Ajker Patrika

প্রকল্প ৩৩ লাখের, সাইনবোর্ডে ১৭

কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১৩: ১৩
Thumbnail image

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খাল এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষখালী খাল পুনর্খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। খাল দুটি খননে পৃথকভাবে ৩৩ লাখ করে মোট ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের সাইনবোর্ডে ১৭ লাখ টাকা করে দেখানো হয়। খাল দুটি খননকাজের দায়িত্বে আছে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।

জানা গেছে, মৎস্য অধিদপ্তর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তরের এলসিএসের আওতায় ৬৬ লাখ টাকায় দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খাল পুনর্খননের জন্য দুটি অংশে ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের সাইনবোর্ডে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সাইনবোর্ডে প্রকল্পের শ্রমিকদের দলনেতা আবদুল আজিজের নাম লেখা থাকলেও তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।

অনুরূপভাবে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষখালী খাল দুটি অংশে ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্প সাইনবোর্ডে ১৭ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সাইনবোর্ডে দলনেতা আবু সাঈদ সরদারের নাম লিখে প্রকল্প উদ্বোধন করার পরপরই সাইন বোর্ড আর খুঁজে পাননি এলাকাবাসী।

নামমাত্র খনন করে অপকর্ম ঢাকতে দ্রুত খাল দুটিতে পানি ছেড়ে দেয়। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এবং খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আবদুল মান্নান ঘটনাস্থলে এসে মাপ জরিপ করলে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। তখন জনগণের চাপে পড়ে খাল ঠিকমতো কেটে দেবে বলে সরে গেলেও আজ পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি বলে স্থানীয়রা জানান।

গত বুধবার তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খালে গেলে স্থানীয়রা জানান, ৫ হাজার 8 শত ফুট করে লম্বা দুটি খালের ৫০ ফুট চওড়া এবং ২৯ ফুট তলা ও ৬ ফুট গভীরতা করে খাল খননের কথা থাকলেও কোনো মাপ জরিপ ছাড়া দায়সারাভাবে খাল কাটা হয়।

এ ছাড়া গত ৭ মার্চ কাজ শুরু করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও খাল দুটি এক মাসের মধ্যে কাটা শেষ করে ফেলে। প্রতিটি খাল খননে ২০ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা করে মোট ৩০ জন শ্রমিক দেখানো হলেও বাস্তবে তার খোঁজ মেলেনি।

প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা এবং শিডিউলের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান এবং কোনো শিডিউল বা বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ জানাতে অনিচ্ছুক বলে জানান।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করুন।’

মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামবাসী প্রতিবাদের মুখে খাল পুনর্খননের কথা বলে এসেছিলাম। এখনো দেয়নি? বিষয়টি আমি দেখছি।’

প্রকল্প দুটির সাইনবোর্ডে শ্রমিকদের দলনেতা হিসেবে তারালী ইউনিয়নের আবদুল আজিজ এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের আবু সায়ীদ সরদারের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আর তাঁরা কিছু জানেন না বলেও জানান।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ শ্রীপুর পরিষদের চেয়ারম্যান গোবিন্দ মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের কথা বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

এ প্রসঙ্গে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, খাল খননের বিষয়টি মৎস্য অফিসের। যদি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটে, তাহলে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত