Ajker Patrika

সুনামগঞ্জ-৩: মন্ত্রী মান্নানকে টপকাতে চান ডন

জুয়েল আহমদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) 
সুনামগঞ্জ-৩: মন্ত্রী মান্নানকে টপকাতে চান ডন

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পাস করতে পারেননি সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন। গতবার দলীয় মনোনয়ন পাননি, অংশ নেননি নির্বাচনেও। তবে আগামী নির্বাচনের আগে মাঠে এবং তদবিরের দিক থেকে বেশ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে ডনকে। যদিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পেছনে ফেলতে হবে বর্তমান এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। সেই কাজটা এত সহজ হবে না। আর মন্ত্রী মান্নানকেও মনোনয়ন পেতে এবার বেশ ঘাম ঝরাতে হবে।

শান্তিগঞ্জ এবং প্রবাসী-অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩। আসনটিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যাপক প্রভাব। এই আসন থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আজাদ। ওই সময় আবার তিনি পান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। সাফল্যের সঙ্গে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় ২০০৫ সালে মারা যান আব্দুস সামাদ আজাদ। পরে ওই শূন্য আসনে উপনির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী এমপি হন।

এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এবারও নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ভোটার এবং আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলছেন, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের রয়েছে দুটি বলয়। আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের আলাদা করে নিজস্ব কর্মী বাহিনী রয়েছে। এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলাসহ পুরো সুনামগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবারও দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তবে মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগের এই আসনে মান্নানের বিকল্প হিসেবে নেতা-কর্মীরা ডনকেই দেখছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এক বছর ধরে এলাকায় কাজ করছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক।

নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় চায়। আওয়ামী লীগ যাঁকেই মনোনয়ন দেবে, তাঁর জন্যই কাজ করব। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যে-ই নৌকা পাবেন, তাঁকে ভোট দিন।’ 
আজিজুস সামাদ আজাদ ডন বলছেন, ‘জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। মনোনয়ন পাই বা না পাই, সেটা বড় কথা নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে দল ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন এবং পরাজিত হন। এবারও শাহিনুর পাশা চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে প্রবাসে থাকা নেতা-কর্মীসহ একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করবেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে আলোচনায় আছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তবু তাঁর পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীরা এই আসনের জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মল্লিক মঈন উদ্দিন সুহেল বলেন, ‘আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতা ছাড়েন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে বিএনপি থেকে যাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তিনিই নির্বাচনে বিজয়ী হবেন।’

দুই উপজেলার একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁদের বেশির ভাগই বলছেন, এবার আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে এবং আওয়ামী লীগের দুজন মুখোমুখি দাঁড়ায়, তাহলে এই আসনে ভোটের খেলা জমে উঠবে। বিএনপি নির্বাচনে এলেও মাঠ থাকবে জমজমাট। বেশির ভাগ ভোটার মন্ত্রী মান্নানের জয়ের সম্ভাবনাই দেখছেন। তবে আরেক দল বলছে, বাবার কারণে মাঠে এবং কেন্দ্রে বেশ প্রভাব রয়েছে ডনের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত