Ajker Patrika

আমদানি হুমকির পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ১১: ৪০
আমদানি হুমকির পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

সপ্তাহ দুয়েক আগেও রাজধানীর খুচরা বাজার থেকে ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন ৪৫-৫০ টাকায়। বাড়তে বাড়তে গতকাল বৃহস্পতিবার সে দাম পৌঁছেছে ৮০-৮৫ টাকায়। কোথাও আবার একই দিনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচ টাকা দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির চক্র থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ঢাকার বাইরের ক্রেতারাও। ভারত সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের হিলিতে তিন-চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

অথচ দুই দিন আগেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কৃষকেরা যেন ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তবে দাম না কমলে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিও বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমাতে পারছে না।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম থেকে বাড়তি দামে দেশি পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি না হলে পরে দাম আরও বাড়তে পারে।

এদিকে করপোরেটসহ নানা সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের লোকজন যখনই ভারতে বৃষ্টির খবর পাচ্ছে, তখনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিও আরেকটি কারণ।

সংশ্লিষ্টরা যখন একে অপরকে দায়ী করছেন, তখন প্রতিদিনকার রসনায় ব্যবহৃত এ খাদ্যপণ্য কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। গতকাল সকালে রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ টাকা। বিকেল গড়াতেই তা ৮৫ টাকায় পৌঁছায়। রাজধানীতে পেঁয়াজের ঝাঁজের মতো ঝাল বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। চলতি মাসের শুরুতে কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকার মরিচ এখন ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া রাজধানীর রামপুরা, কচুক্ষেত, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং সিপাহীবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে, আবার কয়েকটির দাম বেড়েছে। কাচা পেঁপে ১০-২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫, টমেটো ৬০-৬৫ টাকায়। বাঁধাকপি, ফুলকপি প্রতিটির দাম ৬০-৭০ টাকা।

সকালে রাজধানীর রামপুরা বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছিলেন স্কুলশিক্ষিকা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বছরের এ সময়টায় পেঁয়াজ-মরিচের এত দাম আগে কখনো দেখিনি। সবকিছুর দামই লাফিয়ে বাড়ছে। বাসার বুয়া বলেছে, বেতন বাড়াতে। তার বেতন বাড়াতে গেলেও তো আগে নিজের বেতন বাড়তে হবে।’

পেঁয়াজ, মরিচসহ কিছু সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সিপাহীবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আমদানি কম, তাই দাম বাড়ছে। খরার কারণে অনেক গাছ নষ্ট হইছে। সে জন্য মরিচসহ কিছু সবজির দাম বাড়ছে।

দিনাজপুরের হিলির ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ বলেন, দুদিন আগে তিনি পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৫৫ টাকায়। এখন সেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৬৮ টাকায়। বিক্রি করছেন ৭৩ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কিছুই করার নেই। এ সময় ব্যবসা করছেন মজুতদারেরা। তাঁরা বাজারের অবস্থা দেখে খুব কম পরিমাণ পেঁয়াজ ছাড়ছেন। এ কারণে দাম বাড়ছে।

হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, সরকার আমদানি বন্ধ রাখায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের আড়তদারেরা মজুত করার সুযোগ পাচ্ছেন। সাধারণ কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এই মুহূর্তে সরকারকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। 

সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ
পেঁয়াজের দামের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, চলতি বছর পেঁয়াজ চাষের খরচ বেড়েছে। কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ গত বছর ছিল ২২ টাকা, এবার হয়েছে ২৮ টাকা। গত রমজান পর্যন্ত দাম ঠিক ছিল। কিন্তু গত এক মাসে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, ভারত থেকে আমদানি শুরু হলেই আবার দাম কমে যায়। এ বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত আসছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত