Ajker Patrika

অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা

নুসরাত জাহান শুচি
Thumbnail image

‘ছোট্ট শিশু মরিয়ম। সে মায়ের সঙ্গে পেঁয়াজ-মরিচ কেটে মসলা নিয়ে বসে আছে। কে কখন তাদের বাড়িতে মাংস নিয়ে আসবে, তারা রান্না করে খাবে! কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের বাড়িতে কি আদৌ মাংস যায়? আর যদিও যায়, তা-ও সেটা কি মাংস, নাকি কিছু হাড় আর চর্বির পিণ্ড?’

প্রতিবার ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ এলেই ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা যায়। আর তা শেয়ার করেনও কোটি মানুষ।

তাঁদের মধ্যে অনেকেই কোরবানি দেন। তাহলে কেন প্রতিবছর এমন পোস্ট শেয়ার করতে হচ্ছে?

বর্তমানে দেশে গরুর মাংসের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। হিন্দুপ্রধান দেশ হয়েও গরুর মাংস খাওয়ার তালিকায় যেখানে ভারতের অবস্থান পঞ্চম, সেখানে নেই বাংলাদেশের নাম। এ থেকে বোঝা যায়, গরুর মাংসের দাম হাতের নাগালের বাইরে হওয়ায় দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ মাংস কিনতে পারছে না। 
এবারের ঈদের ভাইরাল পোস্টটি তো এমনও হতে পারে:

‘মূল্যবৃদ্ধির ফলে যে মাংস ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তাদের সবার ঘরেই পৌঁছে গেছে কোরবানির মাংস।’

ঈদুল আজহা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসবগুলোর একটি। যার উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কোরবানির প্রচলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তার নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে স্বপ্নাদেশ দেন তার প্রিয় প্রাণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করতে। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর নবী তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে জবাই করতে যান এবং ইসমাইলের পরিবর্তে পশু জবাই হয়ে যায়। এর পর থেকেই মুসলিমদের মধ্যে কোরবানির প্রচলন হয়।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) কোরবানির মাংস খেতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। তবে কোরবানির পশুর মাংস অবশ্যই তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং আরেক ভাগ ফকির-মিসকিনের জন্য। সমাজের সব মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে বৈষম্য দূর করাই এর উদ্দেশ্য। অন্যথায় কোরবানির মহিমা অর্জন হয় না।

যদিও এখন কোরবানির সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কমেছে মাংসের বণ্টন। হতদরিদ্র ফকির-মিসকিনরা কি তাদের প্রাপ্য ভাগ পাচ্ছে? তাদের ঘরে কি পৌঁছাচ্ছে কোরবানির মাংস? পেলেও যতটুকু পাচ্ছে, তাদের প্রাপ্য কি এর চেয়ে বেশি নয়? নাকি তাদের প্রাপ্যটুকু নিজের ঘরে জমা রাখতে আমরা ভিড় জমাচ্ছি ডিপ ফ্রিজের দোকানে?

শুধু এখানেই শেষ নয়। কোরবানির পশু বড় নাকি ছোট, কোন পশুর দাম বেশি আর কোনটি কম দামের, তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। পাড়ার সবচেয়ে 
বড় পশুটি নিজের বাড়িতে না এলে মন খারাপ হয় অনেকের।

আল্লাহ স্পষ্টরূপে কোরআন মাজিদে বলে দিয়েছেন, ‘কোরবানির পশুর রক্ত বা মাংস আমার কাছে পৌঁছায় না, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’

তাই বর্তমান সময়ে চলমান এসব প্রতিযোগিতা কেবলই অর্থহীন, যার কোনো মর্যাদা আল্লাহর কাছে নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সব বৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠাই এর লক্ষ্য। এতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান।

তাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি নামের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সবার মধ্যে কোরবানির প্রকৃত মহিমা ছড়িয়ে দেওয়াই হোক সব মুমিনের লক্ষ্য। 

নুসরাত জাহান শুচি, সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত