Ajker Patrika

গ্যাস মেলে না তবুও বিল

অরূপ রায়, সাভার থেকে
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ৩৩
Thumbnail image

তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে সাভার পৌর এলাকার কাজিমুকমাপাড়ার সুশীল দাসের বাড়িতে। তবে লাইনে গ্যাস না থাকায় এক বছর ধরে লাকড়ি দিয়ে মাটির চুলায় রান্না করছেন তাঁর স্ত্রী সুচিত্রা দাস। গ্যাসের চুলায় রান্না না করলেও প্রতি মাসে তাঁকে গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এ সমস্যা শুধু সুশীল দাসের নয়, পৌর মেয়রসহ কাজিমুকমাপাড়া ও আশপাশের এলাকার তিন শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার কাজিমুকমাপাড়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তিতাস গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যায়। তবে এসব বাড়িতে তিতাস গ্যাসের কোনো চুলা জ্বলতে দেখা যায়নি। রান্নার কাজ চলছিল মাটির চুলা অথবা সিলিন্ডার গ্যাসে। গ্যাসের সংযোগ থাকার পরও গ্যাস না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সুশীল দাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি তিতাস গ্যাস ব্যবহার করে আসছেন। বছরখানেক আগে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এক বছর ধরে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁদের মাটির চুলা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এর পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ভয়ে তিনি নিয়মিত বিল পরিশোধ করে যাচ্ছেন।

কাজিমুকমাপাড়ার এ/১৭ নম্বর বাড়ির মালিক সাগর সাহা। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি তিতাস গ্যাস ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু সাত মাস ধরে তাঁর বাড়িতে আর তিতাসের গ্যাসে চুলা জ্বলে না।

সাগর সাহার স্ত্রী রুমা সাহা বলেন, এক বছর আগে তাঁর বাড়ির তিতাসের লাইনে গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। সাত মাস ধরে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকেই তিনি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।

একই এলাকার চারতলা বাড়ির মালিক নবদ্বীপ সাহা বলেন, তাঁর বাড়ির তিনটি ফ্ল্যাটে তিতাসের সংযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গ্যাস ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু এক বছর ধরে তাঁর একটি ফ্ল্যাটেও তিতাসের গ্যাস দিয়ে রান্না করতে পারছেন না। মাসদেড়েক আগে তিতাসের টেকনিশিয়ান এনে তিনি চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাইনে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

পাশের বাড়ির আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘নিয়মিত বিল দিচ্ছি, কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না। এভাবে আমাদের আর কত গচ্চা দিতে হবে জানতে চাইলে তিতাস কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয় না।’

একই এলাকার বি-৫/১ নম্বর বাসার মালিক অর্চনা বিশ্বাস বলেন, ‘একদিকে আমরা গ্যাসের বিল দিচ্ছি। অন্যদিকে সিলিন্ডার গ্যাস কিনছি। এভাবে আমাদের দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।’

গ্যাসের সরবরাহ চালু না করা পর্যন্ত বিল আদায় বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার ভুক্তভোগী সালমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘গ্যাস না দিয়ে বিল নেবে এটা অন্যায়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের আইনি লড়াইয়ে নামা দরকার।’

পাশের এমএস টাওয়ারের বাসিন্দা শিব শঙ্কর সাহা বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে এখানকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঝুঁকি জেনেও আমাদের সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

এমএস টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি কয়েক মাস আগে তিতাস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর পরও তিতাসের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গনির বাড়ি কাজিমুকমাপাড়ার পাশের এলাকা ব্যাংক কলোনিতে। তাঁর বাড়িতেও পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ নেই।

মেয়র আব্দুল গনি বলেন, কয়েক মাস ধরে তাঁর বাড়িতে যে পরিমাণ গ্যাসের সরবরাহ থাকে, তাতে রান্না করা যায় না। রান্নার জন্য তাঁদের সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয়।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাভারের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, মূল লাইন থেকে কাজিমুকমাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় যে লাইন গেছে, তাতে গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা নেই। ময়লা-আবর্জনা জমে লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে ওই এলাকার গ্রাহকেরা গ্যাস ব্যবহার করতে পারছেন না।

আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম আরও বলেন, গ্রাহকদের সমস্যার কথা ভেবে ওই এলাকায় নতুন লাইন করার জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে নতুন লাইন করে দেওয়া হবে। নতুন লাইন হলে সমস্যা থাকবে না। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলবে তা বলা মুশকিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত