Ajker Patrika

শামুক নিধনের উৎসব হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
শামুক নিধনের উৎসব হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

চলনবিল-অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে বর্ষার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। তাই বিলপারের মানুষ মাছ ধরার পাশাপাশি বিলগুলোর বিভিন্ন অংশে জাল দিয়ে অবাধে নিধন করছে ছোট-বড় শামুক, আর এসব শামুক ব্যবহার করা হচ্ছে হাঁস ও মাছের খাদ্য হিসেবে। অন্যদিকে প্রতিদিন শামুক নিধন হওয়ার ফলে হুমকিতে পড়েছে বিভিন্ন বিলের জীববৈচিত্র্য। এতে বিলের বিস্তীর্ণ ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলার বিভিন্ন বিলে চলতি বছরে অন্যান্য বছরের মতো প্রায় দুই মাস ধরে অবাধে শামুক নিধন চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, বিলপারের খেটে খাওয়া লোকজন বাড়তি উপার্জনের আশায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে এই শামুক সংগ্রহ করেন। বিলের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে, ডুবে থাকা ফসলি জমি থেকে মই জাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন তাঁরা। সংগ্রহ করা শামুক নৌকায় করে বিক্রির জন্য উপজেলার দীঘিসগুনা বাজার, হামকুড়িয়া বাজার, মান্নাননগর চৌরাস্তা বাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শামুক ব্যবসায়ী পাইকারেরা কিনে বস্তা ভর্তি করে বিলের বিভিন্ন হাঁসের খামার, মাছ চাষ করা পুকুরে বিক্রির জন্য নিয়ে যান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয়রা বিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০-৩৫টি নৌকায় করে শামুক নিয়ে আসেন দীঘিসগুনা সড়কে। তারপর শামুক বস্তায় ভর্তি করে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করছেন তাঁরা। আর ওই শামুকভর্তি বস্তা অটোভ্যান, নছিমনসহ বিভিন্ন যানবাহনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন হাঁসের খামারে।

এ যেন শামুকের হাট।

শামুক সংগ্রহকারী তাড়াশের বিলনাদো গ্রামের আব্দুর রহমান প্রামাণিক (৪৫) বলেন, ‘বর্ষায় বিলগুলোতে মানুষের কাজকর্ম তেমনটা থাকে না। তাই আমরা নৌকায় করে মই জাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করি। সংগ্রহ করা শামুক ব্যাপারীদের কাছে প্রতি বস্তা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।’

শামুক ব্যাপারী উপজেলার কামারশোন গ্রামের মো. রিন্টু হোসেন জানান, প্রতি বস্তা শামুক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে কিনে এলাকার বিভিন্ন হাঁসের খামার ও মাছ চাষ করা পুকুরের মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন দীঘিসগুনা শামুক বিক্রির আড়ত থেকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে। তাঁরা এখান থেকে ভ্যান ও পিকআপে করে শামুকগুলো নিয়ে যান।

উপজেলার সেরাজপুর গ্রামের হাঁসের খামারি মো. আব্দুল জলিল বলেন, এই মৌসুমে প্রতিবছর বিল এলাকা থেকে হাঁসের খাবারের জন্য শামুক কিনে আনা হয়। শামুক হাঁসের জন্য খুবই পুষ্টিকর খাদ্য।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই শামুকগুলো বেশির ভাগ মারা যাওয়ায় কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে; কিন্তু শামুক নিধন প্রতিরোধে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তারপরও পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিষয়টি দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত