Ajker Patrika

চৌগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

আজিজুর রহমান, চৌগাছা
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ২১
চৌগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

চৌগাছার জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন নৌকা প্রতীক পাওয়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তবিবর রহমান খান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) আজাদ রহমান খান তাঁর আপন ভাতিজা।

গতকাল রোববার দুপুরে চৌগাছার সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের কার্যালয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজাদ রহমান খানকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন তবিবর রহমান খান।

তবে তিনি অভিমানে না পারিবারিক কোন্দলে সরে গেলেন, নাকি তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রে নৌকা প্রত্যাহার হলো বিষয়টি চৌগাছায় ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছে চৌগাছায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করেছেন।

এ দিকে দুপুরের পর থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে অন্য একটি ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। ওই প্রার্থী দুপুরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেন। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়া তবিববর রহমান খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে জগদীশপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবারও আমার প্রতি আস্থা রেখে দলীয় সভাপতি আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নিজের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনের আগেই আমাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হবে।’ তবে প্রার্থিতা থেকে সরিয়ে নিলেও তিনি রাজনীতিতে থাকছেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।

লিখিত বক্তব্যে তবিবর রহমান খান শারীরিক অসুস্থতার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে পরিবারের সম্প্রীতি বজায় রাখতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় নৌকার একটি পথসভা থেকে কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী ও তবিবর খানের আপন ভাতিজা আজাদ রহমান খানের অফিসে হামলা চালায়। এ সময় আজাদ রহমান খান ও তাঁর দুই সমর্থক গুরুতর জখম হন। রোববার সংবাদ সম্মেলনেও তিনি মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে চাচার পাশে বসে ছিলেন। তবিবর রহমান খান যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। তাঁর স্ত্রী সন্তানেরা সেখানেই থাকেন।

এর আগে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে নৌকা সমর্থকদের হামলায় বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁর দুই সমর্থকসহ আহত হয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে তিনি এ বিষয়ে চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও মামলা রেকর্ড হয়নি। একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যারও হুমকি দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে পরিবারের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বিষয়টি নিয়ে তবিবর রহমান খান উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। সর্বশেষ রোববার সকাল ১০ টায়ও বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তবিবর রহমান খান বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী হিসেবে কাউকে সমর্থন দিতে পারি না। শারীরিক কারণে নিজেকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নিয়েছি। ৯ নভেম্বর আমেরিকা চলে যাব।’

পাশে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাতিজাকে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের ভুল বোঝাবুঝি থেকে ইউনিয়নের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছিল।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি এটা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মনে করছি। প্রিয় নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওখানে চেয়ারম্যান। বারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত