Ajker Patrika

আধুনিক জবাইখানা স্বপ্নই রয়ে গেল

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আধুনিক জবাইখানা স্বপ্নই রয়ে গেল

স্যাঁতসেঁতে মেঝে। ঘরের কোনায় পানির কুয়া। এক পাশে বাঁধা একটি গরু। অন্য পাশে জমাট রক্ত আর আবর্জনার স্তূপে ভরা ড্রেন। ছড়িয়ে রয়েছে জবাই করা পশুর নাড়িভুঁড়ি। উৎকট গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার দশা।

এমন পরিবেশ রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাশের জবাইখানায়। এই জবাইখানার মালিকানায় রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মিরপুর-১১-এর নিউমার্কেট সোসাইটি মার্কেটে ডিএনসিসির আরেক জবাইখানার চিত্রও একই। মহাখালীতে ডিএনসিসির আরেকটি জবাইখানা থাকলেও তা অচল। দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জবাইখানা নিয়ে সরল স্বীকারোক্তি করেছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আধুনিক জবাইখানা করার স্বপ্ন ছিল, এখন পর্যন্ত তা করতে পারিনি।’

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) শতকোটি টাকা ব্যয়ে হাজারীবাগের গজমহল ও কাপ্তানবাজারে আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করলেও এখনো চালুই করতে পারেনি। গজমহলে নির্মিত জবাইখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহ আলম বলেন, কেন চালু হচ্ছে না, তা তিনি জানেন না।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ডিএসসিসির দুই জবাইখানার মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে, আরেকটির কাজ শেষ পর্যায়ে। হাজারীবাগের জবাইখানার জন্য ইজারাদার খোঁজা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুসারে, রাজধানীতে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পশু জবাই করা হয়। এর মধ্যে জবাইখানায় জবাই হয় হাতে গোনা কিছু পশু। অথচ পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১-তে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান ব্যতীত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জবাইখানার বাইরে কোনো পশু জবাই করতে পারবে না।’

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘যে যেভাবে পারছেন দোকানের সামনে পশু জবাই করছেন। ভেটেরিনারি বিভাগ কাগজে থাকলেও কার্যক্রম নেই। ফলে কী খাচ্ছি, কী খাওয়াচ্ছি তার কোনো জবাবদিহি নেই। কিন্তু পশুপ্রতি ঠিকই টাকা আদায় করে সিটি করপোরেশন।’

তবে ডিএনসিসির ভেটেরিনারি কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান বলেন, ডিএনসিসির দুই জবাইখানায় প্রতিদিন এক শরও কম পশু জবাই হয়। অন্য জায়গায় পশু জবাইয়ের কোনো তথ্য নেই। ফিও পায় না সিটি করপোরেশন।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করলে মাংসবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পশু জবাই করতে হবে। জবাইয়ের আগে অবশ্যই পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। না হলে জবাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত এবং যাঁরা এ মাংস খাবেন, সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন।’ 

আধুনিক জবাইখানার নতুন উদ্যোগ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ১৮টি জেলায় একটি করে আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা হবে। এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।

এলডিডিপির উপপ্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) পার্থ প্রদীপ সরকার বলেন, বড় তিন সিটিতে আধুনিক পশু জবাইখানা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিশ্বব্যাংকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। তারা অনুমোদন দিলেই টেন্ডার হবে। জেলা পর্যায়ে স্থান নির্বাচনসহ কিছু জটিলতা রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘সচেতনতা বাড়াতে কসাইদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। রাস্তাঘাটে পশু জবাই থেকে বিরত রাখতে আমরা আধুনিক জবাইখানা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত