Ajker Patrika

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ শ্মশানের রাস্তা

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ১৫
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির পানছড়ি সদর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯ গ্রামের মানুষের একমাত্র শ্মশান চৌধুরীপাড়া শ্মশান। এই শ্মশানে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করে দিতে ৩০ বছর ধরে ধরনা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে। কিন্তু সেটি করে না দেওয়ায় অবশেষে নিজেদের উদ্যোগেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন গ্রামবাসী।

জানা গেছে, ধানখেতের ছোট্ট আইল ধরে শবদেহ নিয়ে যেতে হয় শ্মশানে। নির্বাচন এলেই এখানে একটি রাস্তা নির্মাণের ওয়াদা করেন প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন শেষে ভুলে যান এই প্রতিশ্রুতির কথা। শুক্রবার সদর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার ধানি জমির মাঝামাঝি এর রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়।

এই শ্মশানের শুরু থেকেই সদর ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম-জ্যোতিষ মেম্বারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জামাইপাড়া, রবি সিংপাড়া, কামিনী মেম্বারপাড়া, আঁচাই মহাজনপাড়া, তালুকদারপাড়া, পোড়াবাড়ি, কলেজপাড়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানে যেতে হয় চৌধুরীপাড়ার প্রায় আধা কিলোমিটার ধানখেতের আইল ধরে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের।

চৌধুরীপাড়ার মেমং চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগে শ্মশানে শবদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন অনেকে, কিন্তু পরে তা ভুলে যান। অনেকেই শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ বাস্তবায়ন করেননি।

এ জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণের জন্য চলতি মাসে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে সড়কের জন্য জমি দিতে দুই মালিকের কাছে দাবি করা হয়। তাঁরা জমি দিতে রাজি থাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে কাজী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শ্মশানটি আমার জমির পাশেই। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে, তাঁদের শবদেহ নেওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শুকনো মৌসুমে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও বর্ষায় ধানের জমির আইল, না হলে এক কিলো রাস্তা ঘুরে অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে লাশ শ্মশানে নিয়ে যেতে এলাকাবাসীর কষ্ট হয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার পাশাপাশি উগ্য মারমা রাস্তা করার উপযোগী ভূমি ছেড়ে দেওয়ায় শ্মশানের রাস্তাটি করা গেল।’

সরেজমিন দেখা গেছে, ৯টি গ্রামের প্রায় ৪০০ নারী-পুরুষ সড়ক নির্মাণে কাজ করছেন। পাঁচ ফুট প্রস্থ রাস্তা নির্মাণে তাঁরা নিজ উদ্যোগেই কোদাল, টুকরি, বস্তা, শাবল নিয়ে কাজে ব্যস্ত। কার আগে কে মাটি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করবেন, সে প্রতিযোগিতা। বিকেলে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

উপজেলার প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা বলেন, রাস্তার জন্য ভূমি সমস্যা ছিল। এখন সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। একজন মুসলিম ও বৌদ্ধ মিলিয়েই রাস্তার জমি দান করেছেন। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত