Ajker Patrika

ভক্ষকদেরই কেন রক্ষক করা হয়

সম্পাদকীয়
ভক্ষকদেরই কেন রক্ষক করা হয়

কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার-সংক্রান্ত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কিছু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পর বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হলেও, বেশির ভাগ ঘটনার আসল কুশীলবরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে গেছেন। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট দেশের উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা।

রোববার আজকের পত্রিকায় এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এই ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অপসারণ করা হয়েছিল ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীকে। এরপর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানকে সরিয়ে সেই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পারভেজ তমালকে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরও আগের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি; বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে

কয়েক বছর ধরে হল-মার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংক, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব লুটপাটের ঘটনায় একের পর এক মামলা করেছে দুদক। এসব ঘটনায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তাকে দণ্ড দিয়েছেন আদালত। কিন্তু তার পরও বন্ধ হচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাটের ঘটনা।

ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও আদতে কতটা কাজে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আগে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হলেও এখন বেসরকারি পর্যায়ে এর প্রবণতা বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। আর্থিক লেনদেন, মূলধন প্রাপ্তিসহ নানা কাজে বিকল্প না থাকায় ব্যাংক খাতে মানুষের নির্ভরশীলতা বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণ, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে এ খাত সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে এ খাতে আস্থার সংকট বাড়ছে ক্রমাগতভাবে। এ অবস্থায় ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যাঁদের দায়িত্ব রক্ষা করার কথা, তাঁরাই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে।

অনিয়মে নিমজ্জিত থাকা ব্যাংকটিকে বাঁচাতে তমালের নেতৃত্বাধীন এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখন পর্যন্ত অজানা কারণে সেই সুপারিশের কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি এখনো দাপটের সঙ্গে ব্যাংকে থেকে অনিয়মগুলো করেই চলেছেন।

অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের সঠিক বিচার না হওয়ায় ব্যাংক খাত নিয়ে জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা ও উৎকণ্ঠা। একটি 
দেশের সত্যিকারের সুশাসনের সূচক হলো অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাফল্য। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় কর্তাদের প্রতি সরকারের প্রশ্রয়মূলক মনোভাব দেখা গেছে। এমনিতেই ব্যাংকের বড় কর্তাদের জবাবদিহির বিষয়টি বাংলাদেশে উপেক্ষিত।

অথচ ব্যাংকিং খাতে আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রথমেই প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত