Ajker Patrika

প্রাথমিক চিকিৎসা কমায় পঙ্গুত্বের হার

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী 
Thumbnail image

প্রাথমিক চিকিৎসা হলো আহত রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া। উদ্দেশ্য আঘাতের প্রভাব কমানো আর ভবিষ্যৎ পঙ্গু হওয়া রোধ করা। ভালো ফাস্ট এইড বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায়, পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা কমায়।

যা থাকা উচিত
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণে মৌলিক ফাস্ট এইড থাকতে হবে। মৌলিক ফাস্ট এইডকে এবিসি বলা হয়।

  • এয়ারওয়ে
  • ব্রিদিং
  • সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) 

ধরন
প্রাথমিক চিকিৎসা পাঁচ ধরনের—

  • কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন
  • রক্তক্ষরণ রোধ
  • পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা
  • শ্বাসরোধ হয়ে আসা থেকে রক্ষা করা
  • হাড় ভাঙায় চিকিৎসা 

চিকিৎসা দেওয়ার আগে সাত সূত্র

১. শান্ত ও স্থির থাকুন
২. নিজের নিরাপত্তা আগে
৩. ইমারজেন্সি রেসপন্স সিস্টেম
৪. আহত ব্যক্তিকে স্বস্তিতে রাখা
৫. কোনো রক্তক্ষরণ হলে বন্ধ করা
৬. ঘাড়, মাথা বা পিঠে ব্যথা রোগী নিশ্চল করা
৭. একটি ফাস্ট এইড কিট রাখা।

ফাস্ট এইড কিটে কী কী থাকতে হবে

  • বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টার (স্মল, মিডিয়াম, লার্জ সাইজের স্টিরাইল গজ ড্রেসিং)
  • ত্রিকোণ ব্যান্ডেজ
  • অন্তত দুটি স্টেরাইল আই ড্রেসিং
  • ক্রেপ রোল ব্যান্ডেজ
  • সেফটি পিন
  • ডিসপোজিবল স্টেরাইল গ্লাভস
  • টুইজার
  • সিজার
  • ক্লিঞ্জিং ওয়াইপস
  • স্টিকি টেপ
  • পোকা-পতঙ্গে দংশন উপশমের জন্য ক্রিম বা স্প্রে
  • অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম

ইমারজেন্সি মেডিকেল কিটে আরও কিছু যোগ করা যায়। এগুলো ভ্রমণ আর দুর্যোগে ব্যবহারের উপযোগী— সানস্ক্রিন, বাগ রিপেলেন্ট, ব্যান্ড এইড, আয়োডিন প্যাড, অ্যালকোহল প্যাড, বার্ন জেল, টাইনেনল, মোটরিন, বায়ার এসপিরিন, পেপটো বিসমল বমি না হওয়ার ওষুধ, থার্মোমিটার ইত্যাদি।

শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসায় 
প্রয়োজনীয় উপকরণ 
বাড়িতে শিশু থাকলে ওষুধের বাক্সে যেসব জিনিসপত্র রাখতে হবে— শিশুর নিয়মিত ওষুধপত্র; জ্বর, পেট খারাপ ও বমির জন্য ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক লোশন বা অয়েন্টমেন্ট, ওআরএস সল্যুশন, হ্যান্ড  স্যানিটাইজার। এ ছাড়া ছোট-বড় গোল নানা রকম ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক প্যাড তুলা, স্টেরাইল গজ, ব্যান্ডেজ, লিউকোপলাস্ট, কাঁচি, থার্মোমিটার, পেপার নাইফ, টুইজার।

প্রাথমিক চিকিৎসা
শুকনো কাশি: হালকা গরম পানিতে কিছুটা লবণ ফেলে দিন। এই পানি দিয়ে গারগিল করুন। এতে আরাম পাবেন এবং আপনার গলায় থাকা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। ঠান্ডা কোনো খাবার বা পানীয় খাবেন না। এতেও কাশি না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

জ্বর: একটি পরিষ্কার কাপড় নিয়ে ঠান্ডা পানিতে কাপড়টি ভিজিয়ে নিন। এবার সেই কাপড় কপালে কয়েক মিনিটের জন্য রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর এটি করতে থাকুন। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।

পুড়ে গেলে: বিভিন্নভাবে আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুড়ে যেতে পাড়ে। যেমন—আগুনের দ্বারা, প্রখর সূর্যতাপ, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি দ্বারা ত্বক পুড়ে গেলে—ক্ষতস্থান প্রায় পাঁচ মিনিট পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এর ফলে জ্বালা ভাব কিছুটা দূর হবে। অ্যালোভেরা ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ক্ষতস্থানের ওপর লাগান। হালকাভাবে একটি ব্যান্ডেজ বাঁধুন। তবে পুড়ে যাওয়ার ধরন বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অজ্ঞান হয়ে গেলে: আশপাশের কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তবে কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরই তার মাথা পেছনের দিকে সামান্য হেলিয়ে দিতে হবে, যেন মুখ খোলা থাকে। এতে শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্যান না থাকলে কাগজ বা যেকোনো বস্তু দিয়ে বাতাস করুন। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ ও ঘাড় মুছে দিতে থাকুন। খেয়াল রাখুন, ব্যক্তিটির শ্বাস চলছে কি না।

কেটে গেলে: ক্ষতস্থান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আঙুল নেড়ে ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে যে রগ কেটেছে কি না। রগ কাটা থাকলে বা সন্দেহ হলে, ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ড্রেসিং করে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত