Ajker Patrika

বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা

মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
Thumbnail image

প্রায় পনেরো বছর আগে ষাটোর্ধ্ব আমেনার স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়েদের কেউ তাঁর খোঁজ রাখেন না। ভিক্ষা করে চলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আমেনা। অসুস্থতার এক সপ্তাহের মাথায় লাঠিতে ভর দিয়ে বের হন খাবারের খোঁজে। পাশের কানি চড়িতাবাড়ি গ্রামের হায়দার আলীর বাড়ির উঠানে লোকজনের ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে যান তিনি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন শহর থেকে বড় ডাক্তার এসেছেন ফ্রি চিকিৎসা দিতে। লাইনে দাঁড়িয়ে যান আমেনা। সেখান থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমেনার মতো উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভার হাজারো মানুষ এমন বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন চার বছর ধরে।

১৯১৮ সালের ১ মার্চ থেকে স্থানীয় মানুষের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার এ কাজটি করছেন স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

শুরুতে দুজন চিকিৎসক থাকলেও এখন কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন একজন চিকিৎসক। গত প্রায় চার বছরে আনুমানিক ৫০ হাজার রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম। ওষুধপত্রের পাশাপাশি এ প্রকল্পের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ২৪ ঘণ্টা বিনা মূল্যে রোগী পরিবহন করে। সেই সঙ্গে ‘পল্লীবন্ধু হসপিটাল’ নামে একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হবে আগামী বছরের যেকোনো সময়।

প্রকল্পটির চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোনারায় ইউনিয়নে সপ্তাহের প্রতি রোববার রোগী দেখা হয়। অন্যান্য ইউনিয়ন ও পৌরসভার জন্যও রয়েছে আলাদা সময়। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে তুলনামূলক নারী রোগীর সংখ্যা বেশি হয়। ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় কোনো পরীক্ষা দেওয়া হয় না। শুধু জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা দেওয়া হয়। সেসব পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে তবেই চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয় বলে জানান ডা. রফিকুল ইসলাম।

কোথায় কোন দিন চিকিৎসক রোগী দেখবেন প্রকল্পটি শুরুর দিকে এ বিষয়ে মাইকিং করা হতো। গত চার বছরে এখন আর তা দরকার হয় না। এত দিনে সবাই জেনে গেছে কবে, কোথায় গেলে চিকিৎসক পাওয়া যাবে। এ প্রকল্পটির আওতায় প্রতিটি ক্যাম্পে একজন করে লিডার আছেন। নির্ধারিত দিনের আগের দিন ক্যাম্পলিডারকে জানিয়ে দেওয়া হয় বিস্তারিত। ক্যাম্পলিডারই সব ব্যবস্থা করেন। যত দিন যাচ্ছে রোগীর চাপ ততই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম।

১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে চলছে এ প্রকল্পের কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়। পৌর শহরে আসতে হলে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয় সেসব এলাকার মানুষের। সড়ক যোগাযোগের অবস্থা করুণ। নৌকা আর ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র ভরসা তাদের। সংগত কারণে কেউ অসুস্থ হলে ভীষণ বিপদে পড়তে হয় রোগী ও রোগীর স্বজনদের। মূলত এসব কারণে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান প্রকল্পটির উদ্যোক্তা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত