Ajker Patrika

বাজারের আগুনে ঘি ঢালছে ডলারের দাম

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ০৮: ৩০
বাজারের আগুনে ঘি ঢালছে ডলারের দাম

ভোজ্যতেলের দামে যখন মধ্যবিত্তের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন এতে ঘি ঢালছে ডলার। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন ডলারের ক্রমাগত দাম বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। গতকাল সোমবার টাকার বিপরীতে ডলারের দাম এক লাফে ৮০ পয়সা বেড়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। ফলে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা।

এভাবে দফায় দফায় ডলারের বাড়তি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে বাণিজ্য ঘাটতিতে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি আরেক দফা বাড়তে যাচ্ছে। ডলারের নতুন দামে বিদেশ থেকে যা কিছুই আনা হোক কেন, সবকিছুর জন্য অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে আমদানিকারককে। ডলারের দাম বাড়ার ফলে, রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সুবিধা পেলেও এর তেমন সুফল অর্থনীতিতে পাওয়া যায় না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। সার্বিক বাজার বিবেচনায় ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আমদানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দেশের ডলারের চাহিদা পূরণ ও রিজার্ভ সংরক্ষণে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি ব্যয় পরিশোধের চাপে মার্কিন ডলারের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে বাজারে সরবরাহ না বাড়ায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে ডলারের দাম।’

জানা যায়, শুধু যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাড়ানো হারেই ডলার বিক্রি হচ্ছে তা নয়; বরং ব্যাংকগুলো ওই হারের চেয়ে ব্যাংকগুলো অন্তত ৭-৯ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছে। এতে সরাসরি পণ্যের দামে প্রভাব পড়ছে। আমদানিকারকেরা এ বাড়তি দামের বোঝা চাপাচ্ছেন ভোক্তার ওপর।

এদিকে ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও রপ্তানিতে এর সুফল পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ ডলার দামি হলে, রপ্তানিকারকেরা আগে এই পণ্য বিক্রি করে যে ডলার পেতেন, দাম বাড়ার ফলে তাঁরা একই পণ্য বিক্রি করে আরও বেশি ডলার পাবেন–এটাই স্বাভাবিক। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলারের দাম বাড়ার ফলে যেটুকু লাভ হওয়ার কথা, তাঁদের রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতেই তা চলে যাচ্ছে। তাঁদের মতে, ডলারের দাম বাড়ার লাভ তাঁদের কপালে সামান্যই জোটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএয়ের সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যোগফল আমদানি ব্যয়ের তুলনায় কম হওয়ায় ডলারের দাম বেড়েছে। রিজার্ভে টান পড়েছে। ডলারের নতুন মূল্য মজুত বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও তাতে রপ্তানিকারকদের খুব একটা লাভ হবে না।’

পাশাপাশি, ডলারের দাম বাড়ার ফলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন বলে ধরে নেওয়া হয়। আগে বিদেশ থেকে ডলার পাঠিয়ে যে টাকা পেতেন প্রবাসীদের স্বজনেরা, এখন তার চেয়ে বেশি পাবেন। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে বাইরে ডলারের রেট বেশি হওয়ায় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে জমা না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাহলে প্রবাসী আয় রিজার্ভে অবদান রাখবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৮ কোটি ডলার।

তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ব্যবহার কমাতে এরই মধ্যে গাড়ি, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনারসহ বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এসব পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকেও ডলারের অপচয় ঠেকাতে কম দরকারি আরও যেসব পণ্য রয়েছে, তার তালিকা করে আমদানি নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে। এরই মধ্যে ডলার বাঁচাতে সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ডলারের সংশ্লেষ আছে এমন কম দরকারি উন্নয়ন প্রকল্পও আপাতত স্থগিত করতে যাচ্ছে সরকার। যদিও এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ডলারের অতিমূল্যায়ন ও টাকার দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না। মূলত বাজারে ডলারের বাড়তি চাহিদার কারণে এর দাম বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১২ মে পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫০২ কোটি (৫.০২ বিলিয়ন) ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্য ব্যয়বহুল হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে জমানো ডলার তথা বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে। গত বছরের ২৪ আগস্ট রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত