Ajker Patrika

পুষ্টিহীনতার শঙ্কায় মধ্যবিত্তরা

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ০৮
পুষ্টিহীনতার শঙ্কায় মধ্যবিত্তরা

পুষ্টিহীনতার শঙ্কায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা চাহিদা মতো পণ্য কিনতে না পারায় এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, পণ্যের দাম বাড়লেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আয় বাড়েনি। যে কারণে তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। অল্প আয়ের মানুষ চাহিদা মতো পণ্য কিনতে পারছেন না।

দেশের অন্যান্য এলাকার মতো জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাদের দাবি, তেল, গ্যাস, চাল, ডাল, মাছ, মাংস, পেঁয়াজসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে।

তাই তারা চাহিদা অনুযায়ী খাবার কিনতে পারছেন না। চিকিৎসকেরা বলছেন, খাবার মানে তারতম্যের কারণে পুষ্টিহীনতা পেয়ে বসতে পারে নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে। ফলে শরীরে অপুষ্টি দেখা দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। এ জন্য করোনাসহ নানা ধরনের রোগের সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, গত দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অনেককেই বাধ্য হয়ে ছোট করতে হচ্ছে নিত্য খাদ্যপণ্য কেনার তালিকা।

শুধু মাছ, মাংস, সবজি বা ভোজ্যতেলের দামই বাড়েনি। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাসের দাম। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গ্যাসের দাম। গত দেড় মাসের ব্যবধানে ১ হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৩ টাকা।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি গাজর ১০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকায়। টমেটো ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। প্রতিটি লাউ ৩০ থেকে বেড়ে ৫০, বেগুন কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৯০, পটল ৩০ থেকে ৪০, কাঁচামরিচ ৯০ থেকে ১২০, শসা ৩০ থেকে ৫০, ওল কপি ৪০ থেকে ৬০, আলু ১৮ থেকে ২৫, বরবটি ৬০ থেকে ৮০, প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। পাম ওয়েল ১৪৪, সরিষার তেল ২০০ টাকায়।

মাছের দামও বেড়েছে অনেক। টাকি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা। দেশি শিং ৬০০ থেকে ৭০০, চাষের শিং ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি পাবদা ৬০০ থেকে ১০০০, চাষের পাবদা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, জাপানি পুঁটি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি পুঁটি ২০০ থেকে ৪০০, শোল ৬০০ থেকে ৬৫০, ট্যাংরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বাইন ৫০০ থেকে ৬০০, রুই ২০০ থেকে ২৫০, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০, গ্রাস কার্প ১৭০ থেকে ২২০, তেলাপিয়া ৮০ থেকে ১২০, পাঙাশ ৮০ থেকে ১০০ ও কই মাছ ১২০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়।

পোলট্রি মুরগি প্রতিকেজি ১১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৩০ থেকে ৩০০, দেশি (ক্রস) ২৮০ থেকে ৩২০, দেশি ৩৫০ থেকে ৪৫০, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫৫০, খাসি ৭০০ থেকে ৮০০।

উপজেলার পোড়ারচর বাজারের মুদি দোকানি আলমাছ আলী বলেন, পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে সবজি কিনে মাছ কেনার টাকাই থাকছে না। সেখানে অন্য কিছুর মাংসতো আমাদের কপালেই জোটে না।’

অটোরিকশা চালক সামছুল বলেন, ‘কোরবানি ঈদে গরুর মাংস খেয়েছিলাম। পরিবারের লোক মাংস খেতে চাইলে মাঝে মাঝে পোলট্রি কিনে খাওয়াতাম। সেই পোলট্রি মুরগির কেজিতে প্রায় ৭০ টাকা বেড়েছে। এখন পোলট্রির মুরগিও কিনতে পারি না।’ পৌর শহরে বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু করোনায় যে বেতন কমেছে, তা আর বাড়েনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার থেকে ২২ শ গ্রাম ক্যালরি প্রয়োজন। নারীর ক্ষেত্রে ক্যালরি দরকার ১ হাজার ৬০০ গ্রাম ক্যালরি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এ এম আবু তাহের বলেন, ‘যথাযথ ক্যালরি গ্রহণ না করা হলে নানা রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধবে। আর দীর্ঘ সময় ধরে যদি নিত্যপণ্যের মূল এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সুস্থ জাতি পাওয়া কঠিন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত