বেসরকারি ক্লিনিক পরিচালনা-সংক্রান্ত যাবতীয় শর্ত পূরণ না হওয়ায় গত সপ্তাহে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে নওয়াবেকী বাজারের ফয়সাল আমিনসহ ৪টি ক্লিনিক সিলগালা করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ সময় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারি সে নির্দেশনা অমান্য করে প্রভাবশালী একটি মহলের সহায়তায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পুরোদমে কাজ শুরু করেছে।

ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া উপজেলার ছোট কুপোট গ্রামের হেলাল হোসেন ও সালমা খাতুন দম্পতি তাঁদের সদ্যভূমিষ্ঠ এক সন্তানকে হারিয়েছেন। যমজ দুই শিশুর অপরজন গতকাল রাত পর্যন্ত জীবিত থাকলেও তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। গত মঙ্গলবার বেলা বারোটার দিকে শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী বাজারসংলগ্ন ফয়সাল আমিন ক্লিনিকে এ সিজার হয়। যমজ দুই শিশুর একজনের মৃত্যু হলে অপরজনকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের দ্রুত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

এদিকে গতকাল দুপুরের পর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার বিপ্লব কুমার দে ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঘটনাস্থল ফয়সাল আমিন ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় কর্তৃপক্ষ ক্লিনিক পরিচালনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ক্লিনিক আবার সিলগালা করে দেন। ক্লিনিকের পরিচালক ফয়সাল আমিনকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে অবৈধভাবে ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগে ক্লিনিক পরিচালককে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

যদিও শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার বিপ্লব কুমার দে জানান, অনুমোদন না থাকার অভিযোগে কয়েক দিন আগে ফয়সাল আমিন ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছিল। তবে কর্তৃপক্ষের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিচালনার সঙ্গে জড়িতরা গোপনে আবারও কার্যক্রম শুরু করে। সিভিল সার্জন ওই ক্লিনিকের ব্যাপারে যেই সিদ্ধান্ত দেবেন সেই মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ওই ক্লিনিকের আকলিমা খাতুন নামের একজন নিজেকে সেবিকা পরিচয় দিয়ে জানান, মাত্র ৪ দিন আগে এম আর ক্লিনিকে এপেনডিক্স অপারেশন করতে গিয়ে এক শিশুকে মেরে ফেলা ডাক্তার আনিসুর রহমান গত মঙ্গলবার তাঁদের ক্লিনিকে সালমা খাতুন নামের ওই প্রসূতির সিজার করেন। সন্তানের অবস্থা খারাপ ছিল নাকি ভালো ছিল সেটা ডাক্তাররাই বলতে পারবে। তবে একটি বাচ্চা মারা যাওয়ার পর অপর শিশুকে নিয়ে প্রসূতির সঙ্গে দ্রুত তাঁদের সাতক্ষীরা মেডিকেলে এ নিয়ে যাওয়া নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলেও তিনি জানান।

ক্লিনিক পরিচালক ও মালিক ফয়সাল আমিন বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে এখন আমি কথা বলব না। এসিল্যান্ডের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছি। আপনাদের প্রয়োজন থাকলে পরবর্তী দিন আমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করবেন।’

এ বিষয়ে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি বাচ্চা মৃত অবস্থায় প্রসব হয়। অপর বাচ্চাটা জন্মের পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।’ অনুমোদনহীন একটি ক্লিনিকে এভাবে অপারেশন করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমার সিনিয়ররা যদি অপারেশন করতে পারে, তাহলে আমার কাজ করতে বাধা কোথায়।’

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার হোসেন সাফায়েত জানান, কয়েক দিন আগে সিলগালা করা সত্ত্বেও এমন একটি ক্লিনিক আবারও সচল করে চিকিৎসা সেবার নামে সেখানে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমার একার পক্ষে যতটা সম্ভব পুরো উপজেলায় অভিযান চালাচ্ছি।