Ajker Patrika

মাদকের বাহক আটকে ফোন জব্দ নয় কেন

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
মাদকের বাহক আটকে ফোন জব্দ নয় কেন

মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব অভিযানে মাদকের বাহক আটক হয়, উদ্ধার হয় মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন যানবাহনও। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জব্দ হয় না কোনো মোবাইল ফোন। একের পর এক মাদক মামলায় মোবাইল ফোন জব্দ না হওয়ার তথ্য পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ঢাকার একটি আদালত। আদালত বলেছেন, মাদক কারবারিদের মোবাইল ফোন নম্বর না পাওয়ায় কল ডিটেইলস রেকর্ড বা সিডিআর বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকছে না।

আদালত সূত্র বলছে, মাদকের একাধিক মামলা বিশ্লেষণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ২৯ আগস্ট একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। সে চিঠিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার, ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

আদালতের ওই চিঠিতে বলা হয়, অধিকাংশ মাদক মামলায় পুলিশ, র‍্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আসামিদের কাছে থেকে শুধু মাদক উদ্ধার ও জব্দ দেখায়। কিছু কিছু মাদক মামলায় মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বড় বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান জব্দ করতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁদের কাছে থাকা কোনো মোবাইল ফোন উদ্ধার ও জব্দ দেখানো হয় না। কিছু কিছু মামলায় তিন-চারজন আসামি গ্রেপ্তার থাকলেও তাঁদের কারও কাছেই মোবাইল ফোন পাওয়া যায় না। বিষয়টি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। 

সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড বা সিডিআর বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন, কার সঙ্গে ফোনে কত মিনিট কথা বলেছেন, তা জানতে পারেন। কোথায় থেকে যোগাযোগ হয়েছে সেটাও শনাক্ত করতে পারেন। যার ফলে এসব নম্বরের মধ্য থেকে কারও সেই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে থাকেন তদন্তকারীরা ব্যক্তিরা। কিন্তু ফোন জব্দ না হওয়ায় মাদক কারবারিদের ক্ষেত্রে এসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে আটকের পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন না। এর পেছনে মূল কারণ মাদক মাফিয়াদের আড়ালে রাখা। বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অপরাধবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ দাঁড় করাতে চাইলে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক একইভাবে কোনো অপরাধীকে বাঁচাতে চাইলেও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেললে তাঁকে ছাড় দেওয়া যায়। তদন্তকারীদের উচিত মামলার আলামত হিসেবে এই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা মাধ্যমগুলোকে মামলার প্রধান আলামত হিসেবে আমলে নেওয়া।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে তা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, আসামির মোবাইল ফোন পেয়েও তা জব্দ না করা, জেনেশুনে আলামত নষ্ট করার মতো অপরাধ। এই অপরাধ তাঁরা করবেন কেন?

এ বিষয়ে ডিএমপির মুখপাত্র ও উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে মোবাইল ফোন পেলে অবশ্যই জব্দ করা হয়। সেটা না করার কোনো কারণ নেই। নিয়মনীতি মেনে পুলিশ তা জব্দ করে আদালতে উপস্থাপন করে থাকে। প্রয়োজন পড়লে তদন্তের স্বার্থে তথ্য যাচাই-বাছাই করে থাকে।

এদিকে আদালত থেকে এমন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এমনকি বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর তার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও অবহিত করেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক (ডিডি) মোহা. জিললুর রহমান বলেন, ‘আসামির কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা জব্দ দেখানোর নির্দেশনাসহ একটি চিঠি তাঁদের কাছে এসেছে। তবে চিঠি পাওয়ার আগে থেকেই রাজশাহী গোয়েন্দা আসামিদের থেকে জব্দ মোবাইল ফোন আদালতে জমা দেয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত