Ajker Patrika

হাতি চাঁদা তোলার সাথি

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
হাতি চাঁদা তোলার সাথি

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডের সামনের মুদিদোকানি রমজান আলী। দোকানের সামনে হঠাৎ হাজির বিশালদেহী একটি হাতি। পিঠে থাকা মাহুতের ইশারা-ইঙ্গিতে হাতিটি শুঁড় এগিয়ে দিল দোকানের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানদার রমজান ২০ টাকা শুঁড়ে গুঁজে দিলেন।
টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে রমজান আলী বলেন, ‘টাকা না দিলে হাতিটি যাবে না। এ ছাড়া অনেক সময় ভাঙচুরও করে। এ জন্য ঝামেলা হওয়ার আগেই ২০ টাকার বিনিময়ে বিদায় করলাম।’

এভাবেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আশপাশের সংযোগ সড়কে হাতি দিয়ে চলছে একধরনের চাঁদাবাজি। এ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি মহাসড়কের কয়েকটি বাসস্ট্যান্ড, বাজারসহ যানবাহনে পৃথক দুটি হাতি দিয়ে টাকা তুলতে দেখা গেছে। হাতির পিঠে বসে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন মাহুত। তাঁর নির্দেশেই এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যাচ্ছে হাতিটি। তারপর শুঁড় এগিয়ে দিচ্ছে দোকানির কাছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত শুঁড় সরাচ্ছে না হাতিটি। টাকা না দিলে চিৎকারও করছে হাতিটি, সঙ্গে ভয় দেখিয়ে দ্রুত টাকা দেওয়ার তাগাদা দিচ্ছেন মাহুত। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে দোকানের ধরন অনুযায়ী ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। শুধু দোকানেই সীমাবদ্ধ নয়, সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের পথরোধ করেও টাকা তুলতে দেখা যায়।

কথা হয় বাসচালক আমজাদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই বাস থামার সময় হাতি দিয়ে দোকানে ও যানবাহন থেকে চাঁদা তুলতে দেখেছেন তিনি। বাসের সামনে হাতি পথ আটকিয়ে দাঁড়ানোয় ৫০ টাকা দিয়েছেন আমজাদ। মহাসড়কের পুখুরিয়া বাজারের কাইয়ুম কসমেটিকসের সামনে অবস্থান নেয় হাতিটি। দোকানদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাহুত বলেন, ‘ভাই, জলদি টাকা দেন। নইলে হাতি রাগ করবে। সবার ঘরের সামনে হাতি যায় না। আপনার কপাল ভালো। দেন দেন ভাই, তাড়াতাড়ি করেন।’

ঘিওরের তরা ব্রিজ এলাকায় কথা হলে হাতির মাহুত নূরুল ইসলাম বলেন, ‘হাতির ভরণপোষণের জন্য সবাই খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। খুশি হয়ে টাকা দিলে তো চাঁদাবাজি হয় না। আমরা কারও ওপর কোনো ধরনের জোরাজুরি করি না। কারও ইচ্ছে হলে দেয়, মন না চাইলে দেন না।’ একটি অনুষ্ঠানের কাজে রাজবাড়ি থেকে হাতিটি ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ইউএনও হামিদুর রহমান বলেন, হাতি বা বন্য প্রাণী ব্যবহার করে সড়কে চাঁদাবাজি করা উচিত নয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে লোক পাঠানো হয়েছিল। টের পেয়ে তাঁরা (মাহুত) দ্রুত ঢাকার দিকে চলে গেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত