Ajker Patrika

মুদিদোকানির অতিথি শালিক

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
মুদিদোকানির অতিথি শালিক

অতিথি আপ্যায়নে বাঙালির জুড়ি নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে এখানকার মানুষের আতিথেয়তার গল্প লেখা আছে ভিনদেশি পরিভ্রাজকদের ভ্রমণকাহিনিতে। তবে পাখিকে আতিথেয়তা দেওয়ার খবর খুব একটা শোনা যায় না। এই বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন বগুড়ার এক মুদিদোকানি। তাঁর নাম হারেস উদ্দিন।

প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক অতিথি হয়ে আসে হারেসের মুদিদোকানে। চালের ওপর বসে তাঁর দেওয়া খাবার খেয়ে তৃপ্ত মনে উড়াল দেয় পাখিগুলো। এদের আপ্যায়ন করে তৃপ্তি পান হারেস উদ্দিন। পরম যত্ন আর আদরে গত ১০ বছর তিনি শালিকগুলোকে আপ্যায়ন করে যাচ্ছেন। নিদারুণ নির্ভরতা, আস্থা এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ পাখিগুলো নিঃসংকোচে গ্রহণ করছে তাঁর আতিথেয়তা।

হারেস উদ্দিনের পাখিপ্রেমের এই সুন্দর দৃশ্য দেখা যাবে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর গ্রামে। ওই গ্রামের রেলওয়ে বাজারে ২০০০ সালে একটি মুদিদোকান দেন হারেস। প্রতিদিন সকালে দোকানের চালে বসা কয়েক হাজার পাখিকে খাবার ছিটিয়ে দেন তিনি। কোনো দিন চানাচুর, কোনোদিন সেমাই, কোনো দিন দেন রান্না করা খিচুড়ি। এভাবে প্রতিদিন ন্যূনতম তিন কেজি খাবার দেন পাখিদের।

 শুরুটা হারেসের মাধ্যমে হলেও তাঁর এই জীবপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে মাস তিনেক আগে বাজারের অন্য দোকানিরাও পাখিদের খাবার দিতে শুরু করেছেন। পাখিরাও তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে উড়ে যায়।

ফিরে আসে পরদিন একই সময়ে, একই স্থানে। সম্প্রতি এক সকালে সুখানপুকুর রেলওয়ে বাজারে গিয়ে দেখা যায় এই চোখজুড়ানো দৃশ্য। পাড়কাকড়া ভাংরিপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে হারেস উদ্দিন তাঁর দোকানের চালে ছুড়ে মারছেন খাবারের দানা। কিচিরমিচির শব্দে এক চাল থেকে আরেক চালে উড়ে উড়ে খাবার খাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক। যেন পাখিদের মেলা বসেছে বাজারে। প্রথমে দেখলে মনে হবে, যেন মুক্ত শালিকের খামার দিয়েছেন হারেস উদ্দিন।

দুই সন্তানের জনক হারেসের মুদিদোকানই উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম। সেখান থেকে প্রতিদিন ২৫৫ টাকা ব্যয় করেন পাখিগুলোর জন্য। তিনি জানান, ২০০২ সালে তিনি প্রথম শুরু করেন পাখিকে খাবার খাওয়ানো। বর্তমানে এখানে তিন থেকে চার হাজার পাখি খেতে আসে। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন কেজি খাবার দেন তিনি। তবে শুধু খাবার দিয়েই থেমে থাকেন না হারেস, কেউ যাতে পাখি শিকার না করে বা তাড়িয়ে না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখেন। বাজারের অন্যান্য দোকানি পাখির এই আনাগোনাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। কেউ এদের বিরক্ত করে না। বরং সম্প্রতি কেউ কেউ পাখিদের খাবার দিতেও শুরু করেছেন হারেসের দেখাদেখি।

বাজারের চা-দোকানি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমি দেখছি হারেস পাখিদের খাবার দেন। দেখে ভালোই লাগে। এখন তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও পাখিদের খাবার দিচ্ছেন।’ স্থানীয় যুবক শাহনুর শাকিল বলেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা হাঁটতে এসে পাখিদের খাওয়ানোর দৃশ্যটা আমার চোখে পড়ে। এক কথায় অনন্য, অসাধারণ এ কাজ। হারেসের জীবপ্রেম আমাদের জন্য অনুসরণীয় এক উদাহরণ।’ পাখিদের আপ্যায়নকারী হারেস উদ্দিন বলেন, ‘পাখিরা খায়, কিচিরমিচির করে। এটা দেখেই আমার প্রশান্তি আসে মনে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পাখিগুলো এসে জড়ো হয়। দোকানের ভেতরে ঢুকে খাবার খোঁজে, কিচিরমিচির করে, বিরক্তও করে। সাতটার দিকে খাবার দিলে খেয়ে উড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের পাশে ব্রাজিলের তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত