Ajker Patrika

শ্রমের হাটে অভাবী মানুষ

আকাশ আহমেদ, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ১৮
শ্রমের হাটে অভাবী মানুষ

নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা রহমত খাঁ (৬৫)। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে তাঁর বসতবাড়ি। কোনো আয়রোজগার নেই। তাই পরিবারের সদস্যদের আত্মীয়ের বাসায় রেখে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বৃহত্তম বাজার রোয়াজার হাটে।

অভাবের তাড়নায় রহমত খাঁ যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানান। গত শুক্রবার চন্দ্রঘোনার আদুরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজের সঙ্গে কাজের জন্য তাঁর চুক্তি হয়। প্রতিদিন ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত শুক্রবার রহমত খাঁর মতো কাজের সন্ধানে রোয়াজার হাটে শত শত শ্রমিকের সমাগম। দেখে মনে হচ্ছিল যেন মানুষের জটলা। তাঁদের কাঁধে বা পাশে ছিল কাপড়-চোপড়ের ব্যাগ।

জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজার হাটে সোম ও শুক্রবার এবং পোমরা ইউনিয়নের শান্তির হাটে শনি ও মঙ্গলবার শ্রম বেচতে অভাবী মানুষেরা জড়ো হন। টাকার বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করেন তাঁরা। দরদাম করে কাজের জন্য তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান কৃষকেরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে বসে এই শ্রম বিক্রির হাট। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে হাট।

সিলেটের আহমদ মিয়া (৬০) এসেছেন রোয়াজার হাটে শ্রম বিক্রির জন্য। অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন। এখন ছেলেরা বিয়ে করে নিজেদের মতো আলাদা সংসার করছেন। তাঁর মাত্র ৪ শতক জমি আছে। স্ত্রী অসুস্থ।

আহমদ মিয়া জানান, চাচাতো ভাইয়ের কাছেই এই হাটের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। নিজেদের জন্য খাবার জোগাড় করতে কাজের সন্ধানে তিনি এসেছেন এই হাটে। তাঁর সঙ্গেই প্রথমবার এই হাটে এসেছেন আরও ছয়-সাতজন।

রংপুর থেকে আসা আবদুল মতিন বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার মানুষ তুলনামূলকভাবে ভালো এবং আন্তরিক। আমরা এখানে দল বেঁধে এসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি।’

বরিশালের আরেক শ্রমিক রাসেদ মিয়া বলেন, মহাজনরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তাঁদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। মজুরির সঙ্গে তিন বেলা খাবার দেন। অনেক বাড়ির লোকজন নিজেরা যা খায়, তাঁদেরও তাই খেতে দেন। অনেকে আবার আলাদা করে রান্না করে দেন।

রাসেদ মিয়ার সঙ্গে থাকা আবদুল মালেক বলেন, ‘ভাই, আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। এই সময়টা আমাদের এলাকায় কাজ থাকে না। তাই বাড়িতে অলস বসে না থেকে সংসার চালাতে পরিবার ছেড়ে এখানে চলে আসি। কাজ শেষে যে মজুরি যা পাই, পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিই।’

হাটে শ্রম কিনতে আসা রাজানগর ইউনিয়নের আবদুল গফুর বলেন, ধান কাটার জন্য তিনি শ্রমিক নিতে এসেছেন। এই হাটে দরদাম করে দেখেশুনে শ্রমিক নেওয়া যায়।

বেতাগী ইউনিয়নের তিনচৌদিয়া গ্রাম থেকে আবদুল কাদের এসেছেন ধান কাটার শ্রমিক নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই বৃদ্ধ ও রোগাক্রান্ত। তাঁরা চাহিদামতো কাজ করতে পারেন না। আবার মজুরিও বেশি। আবার রয়েছে দলভিত্তিক কাজ করার শর্ত।

কয়েকজন শ্রমিক বলেন, শ্রমবাজারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় তাঁরা রোয়াজার হাট ও শান্তির হাটে কাপ্তাই সড়কের পাশেই ভিড় জমান। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বকাঝকাও শুনতে হয়। এ ছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাঁরা বলেন, স্থানীয় প্রশাসন যদি হাটের জন্য নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে ভালো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস বলেন, সড়কের পাশে শ্রমের হাট একটু ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ও নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মহুয়াকে বিয়ে করলেন পিনাকী

পালানোর গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন আবদুল হামিদ

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

এআই যুগে চাকরি পেতে যে দক্ষতা লাগবেই, জানালেন মাইক্রোসফটের সিইও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত