এ কে এম শামসুদ্দিন

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা অনেকেই জানি না বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাষা আন্দোলন হয়েছে এবং আত্মাহুতির মাধ্যমে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে তামিল ভাষা, স্বাধীনতার পর ১৯৬১ সালে আসামের শীলচরে বাংলা ভাষা, ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জুলু ভাষা, লাটভিয়ায় রুশ ভাষা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ভাষা, বলকান অঞ্চলে, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আরবি-ফারসি-তুর্কি কিংবা মেক্সিকোর উত্তরাংশে স্প্যানিশ-ইংরেজি; সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে চীনে ম্যান্ডারিন-মাঞ্চুরিয়ান ভাষার মধ্যে বিরোধ ছিল অন্যতম।
১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার আইন পার্লামেন্টে পাস করতে চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তামিল ভাষাভাষী। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতের এই অঞ্চলের জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের এই ভাষা আন্দোলন ১৯৩৯ সাল অবধি চলতে থাকে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্থানীয় কংগ্রেসের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। উর্দুভাষী মুসলমানরাও হিন্দি ভাষার পক্ষ অবলম্বন করে। এই আন্দোলনে অজ্ঞাতনামা দুজন নাগরিক প্রাণ হারান এবং প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ভারতের স্বাধীনতার পর জাতীয় কংগ্রেস সর্বভারতীয় সরকার গঠন করে। এ সময় হিন্দি ভাষাভাষী কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও মওলানা আবুল কালাম আজাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। আইনে বলা হয়, ১৫ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এ আইন কার্যকর হবে। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার মুহূর্তে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। শীতের এক সকালে দক্ষিণ ভারতের তিরুচিরাপল্লীবাসী এলাকার চিন্নাস্বামী নামের এক তামিল নাগরিক শহরের রেলওয়ে স্টেশনের সন্নিকটে নিজ শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিন্নাস্বামী ‘তামিল জিন্দাবাদ, হিন্দি নিপাত যাক’ স্লোগান দিতে দিতে ভস্মীভূত হয়ে মারা যান। চিন্নাস্বামীর পর আরও ছয়জন তামিল নাগরিকও একইভাবে আত্মাহুতি দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রায় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১৭ বছরের এক কিশোর মারা যায়। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে। শুরু হয় দাঙ্গা। সরকার আন্দোলন মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী রাস্তায় নামায়। এই দাঙ্গা চলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিক্ষুব্ধ জনতা দুজন পুলিশ সদস্যকেও পুড়িয়ে মারে। দাঙ্গায় মোট ৬৩ জন তামিল নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট ভারতের সংসদে ‘লুকওয়ার্ম ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট’ পাস হয়। ভারতে ‘রাষ্ট্রভাষা’ বা ‘জাতীয় ভাষা’ বলতে কিছু নেই। ১০০টিরও বেশি ভাষাভাষীর দেশ ভারতে বর্তমানে ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে।
১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় কাছাড় জেলার শিলচরে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ১১ তরুণ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন; সে ঘটনার কথা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সেই লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও সেদিন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁর নাম কমলা ভট্টাচার্য। ১৬ বছর বয়সী এ তরুণীই সমগ্র বাঙালি নারীসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর একমাত্র শহীদ নারী ভাষাসৈনিক। বরাক উপত্যকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস ছিল, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল বাঙালি। এ ছাড়া আসামের অন্যান্য অঞ্চলেও বাঙালিদের ব্যাপক বসবাস ছিল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসমিয়া নাগরিকদের ভেতর এমন আশঙ্কা ভর করে যে অগ্রসরমাণ বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতি হয়তো একদিন অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে। এ ধরনের মানসিক ভীতি থেকে আসামের শাসকেরা স্বাধীনতার পর একাধিক ভাষা-নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে Assam (official) Language Act (ALA-1960) নামে একটি অ্যাক্ট আসাম প্রাদেশিক পরিষদে পাস করিয়ে নেয়।
১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা আসাম প্রাদেশিক পরিষদে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আসামের করিমগঞ্জ (উত্তর) থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য রণেন্দ্র মোহন দাস তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগণের ভাষাকে উপেক্ষা করে এক-তৃতীয়াংশ জনগণের অসমিয়া ভাষাকে এ অঞ্চলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করা চলবে না।’ তারপরও ২৪ অক্টোবর ১৯৬০ সালে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক আনীত বিলটি পাস হয়ে যায়।
১৯৬১ সালের এপ্রিলে বাংলা ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলন জোরালো করার লক্ষ্যে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬১ সালের ২৪ এপ্রিল সমগ্র বরাক উপত্যকায় ‘পক্ষকালব্যাপী পদযাত্রা’র কর্মসূচি শুরু করে। এই পদযাত্রায় ব্যাপক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং কাছাড় জেলার সদর শহর শিলচর থেকে শুরু করে উপত্যকার বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চল ঘুরে আনুমানিক ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ২ মে আবার শিলচরে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন, ১৩ মের মধ্যে যদি বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে ১৯ মে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মে হরতাল শুরু হলে উত্তেজিত জনতা খুব ভোর থেকেই কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় সরকারি অফিস, আদালত ও রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান গ্রহণ করে। অন্যদিকে প্রাদেশিক সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরগুলোতে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের টহল নামায়। আনুমানিক বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উত্তেজিত বাঙালিরা পুলিশের একটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রহরারত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেদম লাঠিপেটা শুরু করে এবং পূর্বঘোষণা ছাড়াই নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ বাঙালি তরুণ একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁরা হলেন কানাই লাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব ও কমলা ভট্টাচার্য।
১১ শাহাদাতবরণকারীর মধ্যে কমলা ভট্টাচার্য ছিলেন একমাত্র নারী ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামরামান ভট্টাচার্য ও মাতা সুপ্রবাসিনী দেবীর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান কমলা। কমলা ভট্টাচার্যদের আদি নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫০ সালে কমলা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে আসামের শিলচরে চলে যান। কমলা শিলচরের চোতিলাল সেন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী ছিলেন। ঘটনার আগের দিন তাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়। ১৯ মে হরতাল শুরু হলে শিলচরের তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিতে সকালে যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বড় বোন প্রতিভা ধর্মঘটে যেতে নিষেধ করেন। এরপরও এই মহীয়সী নারী বড় বোনের নিষেধ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেন। কমলার মা সুপ্রবাসিনী দেবী কমলার এ সংগ্রামী চেতনায় খুশি হন। কমলার সঙ্গে ছোট বোন মঙ্গলাও বেরিয়ে পড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকালে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যখন লাঠিপেটা শুরু করেন, তখন মঙ্গলা সেই লাঠির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ততক্ষণে গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কমলা তাঁর বোনের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে গেলে একটি বুলেট এসে তাঁর ডান চক্ষু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে করে কমলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এভাবেই সেদিন বাঙালি জাতির প্রথম নারী ভাষাসৈনিক মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মাহুতি দেন। মহান আত্মত্যাগী এই সাহসী নারী কমলা ভট্টাচার্যকে আমরা কতজনই-বা চিনি?
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনা পর্যালোচনা করলে ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রণকৌশল ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় করা ইত্যাদি একই ধারায় যেন পরিচালিত হয়েছিল। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বায়ান্নর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঘটনা আসামের আন্দোলনকারীদের সাহস জুগিয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তারই পথ ধরে আসামের বাঙালিরা এভাবেই বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এ কে এম শামসুদ্দিন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা অনেকেই জানি না বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাষা আন্দোলন হয়েছে এবং আত্মাহুতির মাধ্যমে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে তামিল ভাষা, স্বাধীনতার পর ১৯৬১ সালে আসামের শীলচরে বাংলা ভাষা, ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জুলু ভাষা, লাটভিয়ায় রুশ ভাষা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ভাষা, বলকান অঞ্চলে, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আরবি-ফারসি-তুর্কি কিংবা মেক্সিকোর উত্তরাংশে স্প্যানিশ-ইংরেজি; সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে চীনে ম্যান্ডারিন-মাঞ্চুরিয়ান ভাষার মধ্যে বিরোধ ছিল অন্যতম।
১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার আইন পার্লামেন্টে পাস করতে চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তামিল ভাষাভাষী। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতের এই অঞ্চলের জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের এই ভাষা আন্দোলন ১৯৩৯ সাল অবধি চলতে থাকে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্থানীয় কংগ্রেসের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। উর্দুভাষী মুসলমানরাও হিন্দি ভাষার পক্ষ অবলম্বন করে। এই আন্দোলনে অজ্ঞাতনামা দুজন নাগরিক প্রাণ হারান এবং প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ভারতের স্বাধীনতার পর জাতীয় কংগ্রেস সর্বভারতীয় সরকার গঠন করে। এ সময় হিন্দি ভাষাভাষী কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও মওলানা আবুল কালাম আজাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। আইনে বলা হয়, ১৫ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এ আইন কার্যকর হবে। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার মুহূর্তে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। শীতের এক সকালে দক্ষিণ ভারতের তিরুচিরাপল্লীবাসী এলাকার চিন্নাস্বামী নামের এক তামিল নাগরিক শহরের রেলওয়ে স্টেশনের সন্নিকটে নিজ শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিন্নাস্বামী ‘তামিল জিন্দাবাদ, হিন্দি নিপাত যাক’ স্লোগান দিতে দিতে ভস্মীভূত হয়ে মারা যান। চিন্নাস্বামীর পর আরও ছয়জন তামিল নাগরিকও একইভাবে আত্মাহুতি দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রায় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১৭ বছরের এক কিশোর মারা যায়। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে। শুরু হয় দাঙ্গা। সরকার আন্দোলন মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী রাস্তায় নামায়। এই দাঙ্গা চলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিক্ষুব্ধ জনতা দুজন পুলিশ সদস্যকেও পুড়িয়ে মারে। দাঙ্গায় মোট ৬৩ জন তামিল নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট ভারতের সংসদে ‘লুকওয়ার্ম ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট’ পাস হয়। ভারতে ‘রাষ্ট্রভাষা’ বা ‘জাতীয় ভাষা’ বলতে কিছু নেই। ১০০টিরও বেশি ভাষাভাষীর দেশ ভারতে বর্তমানে ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে।
১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় কাছাড় জেলার শিলচরে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ১১ তরুণ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন; সে ঘটনার কথা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সেই লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও সেদিন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁর নাম কমলা ভট্টাচার্য। ১৬ বছর বয়সী এ তরুণীই সমগ্র বাঙালি নারীসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর একমাত্র শহীদ নারী ভাষাসৈনিক। বরাক উপত্যকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস ছিল, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল বাঙালি। এ ছাড়া আসামের অন্যান্য অঞ্চলেও বাঙালিদের ব্যাপক বসবাস ছিল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসমিয়া নাগরিকদের ভেতর এমন আশঙ্কা ভর করে যে অগ্রসরমাণ বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতি হয়তো একদিন অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে। এ ধরনের মানসিক ভীতি থেকে আসামের শাসকেরা স্বাধীনতার পর একাধিক ভাষা-নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে Assam (official) Language Act (ALA-1960) নামে একটি অ্যাক্ট আসাম প্রাদেশিক পরিষদে পাস করিয়ে নেয়।
১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা আসাম প্রাদেশিক পরিষদে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আসামের করিমগঞ্জ (উত্তর) থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য রণেন্দ্র মোহন দাস তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগণের ভাষাকে উপেক্ষা করে এক-তৃতীয়াংশ জনগণের অসমিয়া ভাষাকে এ অঞ্চলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করা চলবে না।’ তারপরও ২৪ অক্টোবর ১৯৬০ সালে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক আনীত বিলটি পাস হয়ে যায়।
১৯৬১ সালের এপ্রিলে বাংলা ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলন জোরালো করার লক্ষ্যে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬১ সালের ২৪ এপ্রিল সমগ্র বরাক উপত্যকায় ‘পক্ষকালব্যাপী পদযাত্রা’র কর্মসূচি শুরু করে। এই পদযাত্রায় ব্যাপক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং কাছাড় জেলার সদর শহর শিলচর থেকে শুরু করে উপত্যকার বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চল ঘুরে আনুমানিক ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ২ মে আবার শিলচরে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন, ১৩ মের মধ্যে যদি বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে ১৯ মে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মে হরতাল শুরু হলে উত্তেজিত জনতা খুব ভোর থেকেই কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় সরকারি অফিস, আদালত ও রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান গ্রহণ করে। অন্যদিকে প্রাদেশিক সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরগুলোতে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের টহল নামায়। আনুমানিক বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উত্তেজিত বাঙালিরা পুলিশের একটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রহরারত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেদম লাঠিপেটা শুরু করে এবং পূর্বঘোষণা ছাড়াই নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ বাঙালি তরুণ একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁরা হলেন কানাই লাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব ও কমলা ভট্টাচার্য।
১১ শাহাদাতবরণকারীর মধ্যে কমলা ভট্টাচার্য ছিলেন একমাত্র নারী ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামরামান ভট্টাচার্য ও মাতা সুপ্রবাসিনী দেবীর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান কমলা। কমলা ভট্টাচার্যদের আদি নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫০ সালে কমলা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে আসামের শিলচরে চলে যান। কমলা শিলচরের চোতিলাল সেন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী ছিলেন। ঘটনার আগের দিন তাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়। ১৯ মে হরতাল শুরু হলে শিলচরের তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিতে সকালে যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বড় বোন প্রতিভা ধর্মঘটে যেতে নিষেধ করেন। এরপরও এই মহীয়সী নারী বড় বোনের নিষেধ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেন। কমলার মা সুপ্রবাসিনী দেবী কমলার এ সংগ্রামী চেতনায় খুশি হন। কমলার সঙ্গে ছোট বোন মঙ্গলাও বেরিয়ে পড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকালে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যখন লাঠিপেটা শুরু করেন, তখন মঙ্গলা সেই লাঠির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ততক্ষণে গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কমলা তাঁর বোনের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে গেলে একটি বুলেট এসে তাঁর ডান চক্ষু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে করে কমলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এভাবেই সেদিন বাঙালি জাতির প্রথম নারী ভাষাসৈনিক মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মাহুতি দেন। মহান আত্মত্যাগী এই সাহসী নারী কমলা ভট্টাচার্যকে আমরা কতজনই-বা চিনি?
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনা পর্যালোচনা করলে ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রণকৌশল ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় করা ইত্যাদি একই ধারায় যেন পরিচালিত হয়েছিল। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বায়ান্নর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঘটনা আসামের আন্দোলনকারীদের সাহস জুগিয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তারই পথ ধরে আসামের বাঙালিরা এভাবেই বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এ কে এম শামসুদ্দিন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
এ কে এম শামসুদ্দিন

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা অনেকেই জানি না বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাষা আন্দোলন হয়েছে এবং আত্মাহুতির মাধ্যমে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে তামিল ভাষা, স্বাধীনতার পর ১৯৬১ সালে আসামের শীলচরে বাংলা ভাষা, ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জুলু ভাষা, লাটভিয়ায় রুশ ভাষা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ভাষা, বলকান অঞ্চলে, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আরবি-ফারসি-তুর্কি কিংবা মেক্সিকোর উত্তরাংশে স্প্যানিশ-ইংরেজি; সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে চীনে ম্যান্ডারিন-মাঞ্চুরিয়ান ভাষার মধ্যে বিরোধ ছিল অন্যতম।
১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার আইন পার্লামেন্টে পাস করতে চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তামিল ভাষাভাষী। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতের এই অঞ্চলের জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের এই ভাষা আন্দোলন ১৯৩৯ সাল অবধি চলতে থাকে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্থানীয় কংগ্রেসের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। উর্দুভাষী মুসলমানরাও হিন্দি ভাষার পক্ষ অবলম্বন করে। এই আন্দোলনে অজ্ঞাতনামা দুজন নাগরিক প্রাণ হারান এবং প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ভারতের স্বাধীনতার পর জাতীয় কংগ্রেস সর্বভারতীয় সরকার গঠন করে। এ সময় হিন্দি ভাষাভাষী কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও মওলানা আবুল কালাম আজাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। আইনে বলা হয়, ১৫ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এ আইন কার্যকর হবে। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার মুহূর্তে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। শীতের এক সকালে দক্ষিণ ভারতের তিরুচিরাপল্লীবাসী এলাকার চিন্নাস্বামী নামের এক তামিল নাগরিক শহরের রেলওয়ে স্টেশনের সন্নিকটে নিজ শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিন্নাস্বামী ‘তামিল জিন্দাবাদ, হিন্দি নিপাত যাক’ স্লোগান দিতে দিতে ভস্মীভূত হয়ে মারা যান। চিন্নাস্বামীর পর আরও ছয়জন তামিল নাগরিকও একইভাবে আত্মাহুতি দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রায় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১৭ বছরের এক কিশোর মারা যায়। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে। শুরু হয় দাঙ্গা। সরকার আন্দোলন মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী রাস্তায় নামায়। এই দাঙ্গা চলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিক্ষুব্ধ জনতা দুজন পুলিশ সদস্যকেও পুড়িয়ে মারে। দাঙ্গায় মোট ৬৩ জন তামিল নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট ভারতের সংসদে ‘লুকওয়ার্ম ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট’ পাস হয়। ভারতে ‘রাষ্ট্রভাষা’ বা ‘জাতীয় ভাষা’ বলতে কিছু নেই। ১০০টিরও বেশি ভাষাভাষীর দেশ ভারতে বর্তমানে ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে।
১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় কাছাড় জেলার শিলচরে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ১১ তরুণ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন; সে ঘটনার কথা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সেই লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও সেদিন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁর নাম কমলা ভট্টাচার্য। ১৬ বছর বয়সী এ তরুণীই সমগ্র বাঙালি নারীসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর একমাত্র শহীদ নারী ভাষাসৈনিক। বরাক উপত্যকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস ছিল, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল বাঙালি। এ ছাড়া আসামের অন্যান্য অঞ্চলেও বাঙালিদের ব্যাপক বসবাস ছিল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসমিয়া নাগরিকদের ভেতর এমন আশঙ্কা ভর করে যে অগ্রসরমাণ বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতি হয়তো একদিন অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে। এ ধরনের মানসিক ভীতি থেকে আসামের শাসকেরা স্বাধীনতার পর একাধিক ভাষা-নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে Assam (official) Language Act (ALA-1960) নামে একটি অ্যাক্ট আসাম প্রাদেশিক পরিষদে পাস করিয়ে নেয়।
১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা আসাম প্রাদেশিক পরিষদে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আসামের করিমগঞ্জ (উত্তর) থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য রণেন্দ্র মোহন দাস তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগণের ভাষাকে উপেক্ষা করে এক-তৃতীয়াংশ জনগণের অসমিয়া ভাষাকে এ অঞ্চলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করা চলবে না।’ তারপরও ২৪ অক্টোবর ১৯৬০ সালে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক আনীত বিলটি পাস হয়ে যায়।
১৯৬১ সালের এপ্রিলে বাংলা ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলন জোরালো করার লক্ষ্যে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬১ সালের ২৪ এপ্রিল সমগ্র বরাক উপত্যকায় ‘পক্ষকালব্যাপী পদযাত্রা’র কর্মসূচি শুরু করে। এই পদযাত্রায় ব্যাপক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং কাছাড় জেলার সদর শহর শিলচর থেকে শুরু করে উপত্যকার বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চল ঘুরে আনুমানিক ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ২ মে আবার শিলচরে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন, ১৩ মের মধ্যে যদি বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে ১৯ মে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মে হরতাল শুরু হলে উত্তেজিত জনতা খুব ভোর থেকেই কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় সরকারি অফিস, আদালত ও রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান গ্রহণ করে। অন্যদিকে প্রাদেশিক সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরগুলোতে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের টহল নামায়। আনুমানিক বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উত্তেজিত বাঙালিরা পুলিশের একটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রহরারত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেদম লাঠিপেটা শুরু করে এবং পূর্বঘোষণা ছাড়াই নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ বাঙালি তরুণ একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁরা হলেন কানাই লাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব ও কমলা ভট্টাচার্য।
১১ শাহাদাতবরণকারীর মধ্যে কমলা ভট্টাচার্য ছিলেন একমাত্র নারী ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামরামান ভট্টাচার্য ও মাতা সুপ্রবাসিনী দেবীর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান কমলা। কমলা ভট্টাচার্যদের আদি নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫০ সালে কমলা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে আসামের শিলচরে চলে যান। কমলা শিলচরের চোতিলাল সেন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী ছিলেন। ঘটনার আগের দিন তাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়। ১৯ মে হরতাল শুরু হলে শিলচরের তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিতে সকালে যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বড় বোন প্রতিভা ধর্মঘটে যেতে নিষেধ করেন। এরপরও এই মহীয়সী নারী বড় বোনের নিষেধ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেন। কমলার মা সুপ্রবাসিনী দেবী কমলার এ সংগ্রামী চেতনায় খুশি হন। কমলার সঙ্গে ছোট বোন মঙ্গলাও বেরিয়ে পড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকালে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যখন লাঠিপেটা শুরু করেন, তখন মঙ্গলা সেই লাঠির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ততক্ষণে গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কমলা তাঁর বোনের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে গেলে একটি বুলেট এসে তাঁর ডান চক্ষু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে করে কমলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এভাবেই সেদিন বাঙালি জাতির প্রথম নারী ভাষাসৈনিক মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মাহুতি দেন। মহান আত্মত্যাগী এই সাহসী নারী কমলা ভট্টাচার্যকে আমরা কতজনই-বা চিনি?
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনা পর্যালোচনা করলে ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রণকৌশল ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় করা ইত্যাদি একই ধারায় যেন পরিচালিত হয়েছিল। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বায়ান্নর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঘটনা আসামের আন্দোলনকারীদের সাহস জুগিয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তারই পথ ধরে আসামের বাঙালিরা এভাবেই বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এ কে এম শামসুদ্দিন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা অনেকেই জানি না বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাষা আন্দোলন হয়েছে এবং আত্মাহুতির মাধ্যমে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে তামিল ভাষা, স্বাধীনতার পর ১৯৬১ সালে আসামের শীলচরে বাংলা ভাষা, ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জুলু ভাষা, লাটভিয়ায় রুশ ভাষা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ-জার্মান-ডাচ ভাষা, বলকান অঞ্চলে, স্পেনের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, আফ্রিকার গোল্ড কোস্ট অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আরবি-ফারসি-তুর্কি কিংবা মেক্সিকোর উত্তরাংশে স্প্যানিশ-ইংরেজি; সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে চীনে ম্যান্ডারিন-মাঞ্চুরিয়ান ভাষার মধ্যে বিরোধ ছিল অন্যতম।
১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার আইন পার্লামেন্টে পাস করতে চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তামিল ভাষাভাষী। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতের এই অঞ্চলের জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের এই ভাষা আন্দোলন ১৯৩৯ সাল অবধি চলতে থাকে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্থানীয় কংগ্রেসের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করেন। উর্দুভাষী মুসলমানরাও হিন্দি ভাষার পক্ষ অবলম্বন করে। এই আন্দোলনে অজ্ঞাতনামা দুজন নাগরিক প্রাণ হারান এবং প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ভারতের স্বাধীনতার পর জাতীয় কংগ্রেস সর্বভারতীয় সরকার গঠন করে। এ সময় হিন্দি ভাষাভাষী কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও মওলানা আবুল কালাম আজাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তা আইন হিসেবে গৃহীত হয়। আইনে বলা হয়, ১৫ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি এ আইন কার্যকর হবে। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার মুহূর্তে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। শীতের এক সকালে দক্ষিণ ভারতের তিরুচিরাপল্লীবাসী এলাকার চিন্নাস্বামী নামের এক তামিল নাগরিক শহরের রেলওয়ে স্টেশনের সন্নিকটে নিজ শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিন্নাস্বামী ‘তামিল জিন্দাবাদ, হিন্দি নিপাত যাক’ স্লোগান দিতে দিতে ভস্মীভূত হয়ে মারা যান। চিন্নাস্বামীর পর আরও ছয়জন তামিল নাগরিকও একইভাবে আত্মাহুতি দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রায় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১৭ বছরের এক কিশোর মারা যায়। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে। শুরু হয় দাঙ্গা। সরকার আন্দোলন মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী রাস্তায় নামায়। এই দাঙ্গা চলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিক্ষুব্ধ জনতা দুজন পুলিশ সদস্যকেও পুড়িয়ে মারে। দাঙ্গায় মোট ৬৩ জন তামিল নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট ভারতের সংসদে ‘লুকওয়ার্ম ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট’ পাস হয়। ভারতে ‘রাষ্ট্রভাষা’ বা ‘জাতীয় ভাষা’ বলতে কিছু নেই। ১০০টিরও বেশি ভাষাভাষীর দেশ ভারতে বর্তমানে ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে।
১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় কাছাড় জেলার শিলচরে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ১১ তরুণ বাঙালি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন; সে ঘটনার কথা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সেই লড়াইয়ে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও সেদিন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁর নাম কমলা ভট্টাচার্য। ১৬ বছর বয়সী এ তরুণীই সমগ্র বাঙালি নারীসমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পৃথিবীর একমাত্র শহীদ নারী ভাষাসৈনিক। বরাক উপত্যকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস ছিল, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল বাঙালি। এ ছাড়া আসামের অন্যান্য অঞ্চলেও বাঙালিদের ব্যাপক বসবাস ছিল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসমিয়া নাগরিকদের ভেতর এমন আশঙ্কা ভর করে যে অগ্রসরমাণ বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতি হয়তো একদিন অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে। এ ধরনের মানসিক ভীতি থেকে আসামের শাসকেরা স্বাধীনতার পর একাধিক ভাষা-নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে Assam (official) Language Act (ALA-1960) নামে একটি অ্যাক্ট আসাম প্রাদেশিক পরিষদে পাস করিয়ে নেয়।
১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা আসাম প্রাদেশিক পরিষদে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে আসামের করিমগঞ্জ (উত্তর) থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য রণেন্দ্র মোহন দাস তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, ‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগণের ভাষাকে উপেক্ষা করে এক-তৃতীয়াংশ জনগণের অসমিয়া ভাষাকে এ অঞ্চলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে আইন পাস করা চলবে না।’ তারপরও ২৪ অক্টোবর ১৯৬০ সালে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক আনীত বিলটি পাস হয়ে যায়।
১৯৬১ সালের এপ্রিলে বাংলা ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। আন্দোলন জোরালো করার লক্ষ্যে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬১ সালের ২৪ এপ্রিল সমগ্র বরাক উপত্যকায় ‘পক্ষকালব্যাপী পদযাত্রা’র কর্মসূচি শুরু করে। এই পদযাত্রায় ব্যাপক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং কাছাড় জেলার সদর শহর শিলচর থেকে শুরু করে উপত্যকার বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চল ঘুরে আনুমানিক ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে ২ মে আবার শিলচরে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন, ১৩ মের মধ্যে যদি বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে ১৯ মে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মে হরতাল শুরু হলে উত্তেজিত জনতা খুব ভোর থেকেই কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় সরকারি অফিস, আদালত ও রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান গ্রহণ করে। অন্যদিকে প্রাদেশিক সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরগুলোতে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের টহল নামায়। আনুমানিক বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উত্তেজিত বাঙালিরা পুলিশের একটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রহরারত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেদম লাঠিপেটা শুরু করে এবং পূর্বঘোষণা ছাড়াই নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ বাঙালি তরুণ একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁরা হলেন কানাই লাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব ও কমলা ভট্টাচার্য।
১১ শাহাদাতবরণকারীর মধ্যে কমলা ভট্টাচার্য ছিলেন একমাত্র নারী ভাষাসৈনিক। তিনি ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামরামান ভট্টাচার্য ও মাতা সুপ্রবাসিনী দেবীর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান কমলা। কমলা ভট্টাচার্যদের আদি নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫০ সালে কমলা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে আসামের শিলচরে চলে যান। কমলা শিলচরের চোতিলাল সেন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী ছিলেন। ঘটনার আগের দিন তাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হয়। ১৯ মে হরতাল শুরু হলে শিলচরের তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিতে সকালে যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বড় বোন প্রতিভা ধর্মঘটে যেতে নিষেধ করেন। এরপরও এই মহীয়সী নারী বড় বোনের নিষেধ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেন। কমলার মা সুপ্রবাসিনী দেবী কমলার এ সংগ্রামী চেতনায় খুশি হন। কমলার সঙ্গে ছোট বোন মঙ্গলাও বেরিয়ে পড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকালে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যখন লাঠিপেটা শুরু করেন, তখন মঙ্গলা সেই লাঠির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। ততক্ষণে গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কমলা তাঁর বোনের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে গেলে একটি বুলেট এসে তাঁর ডান চক্ষু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে করে কমলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এভাবেই সেদিন বাঙালি জাতির প্রথম নারী ভাষাসৈনিক মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মাহুতি দেন। মহান আত্মত্যাগী এই সাহসী নারী কমলা ভট্টাচার্যকে আমরা কতজনই-বা চিনি?
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনা পর্যালোচনা করলে ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রণকৌশল ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় করা ইত্যাদি একই ধারায় যেন পরিচালিত হয়েছিল। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বায়ান্নর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঘটনা আসামের আন্দোলনকারীদের সাহস জুগিয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তারই পথ ধরে আসামের বাঙালিরা এভাবেই বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এ কে এম শামসুদ্দিন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি, বাঙালি জাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫