Ajker Patrika

আফাল আতঙ্কে হাওরবাসী

বিপ্লব রায়, শাল্লা (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১৫: ২২
আফাল আতঙ্কে হাওরবাসী

দুশ্চিন্তায় সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওরপারের মানুষ। কাটছে নির্ঘুম রাত। বাড়ির চারদিকে পানি। আফাল (ঢেউ) থেকে হাওরপারের বাড়িগুলো টিকিয়ে রাখতে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। এই আফাল এখন হাওর এলাকার মানুষের আতঙ্কের নাম। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি বৃদ্ধিতে আফাল আছড়ে পড়ছে বসতঘরে।

হাওরের উত্তাল আফালের কবল থেকে ঘর রক্ষায় নানা কৌশলে কাজ করেও টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। উপজেলার বড় বড় হাওরের পারে বসবাসরত মানুষের চোখের সামনেই ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। ইতিমধ্যে আফালের আগ্রাসী থাবায় বিলীনের পথে উপজেলার শতাধিক বাড়িঘর। হঠাৎ এমন দুর্ভোগে ভিটেমাটি হারানোর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

ছায়ার হাওর, কালিয়াকোটা, ভান্ডারবিল, বরাম হাওর এলাকায় গেলে চোখে পড়ে মানুষের এমন দুর্দশার চিত্র। ওই এলাকার অধিকাংশ লোকই ঘর ফেলে কোনো জায়গায় যেতে চাচ্ছেন না। তবে উপজেলায় কোনো আশ্রয়ণকেন্দ্র না থাকায় ভোগান্তি বেড়ে গেছে তাঁদের।

উপজেলার মামুদনগর গ্রামের মজনু মিয়া বলেন, ‘রাত-দিন আফালের ভয়ে থাকতে হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে উত্তাল হাওর আমার সব কেড়ে নিয়েছে।’

হরিপুর গ্রামের প্রদ্যুৎ দাস জানান, তাঁদের পরিবারে সদস্য ১১ জন। পরিবারের উপার্জনকারী একজন। এখন কাজ নেই, টাকা নেই। ঘরে চালও নেই। তাই পেট ভরে খাবার খেতে পারেন না।

তিনি বলেন, ‘এত দিন কোনোরকম নিজের বসতবাড়িতে পানিবন্দী অবস্থায় টিকে ছিলাম। এখন আফালের জন্য বসতভিটাও আর রক্ষা করা যাবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

মামুদনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের চারপাশে কচুরিপানা, গাছের ডাল ও বাঁশের পালা দিয়ে আফালের কবল থেকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন কয়েকজন।

বাড়ির লোকজন জানালেন, বানের পানি শরীরে লাগলে চুলকায়। তা ছাড়া রয়েছে সাপ ও জোঁকের ভয়। গেল কয়েক দিন থেকে আফাল শক্তিশালী হয়েছে। তাই ঘরের ভেতরে থাকতে যেমন ভয় হচ্ছে। তেমনি বাড়ি ছেড়ে যেতেও মন চাচ্ছে না। কারণ বাড়ি ছেড়ে গেলে চারপাশে কচুরিপানা দেওয়া যাবে না। এ সুযোগে আফাল বাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দেবে। তাই তাঁরা বসতভিটার মায়ায় বাড়ি ছাড়ছেন না।

নাইন্দ্যা গ্রামের প্রবোধ দাস বলেন, ‘আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হাওরের বিশাল ঢেউ ঘরের বেড়া আর ভিটার মাটি ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, বর্ষার সময় হাওরবাসীর একটাই আতঙ্ক আফাল। এই আফালের কারণে ঘর ভাঙন দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে হাওরপারের এসব গ্রামের জন্য সরকারিভাবে প্রতিরক্ষা দেয়ালের উদ্যোগ নিলে হয়তো হাওরপারে বসবাসরত মানুষেরা কিছুটা উপকৃত হবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, ‘এ সময় হাওরপারের মানুষের জন্য বিপজ্জনক। পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে হাওরে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। আর এই ঢেউয়ের কারণে ঘর বেঁধেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এই বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলা হবে। আগামী মৌসুমে ভাঙন এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিরক্ষা দেয়ালের ব্যবস্থা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত