Ajker Patrika

হোস্টেলে আতঙ্কে বসবাস

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ২৪
হোস্টেলে আতঙ্কে বসবাস

প্রায় দুই শত বছরের পুরোনো জমিদার বাড়িতে গড়ে ওঠা গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের হোস্টেলটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পুরোনো ভবনটিতে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে বাধ্য হয়েই হোস্টেলে বসবাস করছেন দূর-দুরান্তের শিক্ষার্থীরা। দুর্ঘটনা এড়াতে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় একাংশে কলেজ ও অধ্যক্ষের কার্যালয়। বাকি অংশ ও দ্বিতীয় তলার পুরোটাই আগে ছিল হোস্টেল। তবে এখন দ্বিতীয় তলায় মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী আছেন। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হোস্টেলে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় তলার কংক্রিটের বারান্দা ও মূল ভবনের কাঠের পাটাতনে জায়গায় জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া দেয়ালের প্লাস্টার খসে যাচ্ছে, দরজা-জানালা ভাঙা। জানালার পাল্লা আলগা। পাটাতন ও ছাদও জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাথরুমের পাইপ ভাঙা। গোসল করতে হয় নলকূপে। খাবারের পানির ব্যবস্থা নেই, আনতে হয় নিচ থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজটি ১৯৮১ সালে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি ও অনার্স মিলিয়ে প্রায় এক হাজার আট শ শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঁচটি বিষয়ে অনার্স চালু রয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স চালু প্রক্রিয়াধীন। অথচ শিক্ষার্থীদের থাকার সুব্যবস্থা নেই।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলায়। দুই বছর যাবৎ হোস্টেলে থাকেন। তিনি জানান, অনেক দুর থেকে আসলেও গৌরীপুরে কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া মেয়ে হিসেবে বাইরে ভাড়াবাড়িতে একা থাকার চেয়ে হোস্টেলে থাকাটাই নিরাপদ মনে করেন তিনি।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পিংকি আক্তার এসেছেন নেত্রকোনার বারহাট্রা উপজেলা থেকে। সম্প্রতি তিনি হোস্টেলে উঠেছেন। তিনি জানান, অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন। হোস্টেলে থেকে প্রচুর পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। এখন ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটছে। হোস্টেলে এমন ভুতুড়ে পরিবেশ হতে পারে, তা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি বলে জানান।

হোস্টেলের পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, ‘অনার্সে অনেক দূর-দুরান্তের শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজে। তাঁরা হোস্টেলে থাকতে আগ্রহী। কিন্তু জরাজীর্ণ ভবনে থাকতে ভয় পায়। কলেজের আর্থিক সামর্থ্য নেই নতুন হোস্টেল ভবন নির্মাণ কিংবা মেরামতের।’ ৪-৫ বছর আগেও হোস্টেলে ১৫০ জন ছাত্রী থাকত বলে জানান তিনি।

প্রাবন্ধিক ও গবেষক রণজিৎ কর বলেন, ১৮ শ শতাব্দীর শুরুর দিকে গৌরীপুর মহিলা কলেজের বর্তমান হোস্টেল ভবনটি জমিদার বাড়ির অন্দরমহল হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তাঁরা ভারত চলে গেলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল এটি। পরে মহিলা কলেজ করা হয়। দেড় শ বছরের বেশি বয়সী ভবনটি এখন বসবাসের উপযোগী নয়।

গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘পুরোনো ভবনটি এখন ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মেয়েরা অনেক কষ্টে এখানে থাকছে। কলেজের আর্থিক সামর্থ্য নেই নতুন ভবন নির্মাণের।’ এ জন্য তিনি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন।

গৌরীপুরের ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, ‘মহিলা কলেজের হোস্টেল ভবনটি অনেক পুরোনো স্থাপনা, এটি মেরামতের প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই তা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত