Ajker Patrika

নদের ১ কিমিতে ৩০ ইটভাটা

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৯
নদের ১ কিমিতে ৩০ ইটভাটা

একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেওয়া হয়। রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, নদী রক্ষা কমিশনকে তুরাগ নদসহ দেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হলো।

এর পর থেকে নদের এক কিলোমিটারে মধ্যে থাকা ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু তাতেও থেমে নেই ইটভাটা মালিকেরা। নানা কৌশলে তাঁরা ইটভাটা চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারের আশুলিয়া বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহ মান তুরাগ নদের এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৩০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়া আর বর্জ্যে তুরাগ নদ ভরাট ও দূষিত হয়ে আসছিল। নদ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে গত দুই বছরে এসব ভাটার অধিকাংশই বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু এক বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটার বেশ কয়েকটিতে আবার অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্য একটি ইটভাটার নাম আল আশরাফ ব্রিকস। তুরাগ নদের ১০০ গজের মধ্যে এটি অবস্থিত। গত বছর অভিযান চালিয়ে একই নামে (আল আশরাফ) পাশাপাশি থাকা দুইটি ভাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবার ওই দুই ইটভাটার একটিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

ইট পোড়ানোর অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে ভাটার ব্যবস্থাপক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘অভিযান চলবে, অভিযান চললে জরিমানা দিতে হবে এসব মেনে নিয়েই ইটভাটা চালু করেছি।’

আল আশরাফ ব্রিকসের পাশেই রাজু ব্রিকসের অবস্থান। তুরাগ নদ থেকে ভাটাটির দূরত্ব মাত্র ১০ গজ। গত দুই বছরে এই ইটভাটা বন্ধে চার বার অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর পরেও বন্ধ হয়নি ভাটাটি। এবারও সেখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজু ব্রিকস থেকে নানা বর্জ্য তুরাগ নদে গিয়ে পড়ছে। এসব বর্জ্যের কারণে নদ ভরাট হচ্ছে। পাশাপাশি পানিও দূষিত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে রাজু ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ডালিম বলেন, তাঁদের ইট পোড়ানোর অনুমতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তবে হাইকোর্টে রিট করে তাঁরা ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। এ কারণে তাঁরা ইটভাটা চালু রেখেছেন।

আদালতের স্থগিতাদেশে পরিচালিত হচ্ছে আশুলিয়া বাজার ও তুরাগ নদের তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটা সুরমা ব্রিকস।

ভাটাটির মূল ফটকে ব্যানারে লিখে রাখা হয়েছে, ‘সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, অত্র ইটভাটার ওপর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ১১৬৭৮ / ২০২১ দায়ের করিলে মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য স্ট্যাটাসকো (স্থিতাবস্থা) দেন, যা বলবৎ আছে।’

ইট পোড়ানো হচ্ছে তুরাগ নদের তীরে গড়ে ওঠা আশুলিয়া ও মেঘনা ব্রিকসে। এই দুই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।

মেঘনা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম বলেন, তুরাগ নদের তীরের কোনা ইটভাটাকে ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়েই সবাই অবৈধভাবেই ইটভাটা পরিচালনা করছেন।

তুরাগ নদের তীরে আশুলিয়ার নয়াপাড়া গ্রামের পাশে ইট পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করছে তুরাগ ব্রিকস। এই ভাটারও কোনো অনুমতি বা ছাড়পত্র নেই।

নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, গত বছর তুরাগ ব্রিকস বন্ধ ছিল। ভাটাটি বন্ধ থাকায় গ্রামের লোকজন স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু এ বছর ভাটাটি চালু করায় গ্রামের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আদালতের ছয় মাসের স্থগিতাদেশ থাকায় আশুলিয়ার কয়েকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আদালতের আদেশের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য অধিদপ্তরের আইন শাখাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অন্য সব ইটভাটার বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত