Ajker Patrika

স্কুলসংকটে হয় না পড়ালেখা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
স্কুলসংকটে হয় না পড়ালেখা

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকটের কারণে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কোনো রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হলেও দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেকের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায়। জরিপ করে পিছিয়ে পড়া দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের তৈকাথাং মৌজায় ১০টি গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। এখানে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। কোনো রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনা করতে পারে না এসব এলাকার শিক্ষার্থী। কেউ কেউ শহরে পড়তে যেতে পারলেও অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকেই লেখাপড়ার ইতি টানে। জেলার প্রায় সব দুর্গম এলাকার একই চিত্র।

জেলায় ১২১টি মৌজায় গ্রামের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৮। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম। খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৯টি। এসব স্কুল মূলত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন সদরে অবস্থিত।

মাটিরাঙার দুর্গম তৈকাথাং আশা হফনং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুষ্পলিকা ত্রিপুরা, ‘আমাদের এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে ২০০০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের বেঞ্চও নেই। ফ্লোরে বসে শিশুরা পড়াশোনা করে। শিশুরা কোনো রকমে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে পারলেও মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় তারা পড়ালেখায় অগ্রসর হতে পারে না।’

বিদ্যালয়ের শিক্ষক মমতা ত্রিপুরা বলেন, ‘বাচ্চারা প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারে। এরপর যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন উপজেলা সদরে গিয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু বেশির ভাগই প্রাথমিকের গণ্ডিতে আটকে থাকে। তারা আর মাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারে না।’

খাগড়াছড়ি শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থার সংগঠক জয় ত্রিপুরা বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় আমরা জরিপ করে দেখেছি দুর্গম এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট রয়েছে। এ কারণে স্থানীয়দের উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। আমরা দাবি জানাই, স্থানীয়দের উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়গুলোকে সরকার পরবর্তীতে জাতীয়করণে করবে।’

দুর্গম এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পাঠদানের অনুমোদন, ভবন নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা।

উত্তম খীসা বলেন, ‘বিদ্যালয় সংকটের কারণে আমাদের এখানে ড্রপ-আউট হচ্ছে। তবে দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সেখানে অবকাঠামোসহ যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।’

এদিকে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জরিপ করে পাহাড়ের নির্দিষ্ট দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ জরিপ করে বের করতে হবে, দুর্গম এলাকায় কী পরিমাণ বিদ্যালয়ের সংকট রয়েছে। তারা পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলোতে বিশেষ একটা দূরত্বে বিদ্যালয় স্থাপন করবে। এ জন্য শুধু পার্বত্য এলাকার জন্য একটা বিশেষ প্রকল্প নেওয়া দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত