Ajker Patrika

বোরো মৌসুমে লোডশেডিং, সেচ নিয়ে বিপাকে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো খেতে সেচ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন জেলার কৃষক। তাঁরা বলছেন, সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ধান উৎপাদন কম হবে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাতে সেচ নিয়ে সমস্যার অভিযোগ তারা পায়নি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে সেচে বেশি সমস্যা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। নওগাঁর বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিভিন্ন খেতে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো জমিতে সেচ কার্যক্রম চলছে। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক গভীর নলকূপ বন্ধ। ফলে অনেক জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে কোনো কোনো খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

নওগাঁর বদলগাছীর কৃষক আবু সাইদ বলেন, ‘একটু পরপর বিদ্যুৎ যায় আর আসে। গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় জমি ঠিকমতো ভেজানো যাচ্ছে না। এ সময় পানি ঠিকমতো না দিলে ফলন খুব কম হবে।’

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ কার্যালয় সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। সমিতি-১-এর বদলগাছী জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আহসান হাবিব বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ পেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

ঠাকুরগাঁওয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে অনে‌ক কৃষক নিরুপায় হয়ে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে সেচ দিচ্ছেন। এতে খরচ বেশি পড়ছে। সদ‌র উপজেলার জগন্নাথপুরের কৃষক আবুল খা‌য়ের ব‌লেন, মৌসুমের শুরুতে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ধান লাগাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন ঘন ঘন লোডশেডিং। ভা‌লো ফলন নি‌য়ে চিন্তায় আছেন।

দিনাজপুরের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সেচ নিয়ে কৃষকদের ভাবতে হয়নি। কিন্তু গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেচের প্রয়োজন হয়েছে। কৃষকেরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় রাত জেগে জমিতে পানি দিতে হচ্ছে। রাতেও লোডশেডিং হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। আবার লো-ভোল্টেজের কারণে মেশিনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার সেচযন্ত্র রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংকটে যন্ত্রগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারছে না। পানির অভাবে অনেকের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার ২৫ জন সেচযন্ত্রের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সেচ ব্যাহত হচ্ছে। তাই তাঁরা বোরোর বাম্পার ফলনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার দাবি জানান।

লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে সমস্যায় আছেন নাটোরের চলনবিলের কৃষকেরাও। তাঁরা বলছেন, পানির অভাবে শিষের ডগায় ধানের দানা বাড়ছে না। সিংড়া উপজেলার সাতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আসাদ আলী বলেন, ‘১৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এটাই বছরের একমাত্র চাষ। অথচ ঠিকমতো সেচ দিতে পারছি না।’

তবে উত্তরাঞ্চলের আরেক জেলা বগুড়ায় লোডশেডিং থাকলেও সেচ নিয়ে সমস্যা নেই। চাঁদপুরেও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন জেলার কৃষকেরা।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন সেচ দেওয়ার কথা, তখন লোডশেডিং হচ্ছে, এমন অভিযোগ পাইনি। আমাদের নির্দেশনা রয়েছে রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যেন সেচ দেয়। কারণ, এ সময় কলকারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের চাপ কম থাকে।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, বগুড়া ও চাঁদপুর প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত