Ajker Patrika

উন্নয়নের নগরে তবু আক্ষেপ

রাশেদ নিজাম, খুলনা থেকে
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯: ১১
উন্নয়নের নগরে তবু আক্ষেপ

যাঁরা দীর্ঘদিন বিভাগীয় শহর খুলনায় আসেননি, তাঁদের জন্য পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো। বড় রাস্তাগুলো ঠিকঠাক, মোড়ে মোড়ে উঁচু দালান। কিছু এলাকা জমজমাট একেবারে রাজধানী ঢাকার মতো। ছিমছাম খুলনা এখন আর আগের চেহারায় নেই।

খুলনা এখন চলমান উন্নয়ন কাজের নগর। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৩১টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ জুড়েই চলছে কোনো না কোনো উন্নয়নকাজ। কোথাও সড়কের, কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থার। ডাকবাংলা মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় কথা হয় মিনার আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। ঐতিহ্যবাহী পিকচার প্যালেস ভবনে দোকান ছিল। গত পাঁচ বছরে নগরের কী কী উন্নয়ন চোখে পড়েছে–এ প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘কাজই তো শেষ হয় না। শুধু দেখি চলছেই। পুরো শহরে ইজিবাইকের জ্বালায় চলাচল করা যায় না। মশার যন্ত্রণা। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা আর ড্রেনের কাজ হয়। কিন্তু শেষ হবে কবে, তা জানি না।’ 

খুলনার বয়রা বাজার থেকে যে রাস্তাটা শিববাড়ির দিকে গেছে, সেখানে কার্পেটিং চলছে। একপাশে রাস্তা বন্ধ করায় দুই দিকের যানবাহন চলছে একদিকে। ওই রাস্তায় রাজু নামের এক ছাত্রের ক্ষোভ, ‘ধুলায় হাঁটাচলা করা যায় না। আগে দেখতাম এসব কাজ রাতে হতো। এখন দিনের বেলায় হয়।’

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশনের আয়তন ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমটার। ১৫ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস এ শহরে। নগরে এখন চলছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে ৮২৩ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ৬০৭ কোটি টাকার রাস্তা এবং ৩৯৩ কোটি টাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্প।

সম্প্রতি জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ৪৯১ কোটি টাকার ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট ফেজ-২ নামের আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তবে অপেক্ষমাণ তালিকাতেই প্রকল্প বেশি, যা বর্তমান মেয়রের কার্যমেয়াদে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র হয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তালুকদার আব্দুল খালেক। মধ্যের সময়টা বাদে ২০১৩ সাল পর্যন্তও তিনি এ পদে ছিলেন। আগামী মে মাসে তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারের ৩১টি প্রতিশ্রুতি ঘাঁটলে দেখা যায়, অর্ধেকের মতো প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে। কোনোটার কাজই পুরোপুরি শেষ হয়নি। আবার কিছু শুরু হয়ে থমকে আছে।

নগরের উন্নয়ন নিয়ে খুলনার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদারের মন্তব্য, শহরে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। সবই স্বল্প সময়ের জন্য। এটি উপকূলীয় এলাকা। ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সড়ক, ড্রেন হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। জলাবদ্ধতা দূর হয়নি।

কেসিসির তথ্য বলছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ২২৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। পরে এগুলোর মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দরপত্র হওয়া ১৪০টির মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৪২টির। প্রক্রিয়াধীন ৩৬টি আর এখনো বাকি ৪৯টি। একই সময়কালে সড়কে ৫৭১টি প্রকল্পের মধ্যে ৪১০টির কাজ শেষ হয়েছে। চলমান ১২২টি। প্রক্রিয়াধীন ২০টি। দরপত্র হয়নি ১৯টি প্রকল্পের।

গত বৃহস্পতিবার খুলনা নগর ভবনে কথা হয় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তাঁর দাবি, নির্বাচনী ইশতেহারের ৭৫ ভাগ কাজ তিনি শেষ করতে পেরেছেন। করোনা মহামারি উন্নয়নের গতি থমকে দিয়েছে। নইলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুরো বাস্তবায়ন করতে পারতেন।

মেয়র খালেক বলেন, ‘এখানকার মানুষ কখনো এত কাজ দেখেনি। কারও পক্ষে করাও সম্ভব হয়নি। আগামী দুই মাসের মধ্যে মোটামুটি সব গুছিয়ে আনব। যেগুলো বাকি থাকবে, আগামীতে মানুষ ভোট দিলে সব শেষ করব।’ নির্বাচনী ইশতেহারে এক নম্বরে কী ছিল–জানতে চাইলে বললেন, `শহরের জলাবদ্ধতা দূর করাই ছিল আমার প্রধান প্রতিশ্রুতি।’

২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ১ নম্বরে সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ উল্লেখ থাকার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে মেয়র বলেন, ‘আমি সিটি গভর্নমেন্টের কথা বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছি। কিন্তু আমার একার পক্ষে তো এই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত