Ajker Patrika

টাকা-সময় নষ্ট, মেলে না তথ্য

অরূপ রায়, সাভার
টাকা-সময় নষ্ট, মেলে না তথ্য

দিন থেকে বছর গড়ায়, গাঁটের পয়সাও শেষ হয়, তবু তথ্য মেলে না। তথ্যের জন্য আবেদন করে এভাবে হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নাগরিকেরা। এ জন্য তথ্য কমিশনের কিছু সিদ্ধান্ত ও কর্মকর্তাদের আইন না মানার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ধারা ৮ (১) অনুযায়ী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ও অন্য দেশের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে—এমন তথ্য ছাড়া যেকোনো তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। আবেদনের ২০ কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য না দিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থার কথাও বলা রয়েছে আইনে।

গত বছরের আগস্টে সাভার ও ধামরাইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য এবং ভাউচার চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন এ প্রতিবেদক। এতে তথ্য না পেয়ে আপিল ও অভিযোগ করেও কাঙ্ক্ষিত তথ্য মেলেনি। 
এদিকে তথ্যের জন্য ওই দুই দপ্তরের আবেদন এবং আপিল করতে ছাপা খরচসহ ডাকমাশুল ও ফটোকপি বাবদ খরচ হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ টাকা। এতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ ঘণ্টা। একইভাবে অভিযোগ করতে খরচ হয় ৭৮০ টাকা। অভিযোগ দায়ের ও শুনানিতে সময় গেছে আরও ১৬ ঘণ্টা।

শুনানি শেষে যাচিত সব তথ্য সরবরাহের জন্য আদেশ দেয় তথ্য কমিশন। কিন্তু সাভার ও ধামরাইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। এদিকে তথ্য না পেয়ে উভয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি, ক্ষতিপূরণ ও তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুনরায় তথ্য কমিশনে অভিযোগ করা হয়। এতে ২ হাজার ৮৫৫ টাকা খরচ হওয়ার পাশাপাশি ব্যয় হয় ১১ ঘণ্টা।

সরকারের দুটি দপ্তরের তথ্যের জন্য গত এক বছরে ৪৩ কর্মঘণ্টা ব্যয় ও ৪ হাজার ৭৯৯ টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত তথ্য পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সাভারের পিআইও কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেয় তথ্য কমিশন, যা তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী। তা ছাড়া, ওয়েবসাইটে কোনো তথ্যও পাওয়া যায় না।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে এ প্রতিবেদক ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির থাকতে না পারায় ধামরাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি খারিজ করে দেওয়া হয়। তবে কোনো কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে কমিশন থেকে ফোন করে অংশগ্রহণের চেষ্টা করা হয়। তাতেও কাজ না হলে পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়।

শুধু এই দুটি দপ্তরেই নয়, অন্যান্য দপ্তরে তথ্য চেয়েও এ প্রতিবেদকসহ নাগরিকেরা হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরে এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ৪০০ আবেদন করা হয়েছে। এসব আবেদনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করেও সব তথ্য পাওয়া যায়নি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য প্রদানে অনীহার বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গোপনীয়তার সংস্কৃতিতে ডুবে আছেন। তাঁরা মনে করছেন, তথ্য ধরে রাখা তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত দায়িত্ব, যা এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে বা তথ্য না দিলে, তথ্য কমিশন তথ্য প্রদানে নির্দেশনা প্রদান করবে। কিন্তু তথ্য কমিশন সেটা না করে যদি তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের সিদ্ধান্ত দেয়, তা হলে ধরে নিতে হবে কমিশন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যাঁরা কমিশনে দায়িত্বে আছেন তাঁদের সবাই একসময় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একধরনের স্বগোত্রীয় মনোভাব রয়েছে। এতে রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য কমিশন নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত