Ajker Patrika

‘কিবা করে ভোট দিমু কেউ বুঝাইয়া দেয় নাই’

­শহিদুল ইসলাম, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ১৭
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের সাত ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ষষ্ঠ ধাপে আগামী সোমবার ভোট গ্রহণ হবে। উপজেলার সব ইউপিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। ইভিএমে ভোট গ্রহণ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, তা নিয়ে অনেক প্রার্থীই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেক সাধারণ ভোটার চিন্তা করছেন, কীভাবে তাঁরা যান্ত্রিক উপায়ে ভোট দেবেন।

এদিকে ইভিএমে ভোট নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তাঁদের কথা, ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

ইভিএম নিয়ে বেশির ভাগ প্রার্থীর শঙ্কা থাকলেও শেষ মুহূর্তের প্রচারে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তাঁরা। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। উপজেলার সাত ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৩ জন, সাধারণ ইউপি সদস্য পদে ২৪২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৬৩ ওয়ার্ডের প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে কীভাবে ভোট দিতে হবে সে বিষয়ে প্রার্থী, ভোটার-সমর্থকদের কোনো ধারণা নেই। এ কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে, বিশেষ করে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ, অক্ষরজ্ঞান নেই এমন লোকজন শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।

প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরাও ইভিএমে কেমন করে ভোট দিতে হবে, তা সাধারণ ভোটারদের বোঝাতে পারছেন না। তবে নির্বাচন কমিশন আজ শনিবার ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা শেখানোর জন্য ছায়া-ভোটের আয়োজন করেছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে উপজেলার তেওতা ইউপির নয়টি ওয়ার্ডের তিনটি যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে থাকায় সেখানে ইভিএমে ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। কারণ, এ চরাঞ্চলে নেই কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থা। আবার চরাঞ্চলের অধিকাংশ ভোটারের নেই অক্ষরজ্ঞান।

তেওতা চরাঞ্চলের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার নাজিম ফকির বলেন, ‘আমরা আগে কোনো দিন মেশিনে ভোট দেই নাই। ভোটের মেশিন কিম্বা (কেমন), তা-ও দেহি নাই। কিবা করে ভোট দিমু, তাও আমাগো কেউ বুঝাইয়া দেয় নাই।’

শিবালয় মডেল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বাবুল আকতার মঞ্জুর বলেন, ভোটের আনন্দে মেতে উঠেছেন সাধারণ ভোটাররা। দীর্ঘদিন পর উৎসবের আমেজে মানুষ ভোট দিতে বেশ আগ্রহী। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া।

একই ইউনিয়নের মিনা ইসলাম বলেন, মেশিনে কীভাবে ভোট দিতে হবে, এটা অনেকেই ঠিকমতো জানেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও সংশয় দূর হতো।

শিবালয়ের উলাইল ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইভিএম সফলভাবে ব্যবহার করতে পারলে ভালো। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কারচুপি হবে না এমন নিশ্চয়তা কে দেবে?’

একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী মজিবর রহমান বলেন, ‘ইভিএম আমাদের কাছে একটি নতুন প্রযুক্তি। এ সম্পর্কে এখনো সাধারণ মানুষের ধারণা বা বিশ্বাস তৈরি হয়নি। অনেকেই তার ভোট দিতে ভুল করবে। এর মধ্যে কোনো রকম কারচুপি হলেও প্রমাণ করা যাবে না।’

এদিকে ইভিএমে ভোট গ্রহণে ভোট নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে দ্রুত ফল ঘোষণা করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন আরুয়া ইউপির নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতারুজ্জামান খান মাসুম।

শিবালয় থানার ওসি মো. ফিরোজ কবির বলেন, নির্বাচনে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন ঘিরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে কারচুপি বা পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই।

মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কে আগাম ধারণা দেওয়ার জন্য আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিবালয় উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটারদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এতে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোটিং মহড়ার মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের ভোট দেওয়ার পদ্বতি শিখিয়ে দেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত