Ajker Patrika

মৃত্যুর ২১ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
মৃত্যুর ২১ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত

পাঁচ বছরের কারাদণ্ড থেকে বাঁচতে উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন আব্দুর রহমান। এরপর আরও ৯ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। সেই আপিলের কোনো কূলকিনারা হয়নি। মৃত্যুর ২১ বছর পর এসে পরিবার জানতে পারল, তিনি নির্দোষ ছিলেন।

আব্দুর রহমান ছিলেন বগুড়া সদরের দেশমাসিয়াল গ্রামের বাসিন্দা। চাকরি করতেন বগুড়া সদরের সার গুদামরক্ষক হিসেবে। গুদাম থেকে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৪৯৪ টাকার সার ঘাটতি হওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ওই মামলায় ১৯৯১ সালে বিচারিক আদালত তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে ঘাটতি হওয়া সারের মূল্যের সমপরিমাণ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। আর পরিশোধে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত ছয় মাসের দণ্ড ভোগ করার নির্দেশ দেন আদালত। রায়ের পর কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ১৯৯১ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন উচ্চ আদালতে। আর সেই আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১ বছর পর, যাতে খালাস দেওয়া হয়েছে আব্দুর রহমানকে। তবে ২০০১ সালে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুর আগে জেনে যেতে পারেননি, তিনি নির্দোষ।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশে পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে গত বছর এটি শুনানির জন্য ওঠে। বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। গত বছর মামলাটি নিষ্পত্তি হলেও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। রায়ের সেই কপি আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, ঘটনাকাল বিবেচনায় এই মামলার বয়স ৩৯ বছর। আপিল দায়েরের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আপিলকারী পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী বা রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বা দুর্নীতি দমন ব্যুরো কিংবা কমিশন মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী আসিফ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এসব বিষয়ে আইনজীবীদের খেয়াল রাখতে হয়। তার চেয়েও বেশি খেয়াল রাখতে হয় আসামিকে। সাধারণভাবে আসামিরা একবার জামিন পেয়ে গেলে আর খোঁজ রাখে না। জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে আসামি একবার আপিল করে জামিন পেয়ে গেলে আর খোঁজ নেয় না। আমাদের সামনে যত মামলা আসছে, আমরা চেষ্টা করছি নিষ্পত্তি করার। এখন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকেও এসব পুরোনো মামলা বের করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’ আব্দুর রহমানের ৬৬ বছর বয়সী স্ত্রী হাজের খাতুন এখনো বেঁচে আছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিনি অনেকবার বলেছেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। এখন খালাস পেয়েছেন শুনে ভালো লাগছে, তবে তিনি শুনে যেতে পারলেন না।’

হাজেরা খাতুন আরও বলেন, ‘মামলায় সাজা হওয়ার কারণে তিনি শিক্ষিত হলেও ভালো চাকরি হয়নি। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে পাঁচ ছেলে-মেয়েকে অনেক কষ্টে মানুষ করতে হয়েছে। এর জন্য বাবার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। আমি চাই, আমার স্বামী সরকারি যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতেন, তা যেন আমাদেরকে দেওয়া হয়। তাহলে হয়তো শেষ বয়সে একটু ভালো থাকতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত