Ajker Patrika

আসন যার হৃদয়ে

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ৫০
আসন যার হৃদয়ে

অগ্রজ কবি জীবনানন্দ দাশকে সামনে থেকে দেখার ইচ্ছে ছিল কবি আবুল হোসেনের। তিনি একবার তাঁর বন্ধু শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে জীবনানন্দের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন বিকেল কেবল শুরু হচ্ছে। জীবনানন্দ দাশ সম্ভবত তখন খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে তিনি নিজে এসে দরজা খুলে দিলেন এবং তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। ঘরটি সাদামাটা। দুটো সাধারণ কাঠের চেয়ারে বসলেন অতিথি দুজন। জীবনানন্দ বসলেন তাঁর খাটের ওপর।

ছোটখাটো কিছু কথাবার্তা চলল অনেকক্ষণ। তাতে উঠে এল বরিশালের কথা, জীবনানন্দের শিক্ষকতার কথা, খবরের কাগজের চাকরি, ছোট ছোট কাগজে লেখা, কলকাতার কথা ইত্যাদি। বন্ধুদের মধ্যে সঞ্জয় ভট্টাচার্য, বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ুন কবিরের বিষয়ে কথা বললেন তিনি। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, যেখানেই কাজ করেছেন না কেন, যে কাজই করেছেন না কেন, তাতে কোনো দিন স্বাচ্ছন্দ্য পাননি, স্বস্তিও পাননি।

শামসুর রাহমান গিয়েছিলেন নরেশ গুহকে নিয়ে সেই ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতেই। নিমগাছওয়ালা বাড়ি। জীবনানন্দ দাশ নরেশ গুহ আর শামসুর রাহমানকে দেখে খানিকটা বিব্রত হলেন। বারান্দার এপাশ-ওপাশ হাঁটলেন কিছুক্ষণ অনেকটা সমুদ্রবিহঙ্গ আলবাট্রসের মতো। বারান্দায় তিনি ইতি-উতি তাকালেন।

নরেশ গুহ আর শামসুর রাহমান বুঝে নিলেন বিষয়টি। বোঝা গেল, বসতে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত চেয়ার বা আসন এই বাড়িতে নেই। তাই কালবিলম্ব না করে চটজলদি তাঁরা বারান্দায় বসে পড়লেন। তাতে খুশি হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ বসলেন তাঁদের পাশে। এরপর শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘যার আসন আমাদের হৃদয়ে, তিনি আমাদের কোনো আসন দিতে পারলেন কি পারলেন না, তাতে কিছু আসে-যায় না।’ 

সূত্র: আমিন আল রশীদ, জীবনানন্দের মানচিত্র, পৃষ্ঠা ৯৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত