Ajker Patrika

পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৫
পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি

প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাস-সহিংসতা চলার পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়েছিল চুক্তিতে। আশা করা হয়েছিল, পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই যুগ পরে এখন মনে হচ্ছে, ব্যাপক সংঘর্ষ কমলেও প্রত্যাশিত শান্তি সেখানে আসেনি। সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে মতভিন্নতার কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটছে না বলে কেউ কেউ মনে করেন। গোপন সশস্ত্র গ্রুপ এখনো পার্বত্যাঞ্চলে সক্রিয় আছে। এসব গোপন সশস্ত্র তৎপরতাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বলে মনে করা হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অরণ্যে অবস্থানকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাস, সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও শান্তি বিনষ্টকারী অপতৎপরতা সম্পর্কে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গত এক বছরে তিন পার্বত্য জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন।

একাধিক সূত্রের মতে, রাজনৈতিক সংযোগ ব্যবহার করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা লুট, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতিগত-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টেরও চেষ্টা করছে। সন্ত্রাসীরা চলমান শান্তির প্রতি হুমকি ছাড়াও চাঁদাবাজি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে।

২ ফেব্রুয়ারি রাতে বান্দরবানের রুমায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে সেনাবাহিনীর টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন সৈনিক ফিরোজ। এ সময় সেনাবাহিনীর পাল্টা গুলিতে মারা যায় তিন সন্ত্রাসী। এ অবস্থায় পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনীর অভিযান আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহুমুখী ও জটিল সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করার ওপর সব সময়ই বেশি জোর দেওয়া হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছিল। কিন্তু চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিয়ে মতভিন্নতার সুযোগে সেখানে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করা হয়। পার্বত্যবাসীর ভূমি সমস্যার সমাধান হলে, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে সমস্যা কমবে। পাহাড়ে এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব বেশি। তবু অস্থির পাহাড়। এই জটিল সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে মেটাতে হবে। চুক্তিতে উল্লিখিত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির জায়গায় যে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, আঞ্চলিক পরিষদকে শক্তিশালী করা, অভ্যন্তরীণ ভোটার লিস্ট ঠিক করা, শরণার্থী, ভূমি সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সরকারের যদি কোনো দূরত্ব তৈরি হয়ে থাকে, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমি কমিশন হয়েছে, আইনেও বেশ পরিবর্তন হয়েছে, যা ইতিবাচক; তা সত্ত্বেও চুক্তির বেশ কিছু জায়গায় এখনো অনেক প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত