Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ায় ‘আমি নয়, আমরা’র খেলা

রানা আব্বাস, ব্রিসবেন থেকে
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২২, ১১: ৫১
Thumbnail image

অস্ট্রেলিয়ায় বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হওয়া মানেই নিশ্চিত অনেক ‘প্রথমে’র জন্ম। ক্রিকেটে উদ্ভাবনী কত কিছুই যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দেশ উপহার দিয়েছে ক্রিকেটকে, নতুন করে বলার কিছু নেই।

ক্রিকেটের জনক যদি হয় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া খেলাটার সবচেয়ে পরিচর্যাকারী। আদ্যন্ত ক্রীড়ামনস্ক জাতি হিসেবে অস্ট্রেলীয়রা শ্রম, মেধা, উদ্ভাবন দিয়ে ক্রিকেটকে প্রতিনিয়ত নিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন শৃঙ্গে। ১৯৭১ সালে বৃষ্টির কবলে পড়া একটা টেস্ট ম্যাচের গর্ভ থেকে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ভূমিষ্ঠ হয়েছিল এক দিনের ক্রিকেট। সাদা বলের ক্রিকেটকে আরও বৈচিত্র্যময়, আকর্ষণীয় আর রঙিন করে তুলতেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ক্রিকেটের অনেক ঋণ।

সত্তরের দশকে ক্যারি প্যাকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ কাপ নিয়ে যত বিতর্কই থাক, ক্রিকেটে পেশাদারি মনোভাবের সৃষ্টিও তো এই অস্ট্রেলিয়া থেকে। আর ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখেছিল বিপুল বিস্ময় নিয়ে। ক্রিকেটারদের গায়ে নামসহ রঙিন জার্সি, দুই প্রান্তে সাদা বল, কালো সাইটস্ক্রিন, প্রথম ১৫ ওভারে ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা, ফ্লাডলাইটের আলোয় ক্রিকেট দিয়েছিল অনাস্বাদিত মাদকতা।

সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচি, চাহিদা, ভাবনা বদলায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে সময়ের সঙ্গে দৌড়াতে দক্ষিণ গোলার্ধের বিশাল দেশটি বরাবরই তুলনারহিত।

এখন যেমন মানুষের কাছে টি-টোয়েন্টি সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্রিকেট হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়া এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুগ্ধ করছে ক্রিকেটে নতুন নতুন বিষয় উপহার দিয়ে।

টি-টোয়েন্টিতে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যতই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) হোক, উদ্ভাবনে যে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশই এগিয়ে, দ্বিমত করার লোক কমই পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ক্রিকেটবিশ্ব প্রথম দেখেছে এলইডি স্টাম্প, হেলমেটে ক্যামেরা, রঙিন মোড়কে মোড়ানো পুরো ব্যাট, ‘এক্স-ফ্যাক্টর’, ‘পাওয়ার সার্জ’ কিংবা ‘ব্যাশ বুস্ট’।

তো প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করা অস্ট্রেলিয়া এবার কী কী প্রথমের জন্ম দিচ্ছে? সপ্তাহখানেক আগে টুর্নামেন্টের শুরুতে মেলবোর্নেই হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ‘অধিনায়ক দিবস।’ টুর্নামেন্ট যত সামনে গড়াবে, এমন আরও প্রথম আর উদ্ভাবনী অনেক কিছুরই দেখা মিলবে নিশ্চয়ই।

তবে বাংলাদেশের কাছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে ‘প্রথম’টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছে ‘ডাউন আন্ডারে’। প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হলেও গত ১৪ বছরে কোনো টুর্নামেন্ট থেকেই হাসিমুখে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ কি পারবে অচলায়তন ভাঙতে?

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে যথেষ্ট কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে সাকিবদের। একেক ভেন্যুর একেক কন্ডিশন, একেক ধরনের উইকেট, বিশাল আকৃতির মাঠ তো আছেই; বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ দেয় না। তবে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের একটা কথা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে যখন বারবার ওপেনিং জুটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলেন, ‘দল হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।’

ফুটবল-ক্রিকেটের মতো দলীয় খেলায় ধারাবাহিক সাফল্য পেতে দল হিসেবেই খেলতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ভালো করতে এই কথা আরও বেশি সত্য। অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে ভালো করতে অনবদ্য ক্রিকেটীয় ঔদ্ধত্যের বিকল্প নেই। আর সেটি একজন-দুজন দিয়ে নয়, সম্ভব হয় শুধু দল হিসেবে খেললে। অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’র খেলা। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইমরান খানের পাকিস্তান এখান থেকে ট্রফি নিয়ে গিয়েছিল এই তত্ত্বের ওপর ভর করেই। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড অথবা নিউজিল্যান্ড কিংবা উপমহাদেশের কোনো দলের হাতে যদি এবারের শিরোপা ওঠে, সেটি জিততে হবে ওই একই দর্শনে। এমনকি ২০১৫ বিশ্বকাপে এই অস্ট্রেলিয়ায় মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল, সেটিও ‘মেটশিপ’-তত্ত্বে ভর করে।

অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের ভারতীয় কোচ শ্রীরাম তাই বারবার বলছেন, খেলতে হবে দল হিসেবে। শুধু সাকিব কিংবা এক-দুজন জ্বলে উঠলেই ব্র্যাডম্যানের দেশ থেকে ভালো স্মৃতি নিয়ে ফেরা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত