Ajker Patrika

বেলকুচির তাঁতের শাড়ি

সবুজ সরকার, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫১
বেলকুচির তাঁতের শাড়ি

গ্রামের নাম তামাই, বওড়া, শেরনগর, গাড়ামাসী, চনন্দগাঁতী, চালা। উপজেলা বেলকুচি, জেলা সিরাজগঞ্জ। এসব গ্রামে গেলেই দেখতে পাবেন নারী-পুরুষদের কেউবা নাটাই ঘুরিয়ে সুতা কাটছেন, কেউ নলিতে সুতা ভরছেন, কেউবা কাপড় ছেঁটে কাপড় গুছিয়ে রাখছেন আবার কেউ তাঁত যন্ত্রে খটাখট খটাখট শব্দে বুনে চলেছেন কাপড়। সুতির শাড়ি ও লুঙ্গি। কোনো কোনো গ্রামে গেলে পাবেন মেয়েদের থ্রিপিস। এ এলাকায় থ্রিপিস বানানোর ইতিহাস নতুন হলেও শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এমন হতেই পারে, আপনি যে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শাড়ি বা লুঙ্গি পরে আছেন, তা বেলকুচির কোনো অখ্যাত কারখানায় তৈরি হয়েছে।

কত পুরোনো? বেলকুচিতে সেই গল্পের শুরুই হয় ‘আমার দাদার বাপে শুরু করছিল’ বাক্য দিয়ে। তারপর থেকে চলছে। দাদার বাবা বা পর দাদার আমল কিংবা তারও বহু আগে থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁতশিল্পের সূচনা। এককালে এসব এলাকায় কাপড় বোনা হতো খটখটি বা গর্ত তাঁতে। এখন বোনা হয় চিত্তরঞ্জন বা জাপানি তাঁতে মোটর লাগিয়ে। আজ থেকে বছর দশ বা কিছু বেশি আগে এই চিত্তরঞ্জন তাঁতগুলোয় মোটর ছিল না। তাঁতিরা সে তাঁতে হাতেই বুনতেন শাড়ি বা লুঙ্গি। এসব তাঁতকে ইংরেজিতে বলে হ্যান্ডলুম। ঢাকা শহরে হ্যান্ডলুমের শাড়ির বিশেষ কদর।

পুরো সিরাজগঞ্জ জেলায় লাখখানেক তাঁতি ও তাঁতসংশ্লিষ্ট মানুষের বসবাস। তার মধ্যে বেশি তাঁতি বসবাস করেন এনায়েতপুর ও বেলকুচি উপজেলায়। এসব এলাকায় এখন তৈরি হয় সুতির কাতান, হাফ সিল্ক শাড়ি, গ্যাস শাড়ি। এককালের জনপ্রিয় জনি প্রিন্ট, প্রাইডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শাড়ি তৈরি হতো এনায়েতপুর-বেলকুচিতে। এখনো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় স্ট্যান্ডার্ড, আমানত শাহ ব্র্যান্ডের লুঙ্গিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুতির শাড়ি ও লুঙ্গির সিংহভাগ তৈরি হয় এনায়েতপুর-বেলকুচিতে। তারপর সেগুলো যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এসব এলাকার সুতির শাড়ি কিনে সেগুলোতে হাতের কাজ করে বিক্রি করার এক বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে রাজধানীতে।

একজন তাঁতি সাধারণত হস্তচালিত তাঁতে বা হ্যান্ডলুমে এক দিনে একটি শাড়ি বুনতে পারেন। আর পাওয়ারলুমে দিনে একাধিক শাড়ি বোনা সম্ভব। তবে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা শাড়ি বুনতে সময় লাগে বেশি।

বেলকুচির পাইকারি বিক্রেতা রাজরানী টেক্সটাইলের মালিক আব্দুল্লাহ জানান, ‘দেশের দূরদূরান্ত থেকে পাইকারি শাড়ি কাপড় কেনার জন্য নিয়মিত ক্রেতারা আসেন বেলকুচিতে। পাশাপাশি নতুন ব্যবসায়ী ও বিদেশিরাও আসেন শাড়ি কিনতে।’ বেলকুচি বা এনায়েতপুরে শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয় পাইকারি।

দরদাম

সুতি জামদানি ও কাতান শাড়ি ৭০০-১ হাজার ৫০০, গ্যাস শাড়ি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, রেশম শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার, সুতি শাড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত