Ajker Patrika

স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জে ১৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জে  ১৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছে আওয়ামী লীগ। সেই উৎসাহের জোরে ১৩০টির মতো আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের মধ্যে অনেকে আছেন, যাঁরা স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। ভোটের মাঠে তাঁদের স্বতন্ত্র অবস্থানের কারণে কপাল পুড়তে পারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় ১৮ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব থাকায় ভোটে হেরেও যেতে পারেন হেভিওয়েটদের কেউ কেউ। 

আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুসারে বর্তমান মন্ত্রিসভার ৭ মন্ত্রী, ১০ প্রতিমন্ত্রী এবং ১ উপমন্ত্রীকে নিজ আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে কারও কারও আসনে। এরই মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সংসদীয় আসনে (পিরোজপুর-১) দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আবদুল আউয়ালের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন প্রাণ হারিয়েছেন।

পিরোজপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন শ ম রেজাউল করিম। সেখানে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম এ আবদুল আউয়াল। পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শক্ত অবস্থান রয়েছে তাঁর।

জানতে চাইলে শ ম রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আশা করি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। প্রার্থীদের মধ্য থেকে জনগণই তাঁদের উত্তম প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন। মানুষ শেখ হাসিনার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ 

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন শাহজাহান ভূঞা। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট কাটাকাটির কারণে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নরসিংদী-৪ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। শিল্পমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন সাইফুল ইসলাম খান বীরু। তিনি বলেন, ‘মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে আমাকে হারানো সম্ভব নয়। আমি মানুষের জন্য কাজ করি বলেই মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি, দুই উপজেলার মানুষই আমাকে ভালোবাসে।’

চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভুইয়া। 

নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা। তিনি চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

লালমনিরহাট-২ আসনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ব্যবসায়ী সিরাজুল হক। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও আছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের আসনে (গাজীপুর-১) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। গাজীপুর-২ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন ও গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। প্রতীক বরাদ্দের পরে রেজাউল করিম ও আলিম উদ্দিনকে নিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের সম্পর্ক সুবিধার না থাকায় ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জে পড়তে পারেন তাঁরা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে টানা চতুর্থবারের মতো রাজশাহী-৬ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নৌকা প্রতীকেও স্বস্তিতে নেই তিনি। কারণ, কাঁচি প্রতীকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও সাবেক এমপি রাহেনুল হক। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিভক্তির কারণে এই আসনে শাহরিয়ার আলমের জিতে আসাটা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাটোর-৩ আসনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক। শফিক সদ্য পদত্যাগী সিংড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

নেত্রকোনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। তাঁর সঙ্গে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয়।

মেহেরপুর-১ আসনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুবারের এমপি আব্দুল মান্নান। ফলে নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শুরু হয়েছে উভয়ে মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ফরহাদ হোসেন। জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে ‘রাজনীতির শিশু’ বলে মন্তব্য করেন আব্দুল মান্নান।

যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে ছাড় দিতে নারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব আলী। ঈগল প্রতীক নিয়ে বরিশাল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন বরিশাল সিটি

করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ঢাকা-১৯ আসনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানকে সাবেক এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং (মুরাদ), হবিগঞ্জ-৪ আসনে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক। জামালপুর-২ আসনে (ইসলামপুর উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জিয়াউল হক ও সাজাহান আলী মণ্ডল। শরীয়তপুর-২ আসনে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের বিরুদ্ধে লড়বেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত