Ajker Patrika

মেঝে-বারান্দায় রোগীর ভিড়

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২২, ১৪: ২০
মেঝে-বারান্দায় রোগীর ভিড়

লক্ষ্মীপুরে গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার সদর হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে হাজারো মানুষ। শয্যাসংকটে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় কয়েক শ মানুষ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে পা ফেলার জায়গাও নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা প্রায় একই।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১০০। কিন্তু ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এর মধ্যে অনেক পদ শূন্য রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন সদর হাসপাতালে ভিড় করছে। আউটডোর-ইনডোরে মিলিয়ে প্রতিদিন হাজারো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে ৭০-৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।

১৬ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৭ দিনে ৫ শতাধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। একই অবস্থা রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি মাইমুনা আক্তারের মা শারমিন আক্তার বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে মেয়েটি। তাই সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতাল থেকে কয়েকটি ওষুধ দিলেও বাইর থেকে কিনতে হয় অধিকাংশ। হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থায় খুবই নাজুক। সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’

একই অভিযোগ করেছেন সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি শরীফ হোসেন ও গাইনি ওয়ার্ডের ভর্তি কহিনুর বেগম। তাঁদের অভিযোগ, একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ওয়ার্ডে শয্যা না থাকায় বারান্দায় ও মেঝেতে রোগীদের ভর্তি দিচ্ছে। এতে পা ফেলার জায়গাটুকুও নেই।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স মো. হারুনুর রশিদ জানান, সদর হাসপাতালে ১০টি শিশু শয্যা রয়েছে। অথচ সেখানে দৈনিক গড়ে ৮০-৯০টি শিশু ভর্তি থাকছে। শয্যার তুলনায় ভর্তি ১০ গুণ বেশি। এতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

জেলা বেসরকারি প্যাথলজি মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমানুর রহমান নোমান ও কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লিটন চন্দ্র দাস জানান, গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন সদর হাসপাতালে রোগীদের চাপ বাড়ছে। রোগীর অনুপাতে শয্যার সংকট রয়েছে। প্রতিটি বেডে একাধিক শিশুকে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মেঝে ও বারান্দায় রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ফলে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনেরাও রোগী হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. ইছমাইল হাসান বলেন, ‘বছরের অন্য সময়ের তুলনায় গত কয়েক দিন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দৈনিক ৭০-৮০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ থাকলেও জনবলের সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’

জেলা সিভিল সার্জন আহমেদ কবির জানান, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে কয়েক গুণ। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গরমের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে, আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে রোগীর চাপও কমে আসবে। প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে মনিটরিং। সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত