Ajker Patrika

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: বনানী ও মহাখালীতে যানজট বাড়ার শঙ্কা

সৌগত বসু, ঢাকা
Thumbnail image

আগামী ২ সেপ্টেম্বর আংশিক খুলে দেওয়া হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ দফায় উত্তরার কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৩টি সংযোগ সড়ক দিয়ে যান চলাচল করবে। মহাখালী ও বনানী অংশে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার দুটি র‍্যাম্প বন্ধ থাকলেও চালু থাকবে নামার র‍্যাম্পগুলো। এতে রাজধানীর ব্যস্ততম এই দুই এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গাড়ি নেমে যানজট বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 
যোগাযোগ খাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প চালুর আগেই শুরু হয়েছে এর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি বড় সুবিধা হলো, বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়া গাড়িগুলোকে মাঝপথে যানজটে পড়তে হবে না। তবে অসুবিধার দিক হচ্ছে, রাজধানীর ভেতরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে র‍্যাম্প থেকে গাড়ি নেমে যানজট বাড়িয়ে দেবে। 

কোথায় কোন র‍্যাম্প 
গত বুধবার ও গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়েটি শুরু হয়েছে বিমানবন্দরের বিপরীত পাশে কাওলা এলাকা থেকে। পাশেই আশুলিয়া-বিমানবন্দর এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আলাদা লেন রয়েছে। বিমানবন্দরের রেললাইন ঘেঁষে ওপরে উঠেছে এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা। এখানে একটি র‍্যাম্প ডান দিকে দিয়ে থার্ড টার্মিনালে নেমেছে। ঠিক বিপরীত পাশ থেকে আর একটা র‍্যাম্প সরাসরি থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই সংযোগগুলো পার হলেই একটি টোল প্লাজা। এরপর কুড়িলে দুটি র‍্যাম্প আছে। শেওড়া রেলগেটের সঙ্গেই পাশাপাশি দুটি র‍্যাম্প দিয়ে ওঠা-নামা করা যাবে। এখানেও উঠেই একটি টোল প্লাজা ও ওজন স্টেশন রয়েছে। এরপর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি র‍্যাম্প আছে, যেটি দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে আসা গাড়িগুলো নামতে পারবে। একই সঙ্গে ফার্মগেট থেকে আসা গাড়িগুলো নিচ দিয়ে যুক্ত একটি সংযোগ সেতুর মাধ্যমে সেখানে নামার র‍্যাম্পে যুক্ত হতে পারবে। আর অপর পাশে একটি র‍্যাম্প আছে, যেটি দিয়ে উঠে এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া যাবে। একটু সামনে আরেকটা র‍্যাম্প এসে নেমেছে, যেটি দিয়ে বনানী ও গুলশান-২-এর দিকে যাওয়া যাবে। পাশেই চেয়ারম্যানবাড়ি ও সড়ক ভবনের পাশে একটি ওঠার র‍্যাম্প যুক্ত হয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে। এটি আপাতত বন্ধ থাকবে, কারণ সেখানে কাজ এখনো চলছে। এরপর মহাখালী বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশে ওঠা ও নামার জন্য দুটি র‍্যাম্প আছে। এর মধ্যে ওঠার র‍্যাম্পটি আপাতত বন্ধ থাকবে। বিজয় সরণিতে দুটি র‍্যাম্প আছে। এই দুটি র‍্যাম্প বিজয় সরণির উড়াল সেতুতে যুক্ত হয়েছে। এই দুটি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে এক্সপ্রেসওয়েতে। উড়াল সড়কের সঙ্গে মিলিয়ে এগুলো করা হয়েছে। এরপর তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে একটি র‍্যাম্প নেমে গেছে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে।

র‍্যাম্পগুলোর আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, অনেক জায়গায় এখনো লাইট ও কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে। সেগুলো প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করছে ২৪ ঘণ্টা।

সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকেরা: 
শুরু ও শেষের র‍্যাম্প বাদ দিয়ে যেগুলো শহরের মধ্যে নেমেছে, সেখানে গাড়ির চাপ তৈরি হবে বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদেরা। বিশেষ করে বনানী ও মহাখালীতে যানজট বাড়ার আশঙ্কা আছে।

পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় যে গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে, সেগুলো এক ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। আর যে গাড়িগুলো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে র‍্যাম্প দিয়ে নামবে তা ওই অংশে একটা চাপ তৈরি করবে। যেখানে আগে থেকেই গাড়ির একটা জট আছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় পৌনে ৪ কোটি ট্রিপ তৈরি হয় প্রতিদিন। এর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ির ট্রিপ। এর অর্থ এই ৮ শতাংশের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। বাকি যারা সাধারণ মানুষ আছে, তাদের কোনো বিকল্প থাকছে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে যে গাড়িগুলা সরাসরি যাত্রাবাড়ীর দিকে যাবে, সেগুলোকে কোনো যানজট মোকাবিলা করতে হবে না। তবে বনানী ও মহাখালীর মতো ব্যস্ত রাস্তায় যে র‍্যাম্প নামানো হয়েছে সেখানে যানজট তৈরি হবে। পরিকল্পনা ছিল গাজীপুর থেকে সরাসরি গাড়িগুলো ঢাকার ওপর দিয়ে পার হয়ে চট্টগ্রাম সড়কে যাবে। তবে পরবর্তী সময়ে অনেকগুলো সংযোগ দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়।

সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এখন আর এই বিষয়ে বেশি কথা বলতে পারব না। তবে এটি উদ্বোধন হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। 
তিনি জানান, কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫টি ওঠা-নামার র‍্যাম্প থাকলেও খোলা হবে ১৩টি। মহাখালী ও বনানীর দুটি আপ (ওঠার) র‍্যাম্প আপাতত বন্ধ আছে।

২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত