Ajker Patrika

নোনাপানি তোলায় ৯ বিলের মাছ ও ফসলের ক্ষতি

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১১: ৫৭
Thumbnail image

শাকসবজি ও মাছের জন্য খ্যাত খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৫ নম্বর পোল্ডারে হঠাৎ নোনাপানিতে ৯ বিল প্লাবিত হয়েছে। স্লুইসগেটের কপাট খুলে নোনা পানি তোলায় এক রাতেই এর প্রভাবে লাখ লাখ টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নোনা পানি তোলা বন্ধ করায় আরও বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া গেল।

জানা গেছে, উপজেলার খর্নিয়ার যুবক আবু হানিফ মোড়লের নেতৃত্বে রোববার রাতে ‘খর্ণিয়া স্লুইসগেটের’ কপাট খুলে নোনা পানি তুলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতেই উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নোনা পানি তোলা বন্ধ করা হয়। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার আওতায় রয়েছে ২৫ নম্বর পোল্ডার। ওই পোল্ডারের আওতায় ডোংরার বিল, গোনালী, বামুন্দিয়া, পাঁচপোতা, পাচুড়িয়া, ভদ্রাদিয়া, খর্ণিয়া, আংগারদহা ও জোয়ারের ডাঙ্গা নয়টি বিলে আড়াই হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে।

ওই রাতে স্লুইসগেট দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে খাল ও তার শাখা খালসহ নোনা পানিতে ওই সব খালের সংলগ্ন মাছের ঘের ও ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়। ওই সব জমিতে এখন মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছের চাষ হচ্ছে। তা ছাড়া রয়েছে একাধিক কৃষকের চলতি আউশ ধানের বীজতলা। বিলজুড়ে শোভা পাচ্ছে, পাট খেত, বেগুন, পটোল, চিচিঙ্গা, ওল, লাল ও পালং শাক, বরবটিসহ নানা সবজি।

এরই মধ্যে এলাকার কতিপয় নোনা পানির বাগদা চিংড়িচাষিদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে খর্নিয়ার স্থানীয় যুবক ও ওই এলাকার ‘পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির’ সভাপতি ও১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া জোন) আবু হানিফ মোড়ল স্লুইচ গেট দিয়ে নোনা পানি তুলে এলাকার ফসলি জমিসহ সব মাছের ঘের তলিয়ে দেয়। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

খর্ণিয়া গ্রামের মাছ চাষি নাজমুল হোসেন মোড়ল বলেন, স্লুইসগেটের খাল সংলগ্ন তার চার বিঘা জমিতে এবার গলদা ও সাদা জাতীয় মাছের চাষ করেছিলেন। রাতে স্লুইসগেট দিয়ে পানি তোলায় পানির তোড়ে ঘেরের বেড়ি বাঁধ ভেঙে সব মাছ চলে যায়। তাতে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একই এলাকার কৃষক নুরুজ্জামান শেখ বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি আউশ ধান চাষের জন্য দুই কাঠা জমিতে ধানের বীজতলা প্রস্তুত করেছিলেন। চারাগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছিল এমন অবস্থায় তা নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি পোষাতে নতুন করে অন্য স্থানে আউশের বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে। এমন অভিযোগ এলাকার শত শত মাছ ও সবজি চাষির। খর্ণিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য মো. শরিফ মোড়ল বলেন, যারা ওই পোল্ডার এলাকায় নোনা পানির বাগদা চিংড়ির চাষ করেন, তাদের সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে আবু হানিফ মোড়লসহ কয়েকজন মিলে তারা স্লুইচগেট দিয়ে নোনা পানি তুলেছে। আমি তাকে মানা করেছিলাম কিন্তু আমার কথা হানিফ শোনেনি।

স্থানীয় দরিদ্র আব্দুল খালেক মোড়ল জানান, ‘আমি ৩০০ টাকার বিনিময়ে হানিফ মোড়লের সঙ্গে ছিলাম এবং রাতেই স্লুইসগেট দিয়ে নোনা পানি তুলেছি। অভিযুক্ত হানিফ মোড়ল বলেন, নোনা পানির বাগদা চিংড়ি চাষিদের সঙ্গে আমার কোন গোপন চুক্তি ছিল না। স্লুইসগেটের খালে কচুরিপনা ও বিভিন্ন ঘাস ধ্বংস করতে নোনা পানি তোলা হয়েছে। এতে প্রয়োজনের তুলনায় পানি একটু বেশি উঠে গেছে। এ কারণে এলাকার কৃষক ও মাছচাষিদের একটু ক্ষতি হয়েছে।’

খর্নিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দেদার বলেন, ডুমুরিয়ায় কোনো বৃষ্টির দেখা নেই। এরই মধ্যে স্লুইসগেট দিয়ে নোনা পানি তোলার কারণে ওই নোনা পানি মাছের ঘের ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করেছে। যদিও পানি নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো উপকার হবে না। বরং নোনা পানির প্রভাবে মাছের ঘের, সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুনুর রশিদ বলেন, খর্নিয়ার আবু হানিফ নামের এক লোক পাউবোর স্লুইসগেট দিয়ে নোনা পানি তুলেছে। এলাকায় মাছের ঘেরসহ অনেক ফসলের ক্ষতি করেছে। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরশাফুল আলম বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত