Ajker Patrika

মাঠ না থাকায় মন খারাপ ১৪ স্কুলের শিক্ষার্থীদের

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
মাঠ না থাকায় মন খারাপ ১৪ স্কুলের শিক্ষার্থীদের

‘অন্যের ফুটবল খেলা দেখলে খুব খেলতে ইচ্ছে করে; কিন্তু খেলব কোথায়। বাসার আশপাশে ও বিদ্যালয়ে তো খেলার মাঠ নেই।’ মন খারাপ করে কথাগুলো বলছিল নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের চিনি মসজিদসংলগ্ন আমিনুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রশনি খাতুন (৮)।

শুধু রশনি নয়, এই উপজেলার ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার জন্য উন্মুক্ত মাঠ না থাকায় খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না শিশুরা।

টিফিন কিংবা বিরতির সময় শ্রেণিকক্ষে বসেই সময় পার করতে হয় শিক্ষার্থীদের। মাঠের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। এতে করে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শুরু থেকেই দুর্বলভাবে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকা ও পাঁচটি ইউনিয়নে ৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টিতে খেলার মাঠ নেই।

বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে গোলাহাট রেলওয়ে কলোনি, বাঙালিপুর রেলওয়ে কলোনি, নয়াবাজার, ইসলামিয়া, রাজ্জাকিয়া, ইত্তেহাদুল মুসলেমিন, কাজীপাড়া, কুমারগাড়ি, কুন্দল, কুমারপাড়া, নয়াটলা, আমিনুল হক, ফ্রি আমিন ও হিন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নিয়মানুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে ৩৩ শতক জায়গার প্রয়োজন। নতুন ভবন নির্মাণ করায় বা জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় এসব বিদ্যালয়ে আর খেলার মাঠ নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের উত্তরে ইসলামবাগ চিনি মসজিদসংলগ্ন আমিনুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচটি কক্ষের দুটি পাকা ভবন আছে; কিন্তু খেলার মাঠ নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান হোসেন আলম বলে, ‘অন্য স্কুলে খেলার মাঠ থাকলেও হামার স্কুলে নাই। মাঠ না থাকায় খেলতে পারি না। টিফিন হইলে ক্লাসত বসি থাকি।’ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরজিনা খাতুন বলে, ‘স্কুলের বারান্দা দিয়ে কষ্ট করি শ্রেণিকক্ষে যেতে হয়। খেলার মাঠ দূরের কথা।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে জায়গা না থাকায় শিশুদের খেলাধুলা করতে সমস্যা হচ্ছে। মাঠ তো দূরের কথা, শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে ২৫০ জন ছাত্রের একসঙ্গে পাঠদান করাটাই কষ্টকর।শহরের নতুন বাবুপাড়া এলাকার ইত্তেহাদুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫১ জন শিক্ষার্থীর জন্য দ্বিতল পাকা ভবন ও শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু খেলার মাঠ নেই। এমনকি অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য জায়গা নেই।

এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা পারভিন বলে, ‘টিভিতে দেখি মেয়েরা ফুটবল খেলে, ক্রিকেট খেলে। হামার খেলার জায়গা নাই, খেলতাম কোনটে।’

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈয়েদা আখতার বলেন, ‘মাঠের অভাবে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে না। ফলে তারা উপজেলা পর্যায়ের কোনো খেলায় অংশগ্রহণও করতে পারে না। জাতীয় সংগীত স্কুলের বারান্দায় গাইতে হয়।’

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন বলেন, চাইলেও উল্লিখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঠের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কেননা জায়গা নেই। তবে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে অন্য মাঠে সমন্বয় করে খেলাধুলা করতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মণ্ডল বলেন, ‘১৪টি বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকার বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ নিয়ে শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানের 
চেষ্টা চলছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত