ছিনতাই, ৫ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউপির চার কেন্দ্রে ও তবকপুর ইউপির এক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউপির দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সাময়িক স্থগিত থাকলেও পরে আবারও শুরু করা হয়।

গতকাল রোববার বুড়াবুড়ি ও দুর্গাপুর ইউপির ওইসব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সেই সঙ্গে ভোট গ্রহণ স্থগিতের ঘটনা ঘটে।

বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহিন মিয়া এবং দুর্গাপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা আহসান হাবিব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুর্গাপুর ইউপিতে স্থগিত হওয়া চার কেন্দ্র হলো দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অবস্থিত দুটি কেন্দ্র, একই ইউপির গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র এবং কামালখামার সিনিয়র মাদ্রাসাকেন্দ্র। আর তবকপুর ইউপির স্থগিত হওয়া কেন্দ্রটি হলো সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র।

জানা গেছে, দুর্গাপুরের কামালখামার সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষ থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ার পর ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। এদিকে গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাচন স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

এদিকে বুড়াবুড়ি ইউপির কাশেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র দখলের জেরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খন্দকারের সমর্থকদের সঙ্গে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একইভাবে দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেওয়া চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে কোনো প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বুড়াবুড়ি ইউপিতে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়ে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে সরকারি সম্পদ রক্ষায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়।’

বুড়াবুড়ির রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহিন মিয়া জানান, ওই ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ও সিল ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলেও ওই দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের বারবার আশ্বস্ত করলেও তাঁরা ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, দুর্গাপুর ইউপির দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি ভোটকেন্দ্র, ওই ইউপির গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কামালখামার সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ চারটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তা ছাড়া তবকপুর ইউপির সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রেও ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার গোলাম ফেরদৌস জানান, দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রসহ মোট পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।