Ajker Patrika

অযত্ন-অবহেলায় ‘বই বাগান’

মো. নাজিম উদ্দিন ইমন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৪
অযত্ন-অবহেলায় ‘বই বাগান’

‘হলুদিয়া পাখি সোনার বরন, পাখিটি ছাড়িল কে?’, ‘নবী মোর পরশমণি, নবী মোর সোনার খনি’, ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লেজালালুহ’—এ রকম অসংখ্য বিখ্যাত গীতিকবিতার রচয়িতা মরমি কবি সিরাজুল ইসলাম।

১৯৩০ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশের প্রখ্যাত এই গুণী মানুষের জন্ম হয় কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা ইউনিয়নের গোকুলচর গ্রামে। ২০০২ সালের ৯ জুন নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলো এখনো রয়েছে মানুষের মুখে মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৪৮ সাল থেকে সংগীতচর্চা শুরু করেন কবি সিরাজুল ইসলাম। পরে ১৯৫৪ সালে তিনি রেডিওর গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হলে সেখানেও গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আধুনিক, দেশাত্মবোধক, মারফতি, মুর্শিদি, মরমিসহ তাঁর কয়েক শত গান বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের আর্কাইভে রয়েছে।

কবির লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পীরা। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। পরে নিজ উদ্যোগে নিজ বাড়িতে এলাকার মানুষের জ্ঞানচর্চার জন্য স্থাপন করেন একটি পাঠাগার, যার নাম ‘বই বাগান’। সিরাজুল ইসলামের লেখা বইয়ের সংখ্যা ১৯টি। কবির বই বাগানে তাঁর স্বরচিত বই ছাড়াও ছিল অসংখ্য দেশি-বিদেশি বই। কবি প্রতিনিয়তই বই বাগানের জন্য বই সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে চোখ অপারেশন করার ফলে প্রচণ্ড আর্থিক দুর্দশায় পড়ে যান তিনি। সে সময় কেউ কবির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তাই শেষ বয়সে আর্থিক দুর্দশায় পতিত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরে কবির প্রিয় বই বাগানের একটি কক্ষেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, অযত্নে-অবহেলায় তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে কবির শখের বই বাগান। বিভিন্ন কক্ষের জানালা ভাঙা। ভাঙা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, পাঠাগারের ভেতর কবির ব্যবহৃত আসবাব এদিক-সেদিক পড়ে রয়েছে। ধুলো আর জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে বুকশেলফগুলো। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কবির শখের বই।

কবি সিরাজুল ইসলামের পুত্রবধূ খালেদা আক্তার সিমা জানান, কবির পরিবারের কেউই সচ্ছল নয়। কবির স্ত্রী ও এক ছেলে মারা গেছেন। তাঁর স্বামী একটি ইলেকট্রিক দোকানে চাকরি করে সংসার চালান। তাঁদের পক্ষে কবির রেখে যাওয়া বই বাগান দেখাশোনা করা সম্ভব নয়।

সিমা বলেন, ‘আমরা যতটুকু পারি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। এ ছাড়া মাঝে একবার বই বাগানের রং করানো হয়েছিল। কবি জীবদ্দশায় মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। এখন সরকারের উচিত কবির ইতিহাস ও বইগুলো সংরক্ষণ করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমাদের স্থানীয় সাংসদ নসরুল হামিদ বই বাগান সংরক্ষণের ঘোষণা দেন। পরে করোনা চলে আসলে আর কোনো কাজ হয়নি।’

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে আমি খোঁজখবর নিয়ে কবির পাঠাগারটি রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করব।’

স্থানীয় সাংসদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের প্রখ্যাত মরমি কবি সিরাজুল ইসলাম একজন গুণী মানুষ। কেরানীগঞ্জের জিনজিরার বাসিন্দা এই কবি দেশের অনেক বিখ্যাত গীতিকবিতার রচয়িতা। কবির বসতবাড়িটির স্মৃতি সংরক্ষণ করতে আমরা তাঁর বাড়িটিতে ‘‘বই বাগান নির্মাণ প্রকল্প’’ হাতে নিয়েছি। এরই মধ্যে নতুন নকশার কাজ শেষ করেছি। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সবকিছু জমা দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত