে ব্যাপক সুবিধাবাদী শ্রেণির আগ্রাসনসহ জীবনের সকল পর্যায়েই সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। সিন্ডিকেট মানে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ লোকের ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য, আমলা, টাউট-বাটপারদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নানান অপকৌশল লক্ষ করা যায়।
ইতিহাসের সুদীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় যে কখনোই সৎ লোকদের ঐক্য হয় না। অত্যন্ত অবলীলায় বিশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিপরায়ণদের ঐক্য গড়ে ওঠে। একদা ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল রাজা-বাদশাহদের কাছে। ক্ষমতার খেলা চলত রাজপ্রাসাদে। সেখানেও সিন্ডিকেট হয়ে যেত সৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসৎ ব্যক্তিদের। ইতিহাসের একটা বড় শিক্ষা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কীভাবে মীরজাফর ইংরেজদের সঙ্গে দ্রুত সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশটাকে একটি কোম্পানির হাতে তুলে দিল। সেই থেকে ২০০ বছর একটা লুণ্ঠন-প্রক্রিয়া চলল। ভারতবর্ষকে সর্বস্বান্ত করে গড়ে উঠল ইংরেজের সাম্রাজ্য।
তারপর এ দেশে ইংরেজরা নানা রকম সিন্ডিকেট করেছে, শব্দটা তাদের নিজস্ব ভাষার। ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য বহু রকম সিন্ডিকেটের উদ্যোগ তারা নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও এই সিন্ডিকেটের কর্তাদের বিরাম নেই। তার বিপরীতে একটি শব্দই চালু হয়েছে—তা হলো, আঙুল ফুলে কলাগাছ। সিন্ডিকেটের মধ্যে যারা ঢুকে যায়, তাদের মধ্যে আর কোনো ধরনের বিবেচনা থাকে না। যেকোনো রাষ্ট্রীয় নিয়মে তারা ভাগ বসায়; বিশেষ করে সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে তারা বড় বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি একজন শিক্ষকের চাকরি ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় তারা বিক্রি করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল থেকে গ্রামের টাউট-বাটপার-দালাল সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
আবার এই বিপুল অর্থ কোথায় রাখা হবে? একটা উপায় হলো জায়গা-জমি কেনা, আরেকটি উপায় বিদেশে পাচার করা। বাংলাদেশের মতো এই সুযোগ আর কোথাও নেই। আগে বাংলাদেশের পুলিশকে দুর্নীতির জন্য এককভাবে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন তার জায়গায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ক্ষমতাবানেরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
একদা শিক্ষকতায় কর্মরত সেদিন এক মধ্যবিত্ত নারী তাঁর জীবনের দীর্ঘ বয়ান দিচ্ছিলেন। বয়ানটি ব্যক্তিগত জীবন থেকে তাঁর নানান বঞ্চনার কাহিনি। দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন, তাঁর মেধাও মধ্যম মানের। কারণ, ভালো কোনো স্কুলে তিনি পড়তে পারেননি, কোচিং করার সাধ্য ছিল না। বহু কষ্টে একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান, সেখানেও বেতন অনিয়মিত। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী ছিলেন বলে পড়ে যান এক ক্যাডারের হাতে। ক্যাডারের আয়ের উৎস তিনি জানতেন না। ঘরে নিয়মিত টাকা আসত, ছয় মাস যেতে না যেতে জড়িয়ে পড়েন এক বড় সিন্ডিকেটের হাতে।
এবারে নিয়মিত টাকা আর আসে না। তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং বছর না ঘুরতেই সন্তানের জননী হন। ক্যাডারটির সন্তানের প্রতি কোনো মমতা গড়ে ওঠে না; বরং ভালোবাসা গড়ে ওঠে আরেকজনের প্রতি, নিয়মিত বাসায়ও আসেন না। শোনা যায় তিনি আরেক ক্যাডারের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। সেই স্ত্রীর আছে তিনটি ছেলেমেয়ে। ক্যাডারের দামি মোটরসাইকেল আছে।
মোটরসাইকেলে করে মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরেন, নানান মাদকের নেশায় আসক্ত তিনি। কিছু টাকা ছুড়ে দিয়ে চলে যান। নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ত্রী এবং নবজাতককে শাসান। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, মাস, বছর—এমনি করেই পেরিয়ে যায় সময়। এবারে তাঁর প্রতি নজর দেন আরেক ক্যাডার। নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি বাবার বাড়ি চলে আসেন। দরিদ্র পিতা তাঁকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে থাকেন এবং সুবিচারের আশায় বড় ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁর স্বামী এমনই দুর্ধর্ষ ক্যাডার যে তাঁকে আর কেউ স্পর্শ করতে সাহস পায় না।
এবারে হতভাগ্য পিতা এলাকার থানার ওসির কাছে যান। ওসি বিষয়টি শোনার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বোঝা যায় তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এবারে তাঁর দুই বছরের নাতনিকে নিয়ে এলাকার কমিশনারের কাছে ধরনা দেন। এখানেই হয় বিপদ। সেখানে দেখা যায় ভেতরের ঘরে বসে আছেন তাঁর জামাতা। কমিশনার কোনো সুবিচারের পরামর্শ দিতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে হতভাগ্য পিতা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক বাইরে এসে তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যে পিতা বুঝতে পেরেছেন কোথাও তিনি সুবিচার পাবেন না।
এদিকে স্কুলেও নিরাপত্তার অভাবে ওই নারী অনিয়মিত হয়ে গেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর জায়গায় আরেকজনকে নিয়োগও দিয়ে দিয়েছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে। এবারে তাঁর সামনে আর কোনো পথ বাকি রইল না। গার্মেন্টসে চাকরি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তাঁর। তা-ও বড়সড় কোনো গার্মেন্টস নয়, একেবারে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টস, বেতনও সামান্য। সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার দুধটাই শুধু কেনা যায়।শিশুটিকে বাঁচাতে হলে দুধ কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, মায়ের বুকের দুধ তত দিনে শুকিয়ে গেছে।
সেই নারী এমন সিন্ডিকেটের বর্ণনা দিতে থাকেন। তিনি কিছুতেই ক্যাডারকে বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু সেখানে ছিল ক্যাডার সিন্ডিকেটের চাপ। তাঁর স্বামীর জীবনযাপন একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে আবদ্ধ। যে সিন্ডিকেটে কোনো মায়া নেই, মমতা নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু টাকা আর পেশিশক্তি। আজকাল আর পেশিশক্তিতে চলে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ অস্ত্র। আবার আরেকটি সিন্ডিকেট আছে, যে সিন্ডিকেটের নাম মাদক। শুধু নিজের মাদক সেবন নয়, বিপুল পরিমাণ তরুণের মাদকের জোগান দেওয়া; সেখানেও বিপুল অর্থ এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই নারীর স্বামী সেই সিন্ডিকেটেরও প্রিয় পাত্র। দু-চারবার তিনি জেলেও গিয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে মুক্তিও পেয়ে গেছেন।
একদিন সিন্ডিকেটপ্রধানের কাছ থেকে এক প্রস্তাব আসে—তাঁকেও (ওই নারীকে) অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাঁদের কাজকর্মে, প্রচুর টাকা তাঁদের। কী রকম একটা জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি রাজিও হয়ে যান। দু-চার দিন মাদক সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর স্বামী ব্যাপারটি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। এ নিয়ে সিন্ডিকেটপ্রধানের সঙ্গে তাঁর স্বামীর প্রবল দ্বন্দ্ব বাধে। সামান্য অস্ত্রের খেলাও হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটপ্রধান অস্ত্রের খেলা বাদ দিয়ে বুদ্ধির খেলায় অবতীর্ণ হন এবং প্রমাণসহ তাঁকে খুনের, মাদকের মামলায় জড়িয়ে নিরাপদে জেলে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেতে তাঁর সময় লাগে না। কারণ জেলে থেকেই আরেকটি সিন্ডিকেটের সন্ধান তিনি পেয়ে যান। এবারে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাজনৈতিক নেতার মর্যাদা নিয়ে। ইতিমধ্যে সেই নারীর পিতা গত হয়েছেন, পুরো সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। বাড়ির মালিক বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানেও বাড়ির মালিকদের আরেক ধরনের সিন্ডিকেট আছে—বাড়ি আরেকজনের কাছে ভাড়া হয়ে গেছে। এবারে তিনি ওই ছোট্ট গার্মেন্টসে আবার ফিরে আসেন। সেখানেও চাকরির দালালদের সিন্ডিকেট। বেতনের একটা অংশ তাঁকে দিতে হয়, তবে ওই সিন্ডিকেটের হৃদয়বান ব্যক্তিটি তাঁকে বস্তিতে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কিছুদিন পর বস্তিটিও উচ্ছেদ হয়ে গেল। আরেক সিন্ডিকেট বস্তির দায়িত্ব নিয়ে নিল, যেখানে প্রধান তাঁর স্বামী। একদিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে তাঁর স্বামী নতুন বস্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করত আসেন, তাঁর সন্তান দূর থেকে তাঁকে দেখে। এভাবেই নানান সিন্ডিকেটের ফলাফলে সেই নারীটি তাঁর সৌন্দর্য, ভালোবাসা, মমতা সবকিছু হারিয়ে একজন ক্যাডারের সন্তানকেই বুকে নিয়ে পথ চলছেন।
কাহিনিটি খুব চমকপ্রদ নয়। কারণ, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সিন্ডিকেটের প্রভাবে লক্ষ-কোটি মানুষ কোনোমতে তাদের জীবন ধারণ করছে।রাষ্ট্রের আইন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার—কোনো কিছুই সেই নারীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। যা কিছু দৃশ্যমান, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট। রাষ্ট্রের সীমিত সুযোগ, নাগরিকদের বঞ্চনার একটি শব্দই বারবার আমরা শুনতে পাই তা হলো—সিন্ডিকেট।
বাসভাড়া বাড়ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না, স্কুল-কলেজে শিশুরা ভর্তি হতে পারে না। ঠিকাদারি ব্যবসায়, প্রচারমাধ্যমে, গ্রামপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের মধ্যে ব্যাপক সুবিধাবাদী শ্রেণির আগ্রাসনসহ জীবনের সকল পর্যায়েই সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। সিন্ডিকেট মানে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ লোকের ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য, আমলা, টাউট-বাটপারদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নানান অপকৌশল লক্ষ করা যায়।
ইতিহাসের সুদীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় যে কখনোই সৎ লোকদের ঐক্য হয় না। অত্যন্ত অবলীলায় বিশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিপরায়ণদের ঐক্য গড়ে ওঠে। একদা ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল রাজা-বাদশাহদের কাছে। ক্ষমতার খেলা চলত রাজপ্রাসাদে। সেখানেও সিন্ডিকেট হয়ে যেত সৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসৎ ব্যক্তিদের। ইতিহাসের একটা বড় শিক্ষা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কীভাবে মীরজাফর ইংরেজদের সঙ্গে দ্রুত সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশটাকে একটি কোম্পানির হাতে তুলে দিল। সেই থেকে ২০০ বছর একটা লুণ্ঠন-প্রক্রিয়া চলল। ভারতবর্ষকে সর্বস্বান্ত করে গড়ে উঠল ইংরেজের সাম্রাজ্য।
তারপর এ দেশে ইংরেজরা নানা রকম সিন্ডিকেট করেছে, শব্দটা তাদের নিজস্ব ভাষার। ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য বহু রকম সিন্ডিকেটের উদ্যোগ তারা নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও এই সিন্ডিকেটের কর্তাদের বিরাম নেই। তার বিপরীতে একটি শব্দই চালু হয়েছে—তা হলো, আঙুল ফুলে কলাগাছ। সিন্ডিকেটের মধ্যে যারা ঢুকে যায়, তাদের মধ্যে আর কোনো ধরনের বিবেচনা থাকে না। যেকোনো রাষ্ট্রীয় নিয়মে তারা ভাগ বসায়; বিশেষ করে সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে তারা বড় বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি একজন শিক্ষকের চাকরি ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় তারা বিক্রি করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল থেকে গ্রামের টাউট-বাটপার-দালাল সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
আবার এই বিপুল অর্থ কোথায় রাখা হবে? একটা উপায় হলো জায়গা-জমি কেনা, আরেকটি উপায় বিদেশে পাচার করা। বাংলাদেশের মতো এই সুযোগ আর কোথাও নেই। আগে বাংলাদেশের পুলিশকে দুর্নীতির জন্য এককভাবে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন তার জায়গায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ক্ষমতাবানেরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
একদা শিক্ষকতায় কর্মরত সেদিন এক মধ্যবিত্ত নারী তাঁর জীবনের দীর্ঘ বয়ান দিচ্ছিলেন। বয়ানটি ব্যক্তিগত জীবন থেকে তাঁর নানান বঞ্চনার কাহিনি। দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন, তাঁর মেধাও মধ্যম মানের। কারণ, ভালো কোনো স্কুলে তিনি পড়তে পারেননি, কোচিং করার সাধ্য ছিল না। বহু কষ্টে একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান, সেখানেও বেতন অনিয়মিত। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী ছিলেন বলে পড়ে যান এক ক্যাডারের হাতে। ক্যাডারের আয়ের উৎস তিনি জানতেন না। ঘরে নিয়মিত টাকা আসত, ছয় মাস যেতে না যেতে জড়িয়ে পড়েন এক বড় সিন্ডিকেটের হাতে।
এবারে নিয়মিত টাকা আর আসে না। তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং বছর না ঘুরতেই সন্তানের জননী হন। ক্যাডারটির সন্তানের প্রতি কোনো মমতা গড়ে ওঠে না; বরং ভালোবাসা গড়ে ওঠে আরেকজনের প্রতি, নিয়মিত বাসায়ও আসেন না। শোনা যায় তিনি আরেক ক্যাডারের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। সেই স্ত্রীর আছে তিনটি ছেলেমেয়ে। ক্যাডারের দামি মোটরসাইকেল আছে।
মোটরসাইকেলে করে মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরেন, নানান মাদকের নেশায় আসক্ত তিনি। কিছু টাকা ছুড়ে দিয়ে চলে যান। নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ত্রী এবং নবজাতককে শাসান। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, মাস, বছর—এমনি করেই পেরিয়ে যায় সময়। এবারে তাঁর প্রতি নজর দেন আরেক ক্যাডার। নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি বাবার বাড়ি চলে আসেন। দরিদ্র পিতা তাঁকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে থাকেন এবং সুবিচারের আশায় বড় ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁর স্বামী এমনই দুর্ধর্ষ ক্যাডার যে তাঁকে আর কেউ স্পর্শ করতে সাহস পায় না।
এবারে হতভাগ্য পিতা এলাকার থানার ওসির কাছে যান। ওসি বিষয়টি শোনার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বোঝা যায় তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এবারে তাঁর দুই বছরের নাতনিকে নিয়ে এলাকার কমিশনারের কাছে ধরনা দেন। এখানেই হয় বিপদ। সেখানে দেখা যায় ভেতরের ঘরে বসে আছেন তাঁর জামাতা। কমিশনার কোনো সুবিচারের পরামর্শ দিতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে হতভাগ্য পিতা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক বাইরে এসে তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যে পিতা বুঝতে পেরেছেন কোথাও তিনি সুবিচার পাবেন না।
এদিকে স্কুলেও নিরাপত্তার অভাবে ওই নারী অনিয়মিত হয়ে গেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর জায়গায় আরেকজনকে নিয়োগও দিয়ে দিয়েছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে। এবারে তাঁর সামনে আর কোনো পথ বাকি রইল না। গার্মেন্টসে চাকরি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তাঁর। তা-ও বড়সড় কোনো গার্মেন্টস নয়, একেবারে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টস, বেতনও সামান্য। সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার দুধটাই শুধু কেনা যায়।শিশুটিকে বাঁচাতে হলে দুধ কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, মায়ের বুকের দুধ তত দিনে শুকিয়ে গেছে।
সেই নারী এমন সিন্ডিকেটের বর্ণনা দিতে থাকেন। তিনি কিছুতেই ক্যাডারকে বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু সেখানে ছিল ক্যাডার সিন্ডিকেটের চাপ। তাঁর স্বামীর জীবনযাপন একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে আবদ্ধ। যে সিন্ডিকেটে কোনো মায়া নেই, মমতা নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু টাকা আর পেশিশক্তি। আজকাল আর পেশিশক্তিতে চলে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ অস্ত্র। আবার আরেকটি সিন্ডিকেট আছে, যে সিন্ডিকেটের নাম মাদক। শুধু নিজের মাদক সেবন নয়, বিপুল পরিমাণ তরুণের মাদকের জোগান দেওয়া; সেখানেও বিপুল অর্থ এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই নারীর স্বামী সেই সিন্ডিকেটেরও প্রিয় পাত্র। দু-চারবার তিনি জেলেও গিয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে মুক্তিও পেয়ে গেছেন।
একদিন সিন্ডিকেটপ্রধানের কাছ থেকে এক প্রস্তাব আসে—তাঁকেও (ওই নারীকে) অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাঁদের কাজকর্মে, প্রচুর টাকা তাঁদের। কী রকম একটা জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি রাজিও হয়ে যান। দু-চার দিন মাদক সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর স্বামী ব্যাপারটি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। এ নিয়ে সিন্ডিকেটপ্রধানের সঙ্গে তাঁর স্বামীর প্রবল দ্বন্দ্ব বাধে। সামান্য অস্ত্রের খেলাও হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটপ্রধান অস্ত্রের খেলা বাদ দিয়ে বুদ্ধির খেলায় অবতীর্ণ হন এবং প্রমাণসহ তাঁকে খুনের, মাদকের মামলায় জড়িয়ে নিরাপদে জেলে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেতে তাঁর সময় লাগে না। কারণ জেলে থেকেই আরেকটি সিন্ডিকেটের সন্ধান তিনি পেয়ে যান। এবারে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাজনৈতিক নেতার মর্যাদা নিয়ে। ইতিমধ্যে সেই নারীর পিতা গত হয়েছেন, পুরো সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। বাড়ির মালিক বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানেও বাড়ির মালিকদের আরেক ধরনের সিন্ডিকেট আছে—বাড়ি আরেকজনের কাছে ভাড়া হয়ে গেছে। এবারে তিনি ওই ছোট্ট গার্মেন্টসে আবার ফিরে আসেন। সেখানেও চাকরির দালালদের সিন্ডিকেট। বেতনের একটা অংশ তাঁকে দিতে হয়, তবে ওই সিন্ডিকেটের হৃদয়বান ব্যক্তিটি তাঁকে বস্তিতে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কিছুদিন পর বস্তিটিও উচ্ছেদ হয়ে গেল। আরেক সিন্ডিকেট বস্তির দায়িত্ব নিয়ে নিল, যেখানে প্রধান তাঁর স্বামী। একদিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে তাঁর স্বামী নতুন বস্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করত আসেন, তাঁর সন্তান দূর থেকে তাঁকে দেখে। এভাবেই নানান সিন্ডিকেটের ফলাফলে সেই নারীটি তাঁর সৌন্দর্য, ভালোবাসা, মমতা সবকিছু হারিয়ে একজন ক্যাডারের সন্তানকেই বুকে নিয়ে পথ চলছেন।
কাহিনিটি খুব চমকপ্রদ নয়। কারণ, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সিন্ডিকেটের প্রভাবে লক্ষ-কোটি মানুষ কোনোমতে তাদের জীবন ধারণ করছে।রাষ্ট্রের আইন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার—কোনো কিছুই সেই নারীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। যা কিছু দৃশ্যমান, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট। রাষ্ট্রের সীমিত সুযোগ, নাগরিকদের বঞ্চনার একটি শব্দই বারবার আমরা শুনতে পাই তা হলো—সিন্ডিকেট।
বাসভাড়া বাড়ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না, স্কুল-কলেজে শিশুরা ভর্তি হতে পারে না। ঠিকাদারি ব্যবসায়, প্রচারমাধ্যমে, গ্রামপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের মধ্যে ব্যাপক সুবিধাবাদী শ্রেণির আগ্রাসনসহ জীবনের সকল পর্যায়েই সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। সিন্ডিকেট মানে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ লোকের ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য, আমলা, টাউট-বাটপারদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নানান অপকৌশল লক্ষ করা যায়।
ইতিহাসের সুদীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় যে কখনোই সৎ লোকদের ঐক্য হয় না। অত্যন্ত অবলীলায় বিশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিপরায়ণদের ঐক্য গড়ে ওঠে। একদা ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল রাজা-বাদশাহদের কাছে। ক্ষমতার খেলা চলত রাজপ্রাসাদে। সেখানেও সিন্ডিকেট হয়ে যেত সৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসৎ ব্যক্তিদের। ইতিহাসের একটা বড় শিক্ষা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কীভাবে মীরজাফর ইংরেজদের সঙ্গে দ্রুত সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশটাকে একটি কোম্পানির হাতে তুলে দিল। সেই থেকে ২০০ বছর একটা লুণ্ঠন-প্রক্রিয়া চলল। ভারতবর্ষকে সর্বস্বান্ত করে গড়ে উঠল ইংরেজের সাম্রাজ্য।
তারপর এ দেশে ইংরেজরা নানা রকম সিন্ডিকেট করেছে, শব্দটা তাদের নিজস্ব ভাষার। ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য বহু রকম সিন্ডিকেটের উদ্যোগ তারা নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও এই সিন্ডিকেটের কর্তাদের বিরাম নেই। তার বিপরীতে একটি শব্দই চালু হয়েছে—তা হলো, আঙুল ফুলে কলাগাছ। সিন্ডিকেটের মধ্যে যারা ঢুকে যায়, তাদের মধ্যে আর কোনো ধরনের বিবেচনা থাকে না। যেকোনো রাষ্ট্রীয় নিয়মে তারা ভাগ বসায়; বিশেষ করে সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে তারা বড় বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি একজন শিক্ষকের চাকরি ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় তারা বিক্রি করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল থেকে গ্রামের টাউট-বাটপার-দালাল সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
আবার এই বিপুল অর্থ কোথায় রাখা হবে? একটা উপায় হলো জায়গা-জমি কেনা, আরেকটি উপায় বিদেশে পাচার করা। বাংলাদেশের মতো এই সুযোগ আর কোথাও নেই। আগে বাংলাদেশের পুলিশকে দুর্নীতির জন্য এককভাবে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন তার জায়গায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ক্ষমতাবানেরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
একদা শিক্ষকতায় কর্মরত সেদিন এক মধ্যবিত্ত নারী তাঁর জীবনের দীর্ঘ বয়ান দিচ্ছিলেন। বয়ানটি ব্যক্তিগত জীবন থেকে তাঁর নানান বঞ্চনার কাহিনি। দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন, তাঁর মেধাও মধ্যম মানের। কারণ, ভালো কোনো স্কুলে তিনি পড়তে পারেননি, কোচিং করার সাধ্য ছিল না। বহু কষ্টে একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান, সেখানেও বেতন অনিয়মিত। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী ছিলেন বলে পড়ে যান এক ক্যাডারের হাতে। ক্যাডারের আয়ের উৎস তিনি জানতেন না। ঘরে নিয়মিত টাকা আসত, ছয় মাস যেতে না যেতে জড়িয়ে পড়েন এক বড় সিন্ডিকেটের হাতে।
এবারে নিয়মিত টাকা আর আসে না। তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং বছর না ঘুরতেই সন্তানের জননী হন। ক্যাডারটির সন্তানের প্রতি কোনো মমতা গড়ে ওঠে না; বরং ভালোবাসা গড়ে ওঠে আরেকজনের প্রতি, নিয়মিত বাসায়ও আসেন না। শোনা যায় তিনি আরেক ক্যাডারের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। সেই স্ত্রীর আছে তিনটি ছেলেমেয়ে। ক্যাডারের দামি মোটরসাইকেল আছে।
মোটরসাইকেলে করে মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরেন, নানান মাদকের নেশায় আসক্ত তিনি। কিছু টাকা ছুড়ে দিয়ে চলে যান। নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ত্রী এবং নবজাতককে শাসান। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, মাস, বছর—এমনি করেই পেরিয়ে যায় সময়। এবারে তাঁর প্রতি নজর দেন আরেক ক্যাডার। নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি বাবার বাড়ি চলে আসেন। দরিদ্র পিতা তাঁকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে থাকেন এবং সুবিচারের আশায় বড় ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁর স্বামী এমনই দুর্ধর্ষ ক্যাডার যে তাঁকে আর কেউ স্পর্শ করতে সাহস পায় না।
এবারে হতভাগ্য পিতা এলাকার থানার ওসির কাছে যান। ওসি বিষয়টি শোনার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বোঝা যায় তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এবারে তাঁর দুই বছরের নাতনিকে নিয়ে এলাকার কমিশনারের কাছে ধরনা দেন। এখানেই হয় বিপদ। সেখানে দেখা যায় ভেতরের ঘরে বসে আছেন তাঁর জামাতা। কমিশনার কোনো সুবিচারের পরামর্শ দিতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে হতভাগ্য পিতা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক বাইরে এসে তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যে পিতা বুঝতে পেরেছেন কোথাও তিনি সুবিচার পাবেন না।
এদিকে স্কুলেও নিরাপত্তার অভাবে ওই নারী অনিয়মিত হয়ে গেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর জায়গায় আরেকজনকে নিয়োগও দিয়ে দিয়েছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে। এবারে তাঁর সামনে আর কোনো পথ বাকি রইল না। গার্মেন্টসে চাকরি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তাঁর। তা-ও বড়সড় কোনো গার্মেন্টস নয়, একেবারে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টস, বেতনও সামান্য। সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার দুধটাই শুধু কেনা যায়।শিশুটিকে বাঁচাতে হলে দুধ কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, মায়ের বুকের দুধ তত দিনে শুকিয়ে গেছে।
সেই নারী এমন সিন্ডিকেটের বর্ণনা দিতে থাকেন। তিনি কিছুতেই ক্যাডারকে বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু সেখানে ছিল ক্যাডার সিন্ডিকেটের চাপ। তাঁর স্বামীর জীবনযাপন একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে আবদ্ধ। যে সিন্ডিকেটে কোনো মায়া নেই, মমতা নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু টাকা আর পেশিশক্তি। আজকাল আর পেশিশক্তিতে চলে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ অস্ত্র। আবার আরেকটি সিন্ডিকেট আছে, যে সিন্ডিকেটের নাম মাদক। শুধু নিজের মাদক সেবন নয়, বিপুল পরিমাণ তরুণের মাদকের জোগান দেওয়া; সেখানেও বিপুল অর্থ এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই নারীর স্বামী সেই সিন্ডিকেটেরও প্রিয় পাত্র। দু-চারবার তিনি জেলেও গিয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে মুক্তিও পেয়ে গেছেন।
একদিন সিন্ডিকেটপ্রধানের কাছ থেকে এক প্রস্তাব আসে—তাঁকেও (ওই নারীকে) অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাঁদের কাজকর্মে, প্রচুর টাকা তাঁদের। কী রকম একটা জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি রাজিও হয়ে যান। দু-চার দিন মাদক সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর স্বামী ব্যাপারটি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। এ নিয়ে সিন্ডিকেটপ্রধানের সঙ্গে তাঁর স্বামীর প্রবল দ্বন্দ্ব বাধে। সামান্য অস্ত্রের খেলাও হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটপ্রধান অস্ত্রের খেলা বাদ দিয়ে বুদ্ধির খেলায় অবতীর্ণ হন এবং প্রমাণসহ তাঁকে খুনের, মাদকের মামলায় জড়িয়ে নিরাপদে জেলে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেতে তাঁর সময় লাগে না। কারণ জেলে থেকেই আরেকটি সিন্ডিকেটের সন্ধান তিনি পেয়ে যান। এবারে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাজনৈতিক নেতার মর্যাদা নিয়ে। ইতিমধ্যে সেই নারীর পিতা গত হয়েছেন, পুরো সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। বাড়ির মালিক বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানেও বাড়ির মালিকদের আরেক ধরনের সিন্ডিকেট আছে—বাড়ি আরেকজনের কাছে ভাড়া হয়ে গেছে। এবারে তিনি ওই ছোট্ট গার্মেন্টসে আবার ফিরে আসেন। সেখানেও চাকরির দালালদের সিন্ডিকেট। বেতনের একটা অংশ তাঁকে দিতে হয়, তবে ওই সিন্ডিকেটের হৃদয়বান ব্যক্তিটি তাঁকে বস্তিতে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কিছুদিন পর বস্তিটিও উচ্ছেদ হয়ে গেল। আরেক সিন্ডিকেট বস্তির দায়িত্ব নিয়ে নিল, যেখানে প্রধান তাঁর স্বামী। একদিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে তাঁর স্বামী নতুন বস্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করত আসেন, তাঁর সন্তান দূর থেকে তাঁকে দেখে। এভাবেই নানান সিন্ডিকেটের ফলাফলে সেই নারীটি তাঁর সৌন্দর্য, ভালোবাসা, মমতা সবকিছু হারিয়ে একজন ক্যাডারের সন্তানকেই বুকে নিয়ে পথ চলছেন।
কাহিনিটি খুব চমকপ্রদ নয়। কারণ, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সিন্ডিকেটের প্রভাবে লক্ষ-কোটি মানুষ কোনোমতে তাদের জীবন ধারণ করছে।রাষ্ট্রের আইন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার—কোনো কিছুই সেই নারীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। যা কিছু দৃশ্যমান, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট। রাষ্ট্রের সীমিত সুযোগ, নাগরিকদের বঞ্চনার একটি শব্দই বারবার আমরা শুনতে পাই তা হলো—সিন্ডিকেট।
বাসভাড়া বাড়ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না, স্কুল-কলেজে শিশুরা ভর্তি হতে পারে না। ঠিকাদারি ব্যবসায়, প্রচারমাধ্যমে, গ্রামপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের মধ্যে ব্যাপক সুবিধাবাদী শ্রেণির আগ্রাসনসহ জীবনের সকল পর্যায়েই সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। সিন্ডিকেট মানে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ লোকের ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য, আমলা, টাউট-বাটপারদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নানান অপকৌশল লক্ষ করা যায়।
ইতিহাসের সুদীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় যে কখনোই সৎ লোকদের ঐক্য হয় না। অত্যন্ত অবলীলায় বিশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিপরায়ণদের ঐক্য গড়ে ওঠে। একদা ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল রাজা-বাদশাহদের কাছে। ক্ষমতার খেলা চলত রাজপ্রাসাদে। সেখানেও সিন্ডিকেট হয়ে যেত সৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসৎ ব্যক্তিদের। ইতিহাসের একটা বড় শিক্ষা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কীভাবে মীরজাফর ইংরেজদের সঙ্গে দ্রুত সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশটাকে একটি কোম্পানির হাতে তুলে দিল। সেই থেকে ২০০ বছর একটা লুণ্ঠন-প্রক্রিয়া চলল। ভারতবর্ষকে সর্বস্বান্ত করে গড়ে উঠল ইংরেজের সাম্রাজ্য।
তারপর এ দেশে ইংরেজরা নানা রকম সিন্ডিকেট করেছে, শব্দটা তাদের নিজস্ব ভাষার। ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য বহু রকম সিন্ডিকেটের উদ্যোগ তারা নিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও এই সিন্ডিকেটের কর্তাদের বিরাম নেই। তার বিপরীতে একটি শব্দই চালু হয়েছে—তা হলো, আঙুল ফুলে কলাগাছ। সিন্ডিকেটের মধ্যে যারা ঢুকে যায়, তাদের মধ্যে আর কোনো ধরনের বিবেচনা থাকে না। যেকোনো রাষ্ট্রীয় নিয়মে তারা ভাগ বসায়; বিশেষ করে সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে তারা বড় বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি একজন শিক্ষকের চাকরি ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকায় তারা বিক্রি করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল থেকে গ্রামের টাউট-বাটপার-দালাল সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
আবার এই বিপুল অর্থ কোথায় রাখা হবে? একটা উপায় হলো জায়গা-জমি কেনা, আরেকটি উপায় বিদেশে পাচার করা। বাংলাদেশের মতো এই সুযোগ আর কোথাও নেই। আগে বাংলাদেশের পুলিশকে দুর্নীতির জন্য এককভাবে দায়ী করা হতো। কিন্তু এখন তার জায়গায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে সিন্ডিকেট করে লাখ লাখ জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা ক্ষমতাবানেরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
একদা শিক্ষকতায় কর্মরত সেদিন এক মধ্যবিত্ত নারী তাঁর জীবনের দীর্ঘ বয়ান দিচ্ছিলেন। বয়ানটি ব্যক্তিগত জীবন থেকে তাঁর নানান বঞ্চনার কাহিনি। দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে কষ্ট করে পড়ালেখা করেছেন, তাঁর মেধাও মধ্যম মানের। কারণ, ভালো কোনো স্কুলে তিনি পড়তে পারেননি, কোচিং করার সাধ্য ছিল না। বহু কষ্টে একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান, সেখানেও বেতন অনিয়মিত। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী ছিলেন বলে পড়ে যান এক ক্যাডারের হাতে। ক্যাডারের আয়ের উৎস তিনি জানতেন না। ঘরে নিয়মিত টাকা আসত, ছয় মাস যেতে না যেতে জড়িয়ে পড়েন এক বড় সিন্ডিকেটের হাতে।
এবারে নিয়মিত টাকা আর আসে না। তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং বছর না ঘুরতেই সন্তানের জননী হন। ক্যাডারটির সন্তানের প্রতি কোনো মমতা গড়ে ওঠে না; বরং ভালোবাসা গড়ে ওঠে আরেকজনের প্রতি, নিয়মিত বাসায়ও আসেন না। শোনা যায় তিনি আরেক ক্যাডারের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। সেই স্ত্রীর আছে তিনটি ছেলেমেয়ে। ক্যাডারের দামি মোটরসাইকেল আছে।
মোটরসাইকেলে করে মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরেন, নানান মাদকের নেশায় আসক্ত তিনি। কিছু টাকা ছুড়ে দিয়ে চলে যান। নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ত্রী এবং নবজাতককে শাসান। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, মাস, বছর—এমনি করেই পেরিয়ে যায় সময়। এবারে তাঁর প্রতি নজর দেন আরেক ক্যাডার। নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি বাবার বাড়ি চলে আসেন। দরিদ্র পিতা তাঁকে আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে থাকেন এবং সুবিচারের আশায় বড় ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁর স্বামী এমনই দুর্ধর্ষ ক্যাডার যে তাঁকে আর কেউ স্পর্শ করতে সাহস পায় না।
এবারে হতভাগ্য পিতা এলাকার থানার ওসির কাছে যান। ওসি বিষয়টি শোনার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বোঝা যায় তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এবারে তাঁর দুই বছরের নাতনিকে নিয়ে এলাকার কমিশনারের কাছে ধরনা দেন। এখানেই হয় বিপদ। সেখানে দেখা যায় ভেতরের ঘরে বসে আছেন তাঁর জামাতা। কমিশনার কোনো সুবিচারের পরামর্শ দিতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে হতভাগ্য পিতা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক বাইরে এসে তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যে পিতা বুঝতে পেরেছেন কোথাও তিনি সুবিচার পাবেন না।
এদিকে স্কুলেও নিরাপত্তার অভাবে ওই নারী অনিয়মিত হয়ে গেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর জায়গায় আরেকজনকে নিয়োগও দিয়ে দিয়েছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে। এবারে তাঁর সামনে আর কোনো পথ বাকি রইল না। গার্মেন্টসে চাকরি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তাঁর। তা-ও বড়সড় কোনো গার্মেন্টস নয়, একেবারে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টস, বেতনও সামান্য। সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার দুধটাই শুধু কেনা যায়।শিশুটিকে বাঁচাতে হলে দুধ কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, মায়ের বুকের দুধ তত দিনে শুকিয়ে গেছে।
সেই নারী এমন সিন্ডিকেটের বর্ণনা দিতে থাকেন। তিনি কিছুতেই ক্যাডারকে বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু সেখানে ছিল ক্যাডার সিন্ডিকেটের চাপ। তাঁর স্বামীর জীবনযাপন একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে আবদ্ধ। যে সিন্ডিকেটে কোনো মায়া নেই, মমতা নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু টাকা আর পেশিশক্তি। আজকাল আর পেশিশক্তিতে চলে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ অস্ত্র। আবার আরেকটি সিন্ডিকেট আছে, যে সিন্ডিকেটের নাম মাদক। শুধু নিজের মাদক সেবন নয়, বিপুল পরিমাণ তরুণের মাদকের জোগান দেওয়া; সেখানেও বিপুল অর্থ এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই নারীর স্বামী সেই সিন্ডিকেটেরও প্রিয় পাত্র। দু-চারবার তিনি জেলেও গিয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে মুক্তিও পেয়ে গেছেন।
একদিন সিন্ডিকেটপ্রধানের কাছ থেকে এক প্রস্তাব আসে—তাঁকেও (ওই নারীকে) অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাঁদের কাজকর্মে, প্রচুর টাকা তাঁদের। কী রকম একটা জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি রাজিও হয়ে যান। দু-চার দিন মাদক সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর স্বামী ব্যাপারটি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। এ নিয়ে সিন্ডিকেটপ্রধানের সঙ্গে তাঁর স্বামীর প্রবল দ্বন্দ্ব বাধে। সামান্য অস্ত্রের খেলাও হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটপ্রধান অস্ত্রের খেলা বাদ দিয়ে বুদ্ধির খেলায় অবতীর্ণ হন এবং প্রমাণসহ তাঁকে খুনের, মাদকের মামলায় জড়িয়ে নিরাপদে জেলে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেতে তাঁর সময় লাগে না। কারণ জেলে থেকেই আরেকটি সিন্ডিকেটের সন্ধান তিনি পেয়ে যান। এবারে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাজনৈতিক নেতার মর্যাদা নিয়ে। ইতিমধ্যে সেই নারীর পিতা গত হয়েছেন, পুরো সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। বাড়ির মালিক বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানেও বাড়ির মালিকদের আরেক ধরনের সিন্ডিকেট আছে—বাড়ি আরেকজনের কাছে ভাড়া হয়ে গেছে। এবারে তিনি ওই ছোট্ট গার্মেন্টসে আবার ফিরে আসেন। সেখানেও চাকরির দালালদের সিন্ডিকেট। বেতনের একটা অংশ তাঁকে দিতে হয়, তবে ওই সিন্ডিকেটের হৃদয়বান ব্যক্তিটি তাঁকে বস্তিতে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কিছুদিন পর বস্তিটিও উচ্ছেদ হয়ে গেল। আরেক সিন্ডিকেট বস্তির দায়িত্ব নিয়ে নিল, যেখানে প্রধান তাঁর স্বামী। একদিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে তাঁর স্বামী নতুন বস্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করত আসেন, তাঁর সন্তান দূর থেকে তাঁকে দেখে। এভাবেই নানান সিন্ডিকেটের ফলাফলে সেই নারীটি তাঁর সৌন্দর্য, ভালোবাসা, মমতা সবকিছু হারিয়ে একজন ক্যাডারের সন্তানকেই বুকে নিয়ে পথ চলছেন।
কাহিনিটি খুব চমকপ্রদ নয়। কারণ, দৃশ্য এবং অদৃশ্য সিন্ডিকেটের প্রভাবে লক্ষ-কোটি মানুষ কোনোমতে তাদের জীবন ধারণ করছে।রাষ্ট্রের আইন, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার—কোনো কিছুই সেই নারীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। যা কিছু দৃশ্যমান, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ভেঙে যাওয়া সমাজব্যবস্থায় অস্থির নাগরিকদের আহাজারি এবং দুর্দশার মধ্যে একটি শব্দ বারবার বেরিয়ে আসছে, তা হচ্ছে সিন্ডিকেট। যেখানেই অস্থিরতা, দুর্নীতি, বিপুল অসাম্য, সেখানেই বারবার ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয় একটি শব্দ—সিন্ডিকেট।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫