Ajker Patrika

৭ বাসে আগ্রহ কমছে যাত্রীদের

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫১
Thumbnail image

পাহাড়ের সড়কগুলোতে চলাচল করছে ফিটনেসহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস। যাত্রীসেবার মান খুব খারাপ। এ কারণে বাসে আগ্রহ কমছে যাত্রীদের। তাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা নিজস্ব বাহনে নানা গন্তব্যে যাচ্ছেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, পাহাড়ের সড়কগুলোতে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বাস মালিক সমিতির নেতারাও বলছেন, পাহাড়ে চলাচল করা অধিকাংশ বাসের ফিটনেস নেই। বিআরটিসির কর্মকর্তারাও বলছেন, অধিকাংশ বাসের ফিটনেস নেই। তা স্বীকার করছেন বাসচালকেরা।

রাঙামাটি-বান্দরবান-খাগড়াছড়ি সড়কের বাসচালক বাবুল মারমা (৪৫) বলেন, ‘আমরা যে বাস চালাচ্ছি, এগুলোর অধিকাংশের ফিটনেস নেই। এই অবস্থা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হবে। কারণ, সড়কের যে অবস্থা, এতে ভালো গাড়ি নামানোর সাহস করেন না মালিকেরা। ভালো গাড়ি রাস্তায় নামাতে হলে সড়কের অবস্থা ভালো হওয়া দরকার। কিন্তু সে অবস্থা নেই পাহাড়ি সড়কগুলোতে। সড়কে দুটি গাড়ি সাইড দিতে পারে না। ফলে যেসব পুরোনো গাড়ি আছে, এগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এ নিয়ে যাত্রীরা সন্তুষ্ট নন। ফলে তাঁরা বাস ছেড়ে অন্য পরিবহনের দিকে ঝুঁকছেন।’

বাসচালকের সহকারী শিমুল দে বলেন, ‘যাত্রীরা আমাদের বাসে বাধ্য হয়ে ওঠেন। আমি মনে করি ৮০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। আমরা লোকসানে গাড়ি চালাচ্ছি। অনেক সময় গাড়ির তেলের খরচও ওঠে না। ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এ মালিক সমিতি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফিটনেসবিহীন বাসে যাত্রী উঠতে বাধ্য করত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু বাসগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে বাসগুলো।

খাগড়াছড়ির বাসিন্দা জয় ত্রিপুরা বলেন, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে শান্তি নামে বিরতিহীন বাস সার্ভিস চলে। কিন্তু এ পরিবহনের বাসের সিটগুলোতে বসার মতো পরিবেশ নেই। ময়লায় ভরা সিট। অনেক সময় মানুষ বাধ্য হয়ে এসব বাসে ওঠে। তবে বাসগুলোতে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করা যায় না।

সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাহাড়ে যেসব বাসে যাত্রী সেবা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো খুব নিম্নমানের। আরও ভালো গাড়ি নামানো প্রয়োজন। কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে একই গাড়ি সড়কে চলছে। পথে এসব গাড়ি প্রায়ই বিকল হচ্ছে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।’

রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সদস্য মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পাহাড়ে সড়কপথে যাত্রীসেবায় ভালো গাড়ি নামাতে চায়। কিন্তু এখানে বাধা সৃষ্টি করছে চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি।

ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. সৈয়দ হোসেন বলেন, পাহাড়ে নতুন গাড়ি চালানো হলে গাড়ি কেনার টাকা ওঠাতে সময় লাগবে।’

বিআরটিসি রাঙামাটি অফিসের তথ্যমতে, তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম সংযোগ সড়কে চলাচল করা অধিকাংশ বাসের ফিটনেস ঠিক নেই। কিন্তু এসব বাসের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের কোনো ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ আছে, পুলিশ রহস্যজনকভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চেক করে না। ফলে নির্বিঘ্নে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে সড়কে।

পার্বত্য অঞ্চলের দায়িত্বরত বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস চলে, এটি সঠিক। তবে এ ধরনের ঠিক কতটি গাড়ি আছে, তা আমাদের কাছে তথ্য নেই। তবে আমাদের কাছে গাড়ির যে তালিকা আছে, তার সংখ্যা এত বেশি নয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা গাড়ি পাহাড়ি চড়কগুলোতে চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত