Ajker Patrika

খন্ডলের সুস্বাদু রসগোল্লা

আবু ইউসুফ মিন্টু, পরশুরাম (ফেনী) 
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২২, ১১: ২৬
Thumbnail image

ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ছোট্ট এক বাজারের নাম খন্ডলহাই। ১৯৭১ সালের দিকে কাজের সন্ধানে এ বাজারে আসেন কুমিল্লার যুগল চন্দ্র দাস। স্থানীয়ভাবে যিনি যোগল নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি বানাতে পারতেন তিনি। শুরুতে খন্ডলহাই বাজারে কবির আহাম্মদের খাবারের দোকানে কাজ নেন যুগল। তখন সেই দোকানে মূলত নাশতা বিক্রি হতো। একপর্যায়ে বাড়তি উপার্জনের আশায় যুগল মিষ্টি তৈরিতে আগ্রহ দেখান। অল্প দিনেই নিজের বানানো মিষ্টি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তিনি খন্ডল বাজারের নামে মিষ্টির নামকরণ করেন।

বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য রেজাউল করিমসহ স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, যুগলের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন কবির আহাম্মদ পাটোয়ারী। মূলত তাঁর হাত ধরে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে খন্ডলের এই সুস্বাদু মিষ্টির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এরপর এর সুনাম আরও বিস্তৃত হয়। বছর দুয়েক আগে মারা যান কবির আহাম্মদ। বর্তমানে তাঁর দুই ছেলে বেলাল আহাম্মদ ও আমির হোসেন ধরে রেখেছেন খন্ডলের মিষ্টির ঐতিহ্য। আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে যুগল চন্দ্র দাস কাজ ছেড়ে দিয়ে স্থায়ীভাবে চলে গেছেন পার্শ্ববর্তী ফুলগাজীতে।

মূলত গরুর দুধের ছানা থেকে তৈরি খন্ডলের মিষ্টি একধরনের রসগোল্লা। খাঁটি দুধ থেকে ছানা তৈরি হয় বলে এ মিষ্টি এখনো সুস্বাদু। ইতিমধ্যে ফেনীর পরশুরামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৈরি হওয়া এই মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে গেছে সৌদি, দুবাই, কানাডা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এ অঞ্চলের প্রবাসীরা দেশে এলে ফেরার সময় খন্ডলের মিষ্টি নিয়েই ফেরেন।

‘খন্ডলের আসল মিষ্টি’, ‘খন্ডলের এক নম্বর মিষ্টি’সহ পরশুরাম উপজেলায় এখন প্রায় ২৫টি মিষ্টির দোকান গড়ে উঠেছে। তবে খন্ডলহাই বাজারে এখনো কবির আহাম্মদ পাটোয়ারীর ‘খন্ডলের পাটোয়ারী মিষ্টি মেলা’ এবং দেলোয়ার হোসেনের ‘খন্ডলের আসল মিষ্টি মেলা’ নামের দোকান দুটিই মূল দোকান হিসেবে পরিচিত।

খন্ডলের রসগোল্লার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেওসম্প্রতি খন্ডলের পাটোয়ারী মিষ্টি মেলা নামের দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে কলসি, প্লাস্টিকের ড্রাম ও বোতলে করে গরুর দুধ আসছে সেখানে। দোকানটির মালিক বেলাল হোসেন জানান, তাঁরা প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি পাক দেন। প্রতি পাকে প্রয়োজন হয় ১৭ কেজি গরুর দুধ, চিনি ৬ থেকে ৭ কেজি, ময়দা এক শ গ্রাম। প্রতি পাকে ১৪ থেকে ১৫ কেজি মিষ্টি তৈরি হয়।

মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া
সংগৃহীত কাঁচা দুধ পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে চুলায় গরম করে ঠান্ডা করা হয়। তারপর তাতে টক পানি দিয়ে বানানো হয় ছানা।

স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি বিখ্যাত মিষ্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম খন্ডলের রসগোল্লা। ব্যবসায়ীরা এ মিষ্টির সুনাম ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এরপর পানি ঝরিয়ে সেই ছানায় পরিমাণমতো ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। মিষ্টির মণ্ড যেন ভেঙে না যায়, সে জন্য ময়দা দেওয়া হয়। এরপর সেই মণ্ড থেকে পরিমাণমতো ছানা নিয়ে ছোট ছোট গোল্লা বানানো হয়। গরম শিরায় গোল্লাগুলো ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় রসগোল্লা। ৬ লিটার পানির সঙ্গে ৫ কেজি চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে শিরা তৈরি করা হয়।

খন্ডলের মিষ্টির উদ্ভাবক যুগল চন্দ্র দাস বলেন, ‘এই মিষ্টির প্রধান ও একমাত্র উপকরণ হলো, গরুর খাঁটি দুধের ছানা। এখানে গোপন ফর্মুলা নেই।’ ভীষণ চাহিদা সত্ত্বেও প্রতিদিন ১৫০ কেজির বেশি মিষ্টি তৈরি করেন না মোহাম্মদ বেলাল। তাতে মিষ্টির গুণমান কমে যায় বলে ধারণা তাঁর।

দরদাম
প্রতি কেজি খন্ডলের রসগোল্লা বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত