Ajker Patrika

বেআইনি পণ্য বেচে ফেঁসে যাচ্ছে দারাজ

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৮
Thumbnail image

দারাজ প্ল্যাটফর্মে যেসব ভার্চুয়াল পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোকে অবৈধ বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এসব ভার্চুয়াল পণ্য বিক্রিতে সরকারের কোনো অনুমোদন নেই। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা ডলার কার্ড দিয়ে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা করাও যাবে না। এভাবে কেনাবেচা করা অর্থ পাচারের শামিল, এতে সরকারও রাজস্ব হারাবে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি জানিয়েছে, এ-সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে নেমে দারাজের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর দারাজের ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশের তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ই-কমার্সে অবৈধ ডিজিটাল পণ্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে চলতি মাসেই এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ব্যবসা করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে করতে পারবে।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সূত্র বলছে, দেশে মোট অবৈধ ২৬ ধরনের ডিজিটাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বছর হিসেবে এ পণ্য বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে, যার সবটাই অবৈধ। এই বড় ভার্চুয়াল বাজারের ১০ শতাংশ বিক্রি করছে এফ-কমার্স (ফেসবুক পেজ থেকে বিক্রি), আর ৯০ শতাংশ বিক্রি করছে ই-কমার্স সাইট দারাজ।

প্রতিষ্ঠানটি এতদিন বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড, ফিক্সড কার্ড ও রিচার্জেবল কার্ড, বিদেশি ই-কমার্সের গিফট কার্ড বিক্রি করে আসছিল। যা দিয়ে অ্যামাজন কিংবা আলিবাবার মতো ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনা যায়। তা ছাড়া তাদের ভার্চুয়াল পণ্যের মধ্যে আরও আছে নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনসহ বিভিন্ন চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশন, সফটওয়্যারের অ্যাকটিভেশন ও সাবস্ক্রিপশন, বিভিন্ন গেমস ও তার ডেভেলপমেন্ট টুলস।

সিআইডির কর্মকর্তাদের দাবি, এসব ভার্চুয়াল পণ্য নিয়মবহির্ভূত আমদানি করে দারাজ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। আবার বিদেশ থেকে আনা এসব ভার্চুয়াল পণ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থও বিদেশে পাচার করেছে।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের তদন্তে দারাজের বিরুদ্ধে ৮-১০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিটা হাতে পেলে সেভাবেই মামলার প্রস্তুতি নেবে সিআইডি।

দারাজের বিরুদ্ধে তদন্তে নামা সিআইডির এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ ভার্চুয়াল পণ্য বিক্রির অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের ‘হেড অব কর্মাশিয়াল’ কামরুল ইসলাম, ‘হেড অব স্টেকহোল্ডার’ শামসুল ইসলাম মাসুদসহ ১৪-১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কীভাবে তারা ভার্চুয়াল পণ্যগুলো দেশে এনে বিক্রি করছেন, আর কীভাবেই বা এর মূল্য পরিশোধ করছেন।

সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ভার্চুয়াল পণ্য কেনাবেচার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে পণ্য দেশে আনার বিষয়ে তারা জানিয়েছেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে মেইলের মাধ্যমে কার্ডের নম্বর ও পিন বা পণ্যের কোড নম্বরগুলো আমদানি করেন। পরে সেগুলো বিকাশ, নগদ এবং রকেটের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বিক্রি করতেন।

সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধভাবে আমদানি করা করা এসব বিদেশি মুদ্রা ই-মানিতে রূপান্তরিত করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ব্যাংক ছাড়া কেউ বৈধভাবে টাকা ডলারে রূপান্তর করে বিদেশে পাঠাতে পারেন না।

দারাজে অবৈধ পণ্য বিক্রি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে, দারাজ তাদের পিআর সংস্থার ফোরথট পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ফোরথট পিআরয়ের মিডিয়া কর্মকর্তার কাছে লিখিত আকারে প্রশ্ন পাঠানোর পর প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস সায়ন্তনী ত্বিষা আজকের পত্রিকাকে লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দারাজ কোনো পণ্য কেনাবেচা করে না, শুধু ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইড করে থাকে। সুতরাং পণ্য কেনাবেচার আর্থিক লেনদেনের দায় দারাজের ওপর পড়ে না, বরং তা বিক্রেতার ওপর বর্তায়। প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইডার হিসেবে যে ট্যাক্স দিতে হয়, দেশের প্রচলিত আইন মেনে দারাজ সব সময় তা দিয়ে আসছে।

দারাজ জানায়, ডিজিটাল পণ্য কীভাবে বেচাকেনা করতে হবে, গত ৬ জানুয়ারি সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিআইডি যে সকল বিষয় নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে, তাতে সহায়তার জন্য আইন মান্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্ত সিআইডিকে প্রদান করেছে। এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও দারাজ সর্বাত্মক সহায়তা করবে যেকোনো আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল আইটেম দেশীয় মুদ্রায় বিক্রির জন্য প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ব্যবসা বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন নীতিমালা লঙ্ঘন হবে, যদি না এর বিক্রেতাকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এর মূল্য বিদেশে পাঠানো না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত